রিকশায় আরোহী নিয়ে পথ চলছেন ইউপি সদস্য মাইকেল ঢালী।

)<div class="paragraphs"><p>রিকশায় আরোহী নিয়ে পথ চলছেন ইউপি সদস্য মাইকেল ঢালী।</p></div>
সমগ্র বাংলাদেশ

রিকশা চালানোই ইউপি সদস্য মাইকেলের পেশা

Byকে এম রায়হান কবীর

জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতি নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা কথা থাকলেও তার ব্যতিক্রমও আছে। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারেরচর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মাইকেল ঢালী তেমন একজন।

৪৪ বছর বয়সী এই ইউপি সদস্য সংসার চালাতে এখনও রিকশা চালান। তার ফাঁকে ফাঁকে রিকশা নিয়েই বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে ভোটারদের খবর নেন তিনি।

মাইকেল ঢালী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি রিকশা চালিয়েই জীবিকা নির্বাহ করতেন। তখন এলাকার সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শুনে জনপ্রতিনিধি হওয়ার ইচ্ছা জাগে। নির্বাচিত হওয়ার পরও রিকশা চালানো বাদ দেননি তিনি। কারণ এটিই তার আয়ের একমাত্র উৎস।

স্থানীয় আবদুর রব ঢালী ও নীলুফা বেগম দম্পতির ছেলে মাইকেল। কিশোর বয়সেই বাবা-মাকে হারান। আট ভাই-বোনের সংসার চালাতে পাড়ি জমান ঢাকায়। শুরু করেন বুড়িগঙ্গায় নৌকা চালানোর কাজ। এর ১০ বছর পর তিনি গ্রামে ফিরে যান। শুরু করেন রিকশা চালানো। ১৬ বছর ধরে রিকশা চালানোই তার পেশা।

এই ইউপি সদস্য জানালেন, কোনো কৃষিজমি নেই তার। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ২ শতাংশ জমিতে নির্মিত ঘরে থাকেন স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে। রিকশা চালিয়ে দিনে ৫০০-৬০০ টাকা উপার্জন করেন। যা দিয়েই চলে সংসার, ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া।

মাইকেল বলেন, “অনেকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েও ভোটের সময় দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখেন না। এসব নিয়ে গ্রামের মানুষের কাছে গল্প শুনি, দুর্দশার করা শুনি। সেখান থেকেই ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা জাগে। ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনে সদস্যপদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। কিন্তু মাত্র কয়েক ভোটের ব্যবধানে হেরে যাই। গত বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আবার প্রার্থী হই। সে নির্বাচনে স্থানীয় ভোটাররা আমাকে জয়ী করে।”

ইউপি সদস্য হিসেবে এরই মধ্যে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছেছেন মাইকেল।

পোরাগাছা গ্রামের বাকপ্রতিবন্ধ্বী আলমগীরের স্ত্র্রী জানালেন, তীব্র অভাব থাকলেও সহায়তা পাচ্ছিলেন না তারা। মাইকেল নির্বাচিত হওয়ার পর আলমগীরের পরিবারকে খাদ্য সহায়তার ভিজিডি কার্ড করে দিয়েছেন। এখন প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছেন তারা।

একই গ্রামের লোকরি মাতবর বয়স্ক ভাতা পেতেন না। ইউপি সদস্য মাইকেল তার কাগজপত্র নিয়ে সমাজসেবা কার্যালয়ে জমা দিলে তিনি বয়স্ক ভাতা পেতে শুরু করেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা আমাদের পাত্তা দিতে চায় না। কিন্তু গরিবের বন্ধু রিকশাওয়ালা মাইকেল আমাদের কষ্ট বোঝে। তাই তো বয়স্ক ভাতা পেয়েছি।’

মাইকেলের স্ত্রী লিপি বেগম বলেন, “আমার স্বামীর পড়াশুনা ও টাকা-পায়সা নেই। কিন্তু তিনি গরিবের সেবা করতে ইউপি সদস্য হয়েছেন। মানুষের কাজ করতে গিয়ে আয়-রোজগার কম হয়, সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তাতে আমাদের কোনো আক্ষেপ নেই। আমার স্বামী যে মানুষদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের মর্যাদা যেন রাখতে পারেন।”

মোক্তারেরচর ইউপি চেয়ারম্যান বাদশা শেখ বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ অনুযায়ী ৬ নম্বর ওয়ার্ডে যা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তা সঠিকভাবে বিতরণ করছেন মাইকেল ঢালী।”

মাইকেল ঢালীকে উদ্যমী হিসেবে উল্লেখ করে নড়িয়ার ইউএনও শংকর চন্দ্র বৈদ্য বলেন, “অস্বচ্ছলতার মধ্যেও মাইকেল মানুষকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। নিজের জীবিকা নির্বাহের জন্য তিনি রিকশা চালানো ছাড়েননি। তিনি বর্তমান সমাজের জন্য এক বড় দৃষ্টান্ত।”

SCROLL FOR NEXT