অভিমত

প্রসঙ্গ কোটা সংস্কার: মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করবেন না

Byনাসির উদ্দিন ইউসুফ

গত ক'দিন ধরে ঢাকাসহ সারা দেশের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে যে আন্দোলন করে আসছে সে দাবিটা যৌক্তিক। এবং আমি মনে করি বিদ্যমান কোটার যে হার রয়েছে তা সংস্কার করাই উচিৎ। কিন্তু কোটা সংস্কারের দাবিতে যে আন্দোলন সেই আন্দোলন হঠাৎ করে সহিংস রূপ ধারন করাটা চিন্তার বিষয়। নিজেদের আন্দোলনকে বারবার শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হিসেবে দাবি করলেও ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসায় যে তাণ্ডবলীলা চালানো হয়েছে সেটা রীতিমতো সহিংসতা। নিজেদের অভিভাবকের বাসভবনে এভাবে হামলা চালানোটা কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী বা আন্দোলনকারীর কাজ হতে পারে না। নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার উপকরণে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরে নিশ্চয়ই অন্য কোনো পক্ষের ইন্ধন কাজ করেছে। অবিলম্বে তদন্তের মাধ্যমে এই ঘটনার ইন্ধনদাতাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় না আনতে পারলে ভবিষ্যতে আরো বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটা অস্বাভাবিক নয়। আবার আমি এটাও বলতে চাই পুলিশ আন্দোলন দমনের নামে শিক্ষার্থীদের উপর যে হামলা করেছে সেটাও কাম্য নয়। পুলিশি হামলার তদন্তটিও এখন সময়ের দাবি।

আরেকটি বিষয়  মুক্তিযোদ্ধাদের যেভাবে তরুণ প্রজন্মের মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে এবং যে অপমানজনক পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে সেটা একদমই কাম্য নয়। কোটা কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি ছিল না। দেশ স্বাধীনের পরে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুই মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ বিবেচনা করে কোটা ব্যবস্থা প্রণয়ন করেন। মুক্তিযোদ্ধারা এই সামান্য কোটা পাওয়ার জন্যে দেশ স্বাধীন করেন নাই। তারা পুরো দেশের মানুষের মুক্তির জন্যেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধারা যে সাহস নিয়ে দেশ স্বাধীনের জন্য যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তাদের সন্তান-সন্ততিদেরও সেই সাহসটুকু আছে যে কোটা ছাড়াই তারা প্রতিযোগিতা করতে পারেন। এখন যদি পুরো মুক্তিযোদ্ধা কোটা তু্লেও দেয়া হয় একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাবো। সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান- মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করবেন না।

তবে কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করা হলেও কয়েকটি বিশেষ কোটা থাকা একান্তই জরুরি। যেমন নারী, প্রতিবন্ধী এবং আদিবাসী কোটা অবশ্যই থাকতে হবে। সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সামনে নিয়ে আসার জন্য এই কোটাগুলো থাকা আবশ্যক। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে কোটা ব্যবস্থা প্রণয়নই করা হয়েছে কিন্তু সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের বৈষম্য নিরসনের জন্য যা সংবিধান সম্মত।

SCROLL FOR NEXT