সমগ্র বাংলাদেশ

বাড়ির পথে কাকন বিবির মরদেহ

Byসিলেট প্রতিনিধি

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাত ১১টা ১৫ মিনিটে শতবর্ষী কাকন বিবি মারা যান।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্স কাকন বিবির মরদেহ নিয়ে দোয়ারাবাজারের পথে যাত্রা শুরু করে বলে হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল একে এম মাহবুবুল হক জানান।

এর আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা তাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

কাকন বিবির মেয়ে সখিনা বিবি জানান, মরদেহ দোয়ারাবাজারে পৌঁছানোর পর সর্বস্তরের মানুষ তাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর বিকাল ৪টায় জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে গত সোমবার সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন কাকন বিবি। এর আগে গত বছর জুলাইয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর কয়েকদিন হাসপাতালে ছিলেন তিনি।

কাকন বিবির জন্ম ১৯১৫ সালে বলে জানিয়েছেন তার ভাগ্নে ইনছান আলী। মেঘালয়ের নেত্রাই হাসিয়া পল্লীতে তিনি জন্মেছিলেন বলে সুনামগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আবু সুফিয়ান জানান। কাকন বিবির স্বামী সাঈদ আলীও প্রয়াত।

১৯৭১ সালে ৩ মাস বয়সী মেয়ে সখিনাকে রেখে মুক্তিযুদ্ধে যান কাকন বিবি। প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে গুপ্তচরের কাজ করলেও পরবর্তীতে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। পাক বাহিনীর হাতে আটক হয়ে নির্যাতনের শিকারও হয়েছেন এই বীর যোদ্ধা।

ছাড়া পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীর কাছে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নেন কাকন বিবি। রহমত আলীর দলে সদস্য হয়ে সশস্ত্র যুদ্ধ করেন তিনি। একইসঙ্গে চালিয়ে যান গুপ্তচরের কাজ।

১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে টেংরাটিলার সম্মুখ যুদ্ধে কয়েকটি গুলি তার শরীরে বিদ্ধ হয়। উরুতে কয়েকটি গুলির দাগ এখনও আছে।

১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত করেন। কিন্ত তার এ বীর প্রতীক খেতাব এখনো গেজেটভুক্ত হয়নি।

সখিনা বলেন, ‘‘সরকার বীর প্রতিক খেতাব দিলেও তা গেজেটভুক্ত না হওয়ায় মায়ের মনে কষ্ট ছিল। বীর প্রতীকের সুবিধাও তিনি পাননি। এ সুবিধাগুলো যেন আমারা পাই সেজন্য দ্রুত গেজেট ভুক্তির দাবি জানাচ্ছি।’

সিলেট মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ভবতোষ রায় বর্মণ রানা জানান, মুক্তিযোদ্ধে কাকন বিবির অবদান অনস্বীকার্য। একজন নারী হয়েও জীবনবাজি রেখে তিনি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। কাকন বিবির এ অবদান আমরা চিরদিন স্বরণ রাখবো।

SCROLL FOR NEXT