রাজনীতি

আইন সবার জন্য সমান: খালেদার মনোনয়নপত্র বাতিল নিয়ে আ. লীগ

Byনিজস্ব প্রতিবেদক

রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ থাকারও প্রমাণ মিলেছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত উপকমিটির চেয়ারম্যান ফারুক খান।

দুর্নীতির দুই মামলায় ১০ ও ৭ বছরের সাজা নিয়ে কারাবন্দি খালেদা জিয়া একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ফেনী ও বগুড়ার তিনটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। সাজার মেয়াদ দুই বছরের বেশি হওয়াকে কারণ দেখিয়ে সেগুলো বাতিল করেছেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের বেশি কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে তিনি নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হারান। এর আগে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে প্রার্থী হওয়ার নজির থাকলেও সম্প্রতি উচ্চ আদালতের এক রায়ে সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। 

আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের প্রার্থিতা যাচাই-বাছাই হয় রোববার। দুপুরে যখন খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিলের ঘোষণা আসে, সে সময় আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে ছিল আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও উপকমিটির কো চেয়ারম্যান এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে ১০ জনের ওই  প্রতিনিধি দল সকাল ১১টার দিকে নির্বাচন কমিশনে আসে।

খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল নিয়ে ফারুক খান বলেন, “এটাই লেভেল প্লেয়িং গ্রাউন্ড। আইন সকলের জন্য এক। কোনো একটি দলের প্রধান হলেই তার জন্য তো আইন অন্য রকম হবে না। এতে প্রমাণিত হয় যে, বাংলাদেশে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে।

“সকলের জন্য আইন একই রকম। কেউ বোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছে, আমরা মানুষকে সাহায্য করেছি, এটা তো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হতে পারে না। লেভেল প্লেয়িং গ্রাউন্ড কথাটি আসে আইনের ক্ষেত্রে, আজকে প্রমাণিত হল, আইনের ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং গ্রাউন্ড আছে।”

তিনি একথা বললেও দলীয় প্রধানের মনোনয়নপত্র বাতিলের জন্য ক্ষমতাসীনদের দিকেই অভিযোগ আঙুল তুলছে বিএনপি। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকারের ‘নীল নকশার অংশ’ হিসেবেই বিএনপি চেয়ারপারসনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

দুর্নীতি মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া; তিন আসনেই তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে

দুর্নীতি মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া; তিন আসনেই তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে

নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ‘সরকারের কথা মতো’ কাজ করার অভিযোগ এর আগেও করেছেন বিএনপি নেতারা।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এইচ টি ইমাম বলেন, “বিএনপি তো এই সরকারের অধীনেই নির্বাচনে আসছে। তাহলে তো এ প্রশ্ন এখন অবান্তর।”

বিএনপি নেতারাই ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্য দিয়ে আচরণ বিধি লংঘন করছে বলে অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইমাম।

তিনি বলেন, “বিএনপি নেতারা বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে মন্তব্য করছেন। তারা বলছেন, ৩০ ডিসেম্বরের পর নির্বাচন কমিশন কোথায় থাকবে আমরা দেখব। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ কোথায় থাকে আমরা দেখব।

“তার মানে কী? এটা তো আচরণবিধির সুস্পষ্ট লংঘন। নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা বলেছি, তারা যেন এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেন।”

সরকার ও নির্বাচন কমিশন নিয়ে আক্রমণাত্মক বক্তব্য বন্ধে নির্বাচন কমিশনকে তৎপর হওয়ার অনুরোধ করেছেন বলে জানান এইচ টি ইমাম।

তিনি বলেন, “লন্ডনের দুটি পত্রিকায় ব্যাংকিং আইনে দণ্ডিত এক ব্যক্তির খবর এসেছে। তিনি এখন বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন। এটিও নির্বাচনী আচরণবিধির লংঘন। নির্বাচন কমিশনে আমরা এ বিষয়ে কথা বলেছি।”

ইমাম অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে রোববার সকালে যে ‘সমাবেশ’ করেছেন, তা নির্বাচনী আইনে ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’।

নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, “এমনিতে নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের সংখ্যা অনেক। ১১৮টির বেশি এনজিও নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। এদের সদস্য সংখ্যাও কয়েক লক্ষ। এর উপরে আবার বিদেশ থেকে আমরা আহ্বান করতে থাকি, তাহলে এদেরকে দেখাশোনা করতেই আমাদের সিকিউরিটি অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।”

বিদেশি পর্যবেক্ষকরা যেন নির্বাচনের বিধিমালা মেনে চলেন সে বিষয়ে নজর দিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল।

এইচ টি ইমাম বলেন, “বিদেশি পর্যবেক্ষক আসা আমরা নিরুৎসাহিত করছি না। তবে যারা আসেন, তারা যেন নিয়ম মেনে চলেন। এটা আমাদের সার্বভৌমত্বের ব্যাপার।”

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে অন্যান্য কমিশনাররা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

অপরদিকে ফারুক খান ও এইচ টি ইমাম ছাড়াও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত উপকমিটির সদস্য সচিব মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দলটির আইটি সেলের আবদুস সবুর, আন্তর্জাতিক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া এবং উপকমিটির সদস্য এস এম কামাল হোসেন, রিয়াজুল কবির কাউসার, ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পী, আবু কাশেম, কান্তারা খান ছিলেন বৈঠকে।

SCROLL FOR NEXT