রাজনীতি

সিটি নির্বাচনে ‘ব্যালট বিপ্লব’ ঘটান: খালেদা

Byজ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

বাংলা নববর্ষে মঙ্গলবার রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাস আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এই আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল এবং ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস উপস্থিত ছিলেন। খালেদা দুই প্রার্থীর জন্য ঢাকাবাসীর ভোট চেয়েছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “এই অবৈধ সরকার নিজেরা নির্বাচিত নয়। তারা আইন লঙ্ঘন করে সব কিছু করছে। আর আমাদের পদে পদে বাধার সৃষ্টি করছে, গ্রেপ্তার করছে। বর্ষবরণ অনুষ্ঠান করার অনুমতি তারা দেয়নি।

“তাই এবার ভোটের নীরব বিপ্লব ঘটাতে হবে। আমাদের সমর্থিত প্রার্থীদের ভোট দিয়ে জালেম অবৈধ সরকারকে দেখিয়ে দেবেন।”

খালেদা জিয়া ঢাকা দক্ষিণে মির্জা আব্বাসকে মগ প্রতীকে এবং ঢাকা উত্তরে তাবিথ আউয়ালকে বাস প্রতীকে ভোট দিতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তাদের ছবি সম্বলিত প্রচারপত্র হাতে তুলে সবাইকে দেখান তিনি।

গুলশানে নিজের কার্যালয়ে তিন মাস অবস্থানের পর বাড়ি ফিরে যাওয়ার পর এই প্রথম ঘরের বাইরে দলীয় কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিলেন খালেদা জিয়া।

সরকার পতনের আন্দোলন ডাকার পর তার এই ঘরে ফেরা ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে বলে মন্তব্য এসেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে। 

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও ছয় মাস পর গেলেন খালেদা। সর্বশেষ গত বছরের ২৩ অক্টোবর সেখানে গিয়েছিলেন তিনি।

বিকাল সোয়া ৫টার দিকে নয়া পল্টনে পৌঁছে বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহর। ওই কার্যালয়ের সামনের সড়কে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাস বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

খালেদা জিয়া গাড়ি থেকে নেমে এলে বিএনপির সাংস্কৃতিক সম্পাদক গাজী মাজহারুল আনোয়ার, জাসাস সভাপতি এম এ মালেক ও সাধারণ সম্পাদক মনির খানসহ সংগঠনটির নেতারা ফুল দিয়ে তাকে স্বাগত জানান।

বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে খালেদা হাত নেড়ে নেতা-কর্মীদের অভিনন্দন জানান। এ সময়ে নেতা-কর্মীরা স্লোগান তোলে- ‘খালেদা জিয়া এগিয়ে চল, আমরা আছি তোমার সাথে’।

এরপর রাস্তার পাশে নেতাকর্মীদের মাঝে একটি চেয়ারে বসেন খালেদা। দলীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বর্ষবরণের অনুষ্ঠান।

বক্তব্যের শুরুতে রাজধানীবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “আশা করছি, এই নববর্ষ আপনাদের জন্য শুভ হবে, দেশের জন্য শুভ হবে।”

নববর্ষের আনন্দের দিনেও সরকার বিএনপিকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেয়নি দাবি করে তিনি বলেন, “এই সরকারের কোনো সংস্কৃতি মন নেই।’’

আট মিনিটের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, “জনগণের ওপর আস্থা নেই বলে এই সরকার নির্বাচন দিতে ভয় পায়। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বরখাস্ত করে নিজেদের দলীয় লোকজনকে বসিয়েছে।”

ঢাকা দক্ষিণে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে দলের চেয়ারপারসন বলেন, মির্জা আব্বাস আগেও ঢাকার মেয়র ছিলেন। তিনি ঢাকাকে ‘পরিচ্ছন্ন নগরীতে’ পরিণত করেছিলেন। সেই ঢাকা এখন পৃথিবীর নোংরা ও দূষিত শহরের তালিকায় ‘২ নম্বরে’ এসে দাঁড়িয়েছে।”

“আমাদের সমর্থিত প্রার্থী নির্বাচিত হলে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও যানজট সমস্যার নিরসন হবে। তাই মির্জা আব্বাসকে মেয়র হিসাবে নির্বাচিত করে সেবা করার সুযোগ দেবেন- এটা আমি আপনাদের কাছে প্রত্যাশা করি।”

উত্তরের প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে ‘তরুণদের প্রার্থী’ হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেন খালেদা। তিনি বলেন, “নতুন প্রজন্মের তাবিথ আউয়াল উচ্চ শিক্ষিত ছেলে। বিদেশে লেখাপড়া করেছে। এই তরুণ ছেলেকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। তার অনেক নতুন নতুন আইডিয়া আছে।’’

বর্তমান সরকার দেশকে ‘নিচের দিকে’ নিয়ে গেছে মন্তব্য করে বিএনপি প্রধান বলেন, “আমাদের প্রার্থীদের বিজয়ী করুন, আমরা দেশকে উপরের দিকে নিয়ে যাবে।”

নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনের পর নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনেও সাফল্য না পাওয়া ২০ দলীয় জোট নেত্রী এ অনুষ্ঠানেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।

“আমাদের আন্দোলন একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। সরকার এখন সিটি করপোরেশন নির্বাচন দিয়েছে। তারা ভেবেছে, আমরা আন্দোলনে আছি নির্বাচনে যাব না। বিএনপি নির্বাচনকে ভয় পায় না। সিলেট থেকে শুরু করে রাজশাহী, চট্টগাম, বরিশাল, খুলনা, কুমিল্লাসহ সব সিটি নির্বাচনে আমরা অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছি।’’

প্রতি বছর জাসাস এই স্থানে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করলেও তাতে প্রধান অতিথি হিসেবে খালেদা জিয়ার যোগ দেওয়া এটাই প্রথম। অন্য বছরগুলোতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারাই এই অনুষ্ঠানে অতিথি থাকতেন।

বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া আসবেন বলে দুপুর থেকেই নয়া পল্টন কার্যালয়ে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী জড়ো হয়ে ছিল।

কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত সড়কে বিকাল ৪টার দিকে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। সড়কের বিভিন্ন গলিতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে, সাদা পোশাকে রয়েছে গোয়েন্দারাও।

গুলশানের কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার অবস্থানের মধ্যে গত তিন মাস তালাবন্ধ ছিল নয়া পল্টনের কার্যালয়ও। বিএনপি নেত্রী তার কার্যালয় ছেড়ে ঘরে ফেরার পর গত ৫ এপ্রিল নয়া পল্টনের কার্যালয়টি খোলা হয়।

খালেদা আসার আগে দোতলায় চেয়ারপারসনের কক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখা হলেও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে না ঢুকে অনুষ্ঠানস্থল থেকেই গুলশানের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি। পরে জাসাস শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, মাহবুবুর রহমান, আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারনের উপদেষ্টা আবদুল হালিম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জমান রিপনসহ সহযোগী সংগঠনের নেতারা অনুষ্ঠানে ছিলেন।

অনুষ্ঠানে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক তাহমিনা আখতার, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল হাই শিকদার, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান,জাসাস সভাপতি এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন প্রমুখ।

SCROLL FOR NEXT