অভিমত

সোহেল তাজের ৮ বৈশিষ্ট্য  ও স্বৈরাচার নির্ণয়

Byঅজয় দাশগুপ্ত

খবরের কাগজে দেখেই নিশ্চিত হলাম সোহেল তাজের দেয়া স্বৈরাচারের ৮ বৈশিষ্ট্য তিনি তার ফেইসবুক পেইজে সত্যি লিখেছেন। সামাজিক মিডিয়ায় আজকাল যা আসে তার বেশিরভাগই এখন আর বিশ্বাস করা যায়না। বিশেষত এবারের আন্দোলন বা উত্তাপ বারবার বলে দিয়েছে সামাজিক মিডিয়ার সবকিছু নেয়া যাবেনা।

সেখানে অসম্পাদিত নিউজ বা ভিউজ এতটাই প্রচণ্ড আর বেপরোয়া মাঝে মাঝে তালগোল পাকিয়ে যায়। যার যা খুশি লেখার জায়গা সোশ্যাল মিডিয়ায়। দেশে দেশে এর সুফল এবং কুফলের দিকটা এখন প্রকাশ্য। বহুবার বলেছি আমরা প্রস্তুত জাতি হবার আগেই খুলে গেছে এর দু্য়ার। একজন মেধাবী মানুষ যা দেখেন বা যা লেখেন লেখাপড়া না জানা মানুষও তাই দেখেন তা শুনতে পান।

এর প্রভাব কী হতে পারে? দুজনের কাছে দু রকম অর্থ নিয়ে আসা এক নিউজ কতটা ভয়ংকর আর কতটা আগ্রহের জন্ম দিতে পারে সেটা নির্ণয় করা তখন কঠিন বৈকি! এতদিন পর যখন সরকারের জন্য তা হুমকি মনে হয়েছে তখনই তাঁরা কঠিন হয়ে উঠতে চাইছেন। এমনও শুনছি প্রয়োজনে ফেইসবুক নাকি বন্ধ করে দেয়া হবে। সেটা কী আসলেই সমাধান? সমাধান যে না, সেটা যাঁরা বন্ধ করতে চান তাঁরাও জানেন। তবু নিজেদের স্বার্থে করার কথা বলছেন।

আমরা যারা সাধারণ মানুষ সামাজিক মিডিয়ার যাবতীয় নোংরামী উস্কানির পরও এর কাছ থেকে সরতে পারিনা। বিশেষত বিদেশের বাঙালির খোরাক এই মাধ্যম। এর মাধ্যমে মুক্ত মতামত  আর নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া পাই আমরা। মুশকিল হলো ন্যায় অন্যায় বা শুভ অশুভ বিচারে আমাদের অন্ধত্ব। আমরা এখন এমন এক জাতি যার পরিচয় দুই দলের ভেতর আটকা পড়ে আছে। সে কারণে সোহেল তাজের মত সাহসী মানুষের এই বক্তব্যও আমাদের চোখে দুইভাবে বিবেচিত হবে।

একদল বলবে, আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে হয়তো ছিটকে পড়বেন তিনি; কেউ বলবে, বোধোদয় হয়েছে। তাঁর পিতার মতো তিনিও আজ সরকারী দলের চোখের দুশমন হবেন; আর একদল বলবে, এর নাম ভ্রান্তি। সোহেল তাজ আবারো সে ভুল করলেন যে ভুলের মাশুল দিয়েছিলেন তাঁর পিতা তাজউদ্দিন আহমেদ।

কিন্তু যেভাবে বা যে কারণেই হোক সোহেল তাজের এই ৮ বৈশিষ্ট্য  সরকারী দলের জন্য প্রীতিকর কিছু না।

কারণ, এইসব বৈশিষ্ট্যের অনেকগুলো  বর্তমান সরকারের আচরণের সাথে মিলে যাচ্ছে। মিলে গেলেও বুঝতে হবে তিনি সত্য বলতে চেয়েছেন। যদি কিছু মিলে যায় তার প্রতিকার করা প্রয়োজন। কে না জানে আমাদের দেশে কোনও দল চাইলেই নির্বিঘ্নে দেশ শাসন করতে পারেনা। আওয়ামী লীগ জনগণ নির্ভর একটি বড় দল। যাদের দেশের ধুলিকণায় অধিকার আছে।

যিনি না হলে এদেশ স্বাধীন হতোনা সে বঙ্গবন্ধু আর তাঁর যোগ্য নেতাদের কারণেই দেশ মুক্ত হয়েছিল। দুই দুইবারের গদি লাভ আর দেশ শাসনে তারা আমাদের দেশকে অনেক দিয়েছে। এখন বাংলাদেশ একটি অগ্রসর দেশ। আমাদের দেশের গায়ে লেগেছে নতুন হাওয়া। কিন্তু দেশ আর অর্থনীতিতে হাওয়া লাগলেও সমাজ আর রাষ্ট্র ভালো নেই। এই ভালো নেই থেকে মুক্ত হতে হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সোহেল তাজের বক্তব্যগুলো মিলিয়ে নিয়ে প্রতিকার প্রয়োজন।

কারণ আমরা দেখেছি এদেশ কোনওদিন কোনও স্বৈরাচারকে বরদাশত করেনি। কোনও একনায়ক বন্দুক বা ক্যাডারের জোরে বেশিদিন টিকতে পারেনি। শুধু তাই নয়, দেশে তারা ঘৃণিত এবং নিন্দিত হয়েছে। আমরা আওয়ামী বান্ধবদের বলবো এ বিবেচনা মাথায় রাখা দরকার। সোহেল তাজের পিতার কথা না শোনার কারণে এদেশের ইতিহাস রক্তাক্ত হয়েছিল।

তিনি নিজেও জান দিয়ে প্রমাণ করেছিলেন কতটা অনুগত আর দেশপ্রেম ছিলো তাঁর। সোহেল তাজের সাথে কী হয়েছিল, কী হবে সে আলোচনায় না গিয়েই বলা যায় তিনি সাহসী। তাঁর এই সাহস কীভাবে মূল্যায়ন করা হয় বা কী এর পরিণতি তা দেখার আশায় থাকলাম।

SCROLL FOR NEXT