সমগ্র বাংলাদেশ

গোপালগঞ্জে নৌকা বাইচ উৎসব

Byগোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

উপজেলার কালীগঞ্জ এলাকার বাঘিয়ার বিলের বাবুর খালে শুক্রবার শুরু হওয়া তিনদিনের এ নৌকা বাওয়ার প্রতিযোগিতার প্রথম দিনে দৃষ্টিনন্দন দুই শতাধিক সরেঙ্গা, ছিপ, কোষা, চিলাকাটা, জয়নগর ও বাচারী নৌকা অংশ নেয়।    

গোপালগঞ্জ ছাড়াও মাদারীপুর, পিরোজপুর, নড়াইল ও বরিশাল জেলার মাঝি-মাল্লারা প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন।  

স্থানীয়ভাবে এ নৌকা বাইচ ঐতিহ্যবাহী ‘বিল বাঘিয়ার নৌকা বাইচ’ হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছরের মতো এ বছরও এই নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে লাখ মানুষের মিলন মেলা বসেছে কালীগঞ্জে।

উপজেলার কলাবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাইকেল ওঝা বলেন, জলাভূমি বেষ্টিত কোটালীপাড়ার জীবন জীবিকার প্রধান অবলম্বন ছিল নৌকা। প্রায় দুইশ বছর আগে লক্ষ্মী পূজার সময় নৌকা নিয়ে এলাকার মানুষ জমিাদার শিবরাম চৌধুরীর বাড়িতে যেতেন। 

পূজা দেখে ফেরার সময় নৌকায় নৌকায় পাল্লা হতো। নৌকার মাধ্যমে চিত্তবিনোদনের চিন্তা থেকে নৌকা বাইচের প্রচলন শুরু হয়। সে থেকেই লক্ষ্মী পূজার পরের দিন থেকে এ অঞ্চলের নৌকা বাইচ হয়ে আসছে বলে জানান তিনি।

আবহমান গ্রাম বাংলার অতি প্রাচীন কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও নিজস্বতা ধরে রাখতে লাখো প্রাণের উচ্ছ্বলতায় উপজেলার বাবুর খালে কালীগঞ্জ বাজার থেকে খেজুরবাড়ি পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নৌকা বাইচ ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

এ বারের উৎসবের বাড়তি আকর্ষণ নৌকায় নৌকায় মেলা।

লাখো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার দুপুর থেকে বিভিন্ন বর্ণে ও সাজে সজ্জিত দৃষ্টিনন্দন নৌকার মাঝিরা বাইচ শুরু করে। এ সময় নানা রকম বাদ্যের তালে জারি সারি গান-নাচ এবং হেঁইও হেঁইও রবে বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দে এক অনবদ্য আবহের সৃষ্টি হয়।

প্রতিযোগিতা চলাকালে বাবুর খালের দু পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা বিভিন্ন বয়সী লাখ লাখ দর্শক মাঝি মাল্লাদের উৎসাহ দেন। তাদের করতালীতে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে।

কোটালীপাড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান হাজরা বলেন, “ছোটবেলা থেকে এ নৌকা বাইচ দেখে আসছি। কখনও কাউকে বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে এ বাইচের আয়োজন করতে হয় না। স্বতঃস্ফুর্তভাবে এলাকার লোকজনের অংশগ্রহণে এ বাইচ হয়ে আসছে”

কোটালীপাড়া থানার ওসি মোহাম্মদ কামরুল ফারুক বলেন, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ নৌকা বাইচ উপভোগ করতে এখানে আসে। এ কারণে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় নৌকা বাইচ এলাকায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিলাল হোসেন বলেন, নদীমাতৃক এ অঞ্চলের দুইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী বাঘিয়া বিলের নৌকা বাইচ টিকিয়ে রাখতে উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে।

SCROLL FOR NEXT