গত তিন বছরে এই উপজেলার চারটি ইউনিয়নের কয়েকশ পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে নদীগর্ভে। বর্তমানে সেখানে এক হাজারের মতো পরিবার হুমকির মুখে রয়েছেন। নদী তীর রক্ষায় পদক্ষেপ না নিলে এসব ঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন বাসিন্দারা।
নদী তীর রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে বৃহস্পতিবার সেখানকার লোকজন মাবনববন্ধন করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের ছাতিয়াগাতি, দিগনগর, খোলাবাড়িয়া, কাতলাসুর ও পগনবেগ – এই পাঁচ গ্রামে মধুমতি নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।
এছাড়া আশেপাশের বাজড়া, বাঁশতলা, দক্ষিণ চর নারানদিয়া, পশ্চিম চর নারাণদিয়া ও পাড়া গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী পাচুরিয়া, টগরবন্দ ও বানা ইউনিয়নেও মধুমতি নদীর ভাঙন চলছে। নদীর কবলে বিলীন হচ্ছে একের পর এক বসতভিটা, ফসলি জমি, স্কুল ঘর, মসজিদসহ নানা স্থাপনা।
আশ্রওয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা রুপালি বেগম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে তারা মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছিলাম। এখন এই আশ্রয় হারালে আবার পথে পথেই থাকতে হবে।”
নবীরন বেগম নামে সত্তরোর্ধ্ব এক নারী বলেন, “এই ঘর হারাইলি আমরা হাবিডুবি খাবানি। আমাগে গাঙডা ইট্টু বাইন্ধ্যা দ্যান।”
ছাতিয়াগাতি গ্রামের বিদেশফেরত প্রবাসী শাহ মো. মুকুল হোসেন মিয়া জানান, পৈত্রিক সূত্রে তাদের প্রায় ৩০ একরের মতো জমিজমা ছিল মধুমতির তীরে। এখন প্রায় সবই শেষ শুধু ভিটেটুকু বাদে।
ছাতিয়াগাতি গ্রামের প্রবাস ফেরত শাহ মো. মুকুল হোসেন মিয়া বলেন, বছরের পর বছর তার গ্রামে মধুমতি নদীর ভাঙন চলছে। তাদের প্রায় ৩০ একর জমি নদীতে চলে গেছে। এখন ভিটেটুকু রয়েছে। তাও ভাঙনের মুখে পড়েছে। বাপদাদার কবর ও মসজিদটাও নদীতে তলিয়ে যাবে যদি ভাঙনরোধ করা না যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, একটি পুরনো মসজিদ ছিল, যা নদীতে চলে যাওয়ার পরে নতুন স্থানে মসজিদ করা হয়। সেটিও ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া একবটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা ঝুঁকিতে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, মধুমতির ভাঙনে বাজড়া গ্রামের পুরনো একটি মসজিদ বিলীন হয়ে গেছে। পুরনো মসজিদটির পর নতুন স্থানে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল। সেটিও এখন ভাঙনের সম্মুখীন।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান এ. কে. এম. জাহিদুল ইসলাম বলেন, “এ সমস্যা নিয়ে বহুবার জেলার বিভিন্ন সভায় বলা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য মনজুর হোসেন বুলবুল এবং ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার একাধিকবার ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনও করে গেছেন। কিন্তু ভাঙনরোধে সমন্বিত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
“এভাবে ভাঙতে থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে আরও প্রায় হাজারখানেক পরিবারের ঘরবাড়ি নদীতে তলিয়ে যাবে। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে আশা করছি।”
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, “দুই থেকে তিন বছর হলো আমরা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। স্থানীয় জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভাতেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ওই এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ অন্যান্য ক্ষতি যাতে না হয় সেজন্য আবার পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে গুরুত্বের সঙ্গে জানাব।”