সমগ্র বাংলাদেশ

সিলেটে গ্রেনেড হামলায় ‘ছাত্রলীগকে জড়ানোর চেষ্টা হয়েছিল’

Byমঞ্জুর আহমদ
গ্রেনেড হামলার পর গ্রেপ্তার কয়েকজন

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় এ হামলায় কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। চার ছাত্রলীগ নেতাসহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়েরও চেষ্টা করা হয়।

পরে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামের শীর্ষ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানের স্বীকারোক্তিতে এ ঘটনায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার তথ্য উঠে আসে।

বুধবার রাতে জঙ্গিনেতা মুফতি হান্নান ও তার দুই সহযোগী বিপুল ও রিপনের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সে সময়ের ভুক্তভোগীরা। তারা ওই সময় দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের বিচার দাবি করেছেন।

২০০৪ সালের  ২১ মে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ) এর মাজার জিয়ারত ও জুম্মার নামাজ শেষে বের হওয়ার পথে গ্রেনেড হামলার শিকার হন তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী। ওই হামলায় তিনজন নিহত হন।

আলম খান মুক্তি

আলম খান মুক্তি

ওইদিন বিকালে প্রতিবাদ মিছিল বের করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। মিছিল থেকেই গ্রেপ্তার করা হয় তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য বর্তমান সিলেট মহানগর যুবলীগের আহবায়ক আলম খান মুক্তিকে।

মিছিল থেকে আরও গ্রেপ্তার করা হয় তৎকালীন মহানগর ছাত্রলীগের আহবায়ক হাবিবুর রহমান সেলিম, ছাত্রলীগকর্মী হারুন উর রশিদকে।

এছাড়া ওই রাতে তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক বর্তমান মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক সেলিম আহমদ সেলিমকে তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এ চারজন ছাড়াও আরও ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

আলম খান মুক্তি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিএনপি-জামায়াত সরকার জঙ্গিদের বাঁচাতেই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছিল। রিমান্ডে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে এ হামলার সঙ্গে জড়িত বলে তাদের স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করেছে পুলিশ।

সে সময়ের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলে মুক্তি বলেন, “সাত দিন রিমান্ডে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। ছয়মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পাই। প্রায় চার বছর মামলা চলার পর মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছি।

“সে সময়ের বিনা অপরাধে যে সকল পুলিশ সদস্যরা আমাদের নির্যাতন করেছে তাদের শাস্তি হওয়া দরকার।”

সেলিম আহমদ সেলিম

সেলিম আহমদ সেলিম

সে সময় গ্রেপ্তার তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক সেলিম আহমদ সেলিম বলেন, “বোমা হামলার পর আমরা জঙ্গির বিরুদ্ধে মিছিল করে মানুষকে সোচ্চার করছিলাম। সেদিন রাতে আমাকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হলো।

“নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা হয়েছে। অবশেষে মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তির পর নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি। কিন্তু সেদিনগুলোর দুঃসহ স্মৃতি এখনও ভুলতে পারিনি।”

বোমা হামলার পর সিলেট কোতোয়ালি পুলিশ প্রাথমিকভাবে মামলাটি তদন্ত করলেও পরে তদন্তভার দেওয়া হয় সিআইডিকে।

তদন্তে নেমে সিআইডি পুলিশের তৎকালীন ‘এএসপি মুন্সী আতিকও ঘটনা ভিন্নখাতে নেওয়ার’ চেষ্টা করেন বলে এই ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন।

পরে হুজির শীর্ষ জঙ্গি মুফতি হান্নান গ্রেপ্তার হলে তার স্বীকারোক্তি থেকে আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার তথ্য উদঘাটন হয়।

এ বিষয়ে সিলেটের পিপি মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, বিএনপি-জামায়াত সরকারের মদদে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে আলোচিত এ মামলাটি ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকে জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে, যা পরে ভুল প্রমাণিত হয়।

তিনি বলেন, “জঙ্গি মুফতি হান্নান, রিপন ও বিপুল স্বীকারোত্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছে- বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ মন্ত্রী, এমপি এবং খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান বোমা হামলাগুলোতে জড়িত ছিলেন। পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদেরও ব্যবহার করা হয়। তারা এখন বিভিন্ন মামলায় আসামি হয়েছেন। ”

SCROLL FOR NEXT