ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে শুক্রবার ‘দেশগান’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ছায়ানট।

)<div class="paragraphs"><p>ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে শুক্রবার ‘দেশগান’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ছায়ানট।</p></div>
গ্লিটজ

বিজয় দিবসে ফিরলো ছায়ানটের ‘দেশগান’

Byনিজস্ব প্রতিবেদক

মহামারীর দুঃসময় পেছনে ফেলে বিজয় দিবসে উন্মুক্ত প্রান্তরে আবারও সম্মিলিত কণ্ঠে ‘দেশগান’ গাইলো ছায়ানট।

শুক্রবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে জাতীয় সংগীত ও পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।

মিলিত কণ্ঠে দেশের গান গাইতে আসা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল বিশ্ববিদ্যালয় মাঠের দোয়েল চত্বর সংলগ্ন সুইমিংপুলের গেইট।

সকলে মিলে নৃত্যশৈলীর সঙ্গে মুক্তকণ্ঠে ‘দেশগান’ গাওয়ার এবং ‘দেশকথা শোনার-বলার’ গোটা আয়োজনকে জাতীয় পতাকার রঙ দিয়ে সজ্জিত করা হয় এ আয়োজন।

সাংস্কৃতিক জাগরণের সঙ্গে মানবিক বোধসঞ্চারের লক্ষ্যে এই মিলনানুষ্ঠান শুরু হয় ২০১৫ সালের এই দিনে। বিজয়ের দিনে ভেদাভেদ দূরে ঠেলে জাতীয় পতাকার সবুজে দেহ ও মন রাঙিয়ে সর্বান্তকরণে ষোল আনা বাঙালি হয়ে ওঠার ব্রত নিতে সবাইকে আহ্বান জানায় ছায়ানট।

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ২০২০ সালে এ আয়োজনে ছেদ পড়ে। আর ২০২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানের কারণে এ আয়োজন করতে পারেনি ছায়ানট।

নৃত্যশৈলীর সঙ্গে মুক্তকণ্ঠে ‘দেশগান’ গাওয়ার এবং ‘দেশকথা শোনার-বলার’ গোটা আয়োজনকে জাতীয় পতাকার রঙ দিয়ে সজ্জিত করা হয় এ আয়োজনে।

বাবার কাঁধে চড়ে শুক্রবার দেশগানে এসেছিল যোহেভ এলভান। প্রথমবার ছায়ানটের এই বিজয় উৎসব দেখতে এসেছে সে। প্রতিটা পরিবেশনা শেষ হলেই সবার সাথে করতালিতে শিল্পীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছে। কাছে গিয়ে কথা বলতেই এলভান জানাল, এত মানুষ একসঙ্গে দেখে তার খুব ভালো লাগছে।

ধানমণ্ডি থেকে আসা এলভানের বাবা মনিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সানিডেইল স্কুলে প্লে ক্লাসে পড়ে এলভান। ছোটবেলা থেকেই ওকে দেশের পতাকা, ঐতিহ্য-সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। এজন্যই ছায়ানটের বিজয় উৎসবে নিয়ে আসা। প্রতিটা পরিবেশনার পর ও যখন হাততালি দিচ্ছে, তখন বুঝেছি ওর খুবই ভালো লাগছে।"

মায়ের সঙ্গে অনুষ্ঠানে এসেছিল নালন্দার শিক্ষার্থী প্রকৃতি। পথে একটু বিলম্ব হওয়ায় অনুষ্ঠানস্থলে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হতে পারেনি। তাই অনুষ্ঠান মঞ্চে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছিল না তাকে। পরে প্রকৃতির মা কাজী নওশাবা আহমেদের অনুরোধে প্রকৃতিসহ আরও কয়েকজনকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়।

অভিনেত্রী নওশাবা বলেন, "পথে একটু দেরি হওয়ায় আমরা বিলম্বে এসেছি। কিন্তু তখনও অনুষ্ঠান শুরু হয়নি। আমার মেয়ে অনুষ্ঠান মঞ্চের পাশে বসবে। সেজন্য বাসা থেকে লাল-সবুজ পোশাক পরে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। এত দূর থেকে এসে যদি প্রবেশ করতে না পারত, তাহলে খুব মন খারাপ করত। স্বেচ্ছাসেবকদের অনুরোধ করলে তারা বাচ্চাদের মঞ্চের কাছে প্রবেশ করতে দেয়।”

অনুষ্ঠানে সম্মেলক গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশিত হয়।

অনুষ্ঠানটি খুবই ভালো লেগেছে জানিয়ে নওশাবা বলেন, "ঢাকা শহরে তো বিজয় দিবসে যত অনুষ্ঠান হয়, তার বেশিরভাগই বড়দের জন্য। ছোটদের নিয়ে তেমন ভাবনা নেই কারও। ছায়ানটের এই আয়োজনটি ব্যতিক্রম। ছোট-বড় সবাই মিলে এখানে দেশপ্রেমের গান গায়। এজন্য ছায়ানটের এই অনুষ্ঠানটি ভীষণ ভালো লাগে।"

বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে ছায়ানটের 'দেশগান' অনুষ্ঠান শুরু হয়৷ ছায়ানট সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসা বলেন, "পাকিস্তান আমলে বাঙালির মনে আত্ম-পরিচয়ে বাঁচবার বিশ্বাস জাগিয়ে তুলতে ১৯৬৭ সালে ছায়ানট বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান শুরু করেছিল। আজ বিশ্ব জুড়ে ধর্ম-বর্ণ-আদর্শ নির্বিশেষে পহেলা বৈশাখ বাঙালির সবচেয়ে বড় প্রাণের উৎসব।

"সেই সাংস্কৃতিক জাগরণের সঙ্গে মানবিক বোধসঞ্চারের লক্ষ্যে ‘সকলে মিলে দেশ-গান গাইবার, দেশ-কথা বলবার’ এই মিলনানুষ্ঠান শুরু হয় ২০১৫ সালে।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ ও বাঙালির পূর্ণাঙ্গ বিজয়ক্ষণকে স্মরণ করে সম্মিলিত কণ্ঠে আবারও জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে ৪টা ৩১ মিনিটে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

SCROLL FOR NEXT