সমগ্র বাংলাদেশ

চিনিকলের গাদ থেকে সিএনজি উৎপাদনে রাজশাহীর তরুণ

Byবদরুল হাসান লিটন

তবে এখনও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অনুমতি না পাওয়ায় উৎপাদিত সিএনজি তিনি বিক্রি করতে পারছেন না।

তফিকুল নগরের রাজারহাতা এলাকার চিকিৎসক রফিকুল ইসলামের ছেলে। রাজপাড়া থানার বসুয়া এলাকায় চার কাঠা জমির ওপর তিনি গড়ে তুলেছেন ‘ইফাত বায়ো সিএনজি’ প্ল্যান্ট।

তফিকুল বলেন, “বাংলাদেশে এই প্রথম চিনিকলের উচ্ছিষ্ট থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে। এই গ্যাস পরিশোধনের মাধ্যমে সিএনজিতে রূপান্তরিত করে রান্নাবান্না ও গাড়িতে ব্যবহার করছি। এছাড়া গ্যাস উৎপাদনের পর যে উচ্ছিষ্ট থাকে তা দিয়ে তৈরি করি বায়োসার।

“এ প্রকল্পে কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। কিন্তু বিস্ফোরক অধিদপ্তরে প্রায় এক বছর আগে আবেদন করলেও তারা এখনও পরিদর্শন করেননি।”

তবে কৃষি বিভাগ থেকে ছয় মাসের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে সার বিপণনের অনুমোদন পেয়েছেন বলে তিনি জানান।

তফিকুল যুক্তরাজ্যে লিভারপুল জন মরিস বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনিভারসিটি অব ওয়েলসে লেখাপড়া করেছেন জানিয়ে বলেন, পড়ালেখার সময় সেখানে তিনি ফাইডন এনার্জি নামে একটি বায়োগ্যাস কোম্পানিতে দুই বছর চাকরি করেন।

“পরে দেশে ফিরে গড়ে তুলি ইফাত ব্যায়ো সিএনজি প্লান্ট। এখানে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় রাজশাহী সুপার মিল থেকে আনা প্রেসমাড। প্রতি টনের দাম ১০৫০ টাকা। আমার প্লান্ট সম্পূর্ণ মাটির ওপর তৈরি। কাঁচামাল ও পানি মিশ্রণের জন্য স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করার জন্য হিটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। ডাইজেস্টার স্লো মিক্সিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয় সর্বোচ্চ পরিমাণ গ্যাস উৎপাদনের জন্য। আর গ্যাস পরিশোধনের জন্য আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে কমপ্রেশনের মাধ্যমে বোতলজাত করি।”

তার এ প্লান্টে প্রতিদিন দুই টন গাদ থেকে ৩০০ কিউবিক মিটার সিএনজি উৎপাদন করা যায় জানিয়ে তিনি বলেন, একই সঙ্গে প্রতিদিন জৈবসার উৎপাদন করা যায় দেড় টন। তবে অনুমতি না থাকায় এই কার্যক্রম নিয়মিত চালানো হয় না।

রাজশাহী বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জামিলুর রহমান জানিয়েছেন, তিনি এই প্লান্ট পরিদর্শন করেছেন।

“দেশে এই প্রথম চিনিকলের প্রেসমাড থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে। আগে প্রেসমাড থেকে শুধু সার তৈরি হত। এখন তা থেকে গ্যাস ও সার দুটোই হচ্ছে। প্রাকৃতিক উপাদানে প্রস্তুত এই গ্যাস ও সার গোবর থেকে উৎপাদিত গ্যাস ও সারের চেয়ে পরিমাণে ও গুণে অনেক এগিয়ে। এই প্লান্ট অনুমোদনযোগ্য।”

জামিলুর আরো বলেন, তাদের উপস্থিতিতে গাড়িতে এই গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে।

“উদ্যেক্তার নিজের গাড়িতে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এখনও এ গ্যাস কোনো ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়নি। রাজশাহীতে পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। উদ্যোক্তার কাছে গ্যাস পরীক্ষার নিজস্ব যন্ত্র রয়েছে। সেখানে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে।”

এ বিষয়ে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রধান বিস্ফোরক কর্মকর্তা সামসুল আলম বলেন, গত বছর ২৩ অগাস্ট পরিদর্শনের জন্য তাদের দপ্তরে একটি আবেদন করা হয়েছে।

“এরপর তারা আমাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করেনি। তারা যদি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাহলে প্লান্টটি পরিদর্শন করা হবে। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করা ভাল।”

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান এ কে এম দেলোয়ার হোসেন তফিকুলের প্লান্ট পরিদর্শন করেছেন।

দেলোয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ধরনের প্লান্ট সুগার মিল এলাকায় করা যায় কিনা তা দেখতে ইফাত ব্যায়ো সিএনজি প্লান্ট লিমিটেড পরিদর্শন করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি।”

SCROLL FOR NEXT