বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) প্রকাশিত ‘সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনে বঙ্গবন্ধু’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

)<div class="paragraphs"><p>বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) প্রকাশিত ‘সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনে বঙ্গবন্ধু’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।</p></div>
রাজনীতি

‘অসত্য লিখলে’ শাস্তি হবে না? প্রশ্ন তথ্যমন্ত্রীর

Byনিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর প্রতিবেদনের সঙ্গে ১৯৭৪ সালে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে বাসন্তির জাল পরিয়ে ছবি তোলার মিল খুঁজে পাওয়ার কথা বলেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তারের সমালোচনার জবাবে তিনি বলেছেন, সাংবাদিকরাও আইনের উর্ধ্বে নয়।

“কোনো সাংবাদিক যদি অপরাধ করে তার কি শাস্তি হবে না? কেউ যদি অপসাংবাদিকতা করে, স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করে এবং একটি ছেলের হাতে ১০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে তার নামে অসত্য লেখে, চাইল্ড এক্সপ্লয়টেশন করে, সেটার কি বিচার হবে না?”

প্রথম আলোর বিরুদ্ধে মামলা এবং এর সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের সমালোচনার প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের একথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।

প্রথম আলোয় গত ২৬ মার্চ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে একজন শ্রমজীবী মানুষকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, “পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।”

জাকির নামে ওই শ্রমজীবীর মন্তব্য ধরে শিরোনাম করা হলেও প্রতিবেদনে ছবি দেওয়া হয় আরেকটি শিশুর, যার কথাও প্রতিবেদনের ভেতরে ছিল। ওই ছবি ও শিরোনাম দিয়ে সোশাল মিডিয়ায় একটি কার্ড পোস্ট করা হয়, যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

পরে প্রথম আলো প্রতিবেদনটি থেকে ছবি সরিয়ে শিরোনাম বদলে দেয়। পাশাপাশি তাদের সোশাল মিডিয়ায় দেওয়া পোস্টও প্রত্যাহার করা হয়।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) প্রকাশিত ‘সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনে বঙ্গবন্ধু’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সেই প্রসঙ্গ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে বাসন্তীর গায়ে জাল পরিয়ে ছবি তুলে সেটি প্রকাশ করা হয়েছিল। তখন জালের দাম কিন্তু কাপড়ের দামের চেয়ে বেশি ছিল।

“বাসন্তীকে জাল পরিয়ে বানোয়াট সংবাদ পরিবেশনের মতো একটি শিশুকে ১০ টাকা দিয়ে তার নাম ব্যবহার করে অসত্য লিখে স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করা কি অপরাধ নয়? এটা কি সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতার পরিপন্থি নয়?”

হাছান মাহমুদ বলেন, “সে জন্যই এটার প্রচণ্ড সমালোচনা হয়েছে, এটি ঠিক নয় বিধায় আপলোড হওয়ার পরে সেটি তারা সরিয়েও ফেলেছিল।

“কিন্তু সেটির স্ক্রিনশট তো বিভিন্ন জায়গায় ছিল, অনেকে শেয়ার করেছে, সেগুলো রয়েও গেছে। সেগুলো সোশাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়িয়েছে, ঘুরছে। এর প্রেক্ষিতে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা মামলা করেছে, মামলার প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। পুলিশের তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে এবং আইনের গতিতে আইন চলবে।”

ওই ঘটনার তিন দিন পর বুধবার সেই প্রতি্বেদনের প্রতিবেদককে পুলিশ বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার সকালে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এরমধ্যে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাও হয়।

বিতর্কিত এই আইন নিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হচ্ছে সমগ্র দেশের সব মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য, সাংবাদিকদেরও ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে অনেক সাংবাদিকও মামলা করেছে। কদিন আগে একজন নারী সাংবাদিক বিদেশ থেকে চরিত্র হননের দায়ে আরেক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।”

অন্যান্য দেশেও একই ধরনের আইনের উদাহরণ দিয়ে হাছান বলেন, “এ ধরনের আইন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হয়েছে। যুক্তরাজ্যে সাইবার সিকিউরিটি ল’জ অ্যান্ড রেগুলেশন ২০২২ ও যুক্তরাষ্ট্রে সাইবার ল’ অ্যান্ড পানিশমেন্টসহ এ ধরনের আইন বিশ্বের বহু দেশে রয়েছে।

“যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের অপরাধের শাস্তি হচ্ছে ২০ বছর কারাদণ্ড, এবং ডিজিটাল মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর কারণে যদি কারও মৃত্যু হয়, তবে সেই ডিজিটাল অপরাধের শাস্তি হচ্ছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আমাদের দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য অনেক দেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনেক বেশি কঠিন।”

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “এ ঘটনায় অবশ্যই মিথ্যা বলে রাষ্ট্রের ভিত্তিমূলে আঘাত হানা হয়েছে, স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করা হয়েছে।

“স্বাধীনতা দিবসের দিন জাতীয় স্মৃতিসৌধ যেটি আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক, সেখানে একটা ছেলেকে ১০ টাকা দিয়ে ফুসলিয়ে তাকে দিয়ে কথা বলানোর চেষ্টা করা হয়েছে এবং সে যেটি বলেনি সেটা প্রচার করা হয়েছে। এটি ঠিক হয়নি বলেই তারা সরিয়েছে। সুতরাং অবশ্যই এখানে রাষ্ট্রের উপর আঘাত হানা হয়েছে।”

এ বিষয়ে বিএনপির বিবৃতি নিয়ে প্রশ্ন করলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান বলেন, “বিএনপি কিছু পেলেই বিবৃতি দেওয়ার অপচেষ্টা করে। বাংলাদেশে মতপ্রকাশের যে স্বাধীনতা সেটি অনেক উন্নয়নশীল দেশে নাই।”

যুব মহিলা লীগের বিক্ষোভে বিপ্লব বড়ুয়া

যুব মহিলা লীগের বিক্ষোভ

ঢাকার ধানমণ্ডির রাসেল স্কয়ারে ‘মহান স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করে দৈনিক প্রথম আলোর মিথ্যাচার এবং ষড়যন্ত্রর প্রতিবাদে’ বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগ।

এতে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, “একটি বানোয়াট সংবাদ শিরোনাম সৃষ্টি করা একটি নিছক অপরাধ বা ভুল হতে পারে না। এই ধরনের ভুল এই কাগজটি প্রথম করেছে, তা কিন্তু নয়।”

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, “কোনো কোনো মহল আগামী নির্বাচন, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা, ভণ্ডুল করে দেশের একটি অনির্বাচিত, অসাংবিধানিক সরকার নিয়ে আসতে চায়। এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়।

“আমাদের আজকের অবস্থান হচ্ছে এই ধরনের দুরভিসন্ধিমুলক, ষড়যন্ত্রমুলক তথ্য ষড়যন্ত্র করে যারা জাতিকে উস্কে দিতে চায় তাদের বিরুদ্ধে।”

সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তারানা হালিম, মোহাম্মদ এ আরাফাত, যুব মহিলা লীগের সভাপতি ডেইজি সারোয়ার ও সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি বক্তব্য দেন।

SCROLL FOR NEXT