তারা বলছেন, প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ফ্রেশ ফিড প্রচারে দুই বছরের মতো সময় লাগতে পারে। দেশজুড়ে এটি ছড়িয়ে দিতে লাগতে পারে বছর পাঁচেকেরও বেশি সময়; তবে তা নির্ভর করছে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের উপর।
গত এপ্রিলে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে দুই কেবল অপারেটর ও পরিবেশক প্রতিষ্ঠান যাদু মিডিয়া ভিশন ও নেশনওয়াইড মিডিয়া লিমিটেডকে বিজ্ঞাপন ছেঁটে বিদেশি টিভি চ্যানেল সম্প্রচারের নোটিস দেওয়া পর দেশে জি নেটওয়ার্কের পাঁচটি চ্যানেলের সম্প্রচার ২৪ ঘণ্টা বন্ধ ছিল।
কেবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) নেতারা পরে জানান, বিজ্ঞাপন ছেঁটে বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচারের প্রযুক্তি না থাকায় বাধ্য হয়ে চ্যানেলগুলো বন্ধ রাখতে হয়েছিল তাদের।
এই পরিস্থিতির সুরাহার জন্য তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের কাছ থেকে সময় চেয়ে নেন কেবল অপারেটর ও পরিবেশকরা।
শুক্রবার একটি অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী বলেন, জুলাইয়ের পর বিদেশি বিজ্ঞাপন ছাড়া অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে হবে কেবল অপারেটরদের।
নেশনওয়াইড মিডিয়া লিমিটেডের কর্ণধার আফসার খায়ের মিঠু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জুলাইয়ের মধ্যে ফ্রেশ ফিড সম্প্রচার তাদের পক্ষে সম্ভবপর হচ্ছে না।
“পুরো বাংলাদেশ ডিজিটাল করা না হলে বেশ কষ্ট হবে এটি বাস্তবায়ন করতে হবে। আপাতত কোনো উপায় নেই। প্রযুক্তিগতভাবে না উন্নয়ন ঘটলে আমাদের আরও সময় লাগবে।”
তিনি বলেন, “ঢাকা ও চট্টগ্রামে এটি চালু করতে মোটামুটি দুই বছরের মতো লাগতে পারে। আমাদের তেমনই একটা সময় বেঁধে দেওয়া উচিত হবে সরকারের। আর পুরো দেশে এটি চালুর জন্য সরকার আমাদের পাঁচ বছর সময় দিতে পারে। তবে এই সময়ে ডিজিটালাইজেশন নিশ্চিত করতে হবে।”
বেঙ্গল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান নেশনওয়াইড মিডিয়া ১৯৯৮ সাল থেকে পরিবেশক হিসেবে ব্যবসা চালিয়ে আসছে। জি নেটওয়ার্ক, সনি, স্টার স্পোর্টসের বাংলাদেশে একমাত্র পরিবেশক তারা।
আরেক পরিবেশক প্রতিষ্ঠান জাদু ভিশন স্টার জলসাসহ অন্যান্য চ্যানেলগুলো বাংলাদেশে পরিবেশন করে। যাদু ভিশনের মালিকানা ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রয়াত আনিসুল হকের ছেলে নাভিদুল হকের।
প্রযুক্তির কারণেই ব্রডকাস্টিং প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে ‘ক্লিন ফিড’ দিতে পারছে না বলে জানান আফসার।
তিনি বলেন, পর্যাপ্ত প্রযুক্তিগত সুবিধা পেলে গ্রাহকদের ঘরে সেটআপ বক্স বসিয়ে যে সিগন্যাল পাওয়া যাবে তার মাধ্যমে বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন বন্ধ করা যেতে পারে।
“এই কায়দায় বিজ্ঞাপন কেটে সেই সময়ে কিছু না কিছু সম্প্রচার করতে হবে। কারণ জায়গাটা তো খালি হয়ে যাবে। সেখানে অনুষ্ঠানের প্রমো দেওয়া যেতে পারে কিংবা সরকারি কোনো বিজ্ঞাপনও দেওয়া যেতে পারে। তবে এভাবে ঘরে ঘরে সেটআপ বক্স বসিয়ে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক দুরূহ।”
যুক্তরাজ্য, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সম্প্রচারের আগে সেসব দেশের পরিবেশকরা বিদেশি চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন ছেঁটে শুধু অনুষ্ঠান প্রচার করছে।
আফসার বলেন, “ওরা একটি চ্যানেলে সব কনটেন্ট কিনে নেয়। পরে সেখানে নিজেদের মতো করে স্থানীয় বিজ্ঞাপন ঢুকিয়ে দেয়। সিঙ্গাপুরে এইচবিওসহ বাকি চ্যানেল এভাবেই চলছে। অনেকে সেই কনটেন্টগুলো ডাবিং করেও সম্প্রচার করে।
“ইন্ডিয়া কিংবা অন্য দেশেও এভাবেই চলে। স্টার প্লাস, সনি বিদেশি চ্যানেল। ওরা শতভাগ মালিকানা নিয়ে ভারতে চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করছে।”
বিদেশের চ্যানেলের কনটেন্ট কিনে বাংলাদেশে সম্প্রচারের মতো বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে না পাওয়ায় সেটআপ বক্সের সহায়তা নিয়েই বিজ্ঞাপন ছেঁটে ফেলতে হবে বলে মনে করেন আফসার।
সেক্ষেত্রে ২০০৬ সালে পাস হওয়া ‘কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন’র একটু পরিবর্তন চেয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিবেশক প্রতিষ্ঠান, অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো), বিটিভির কারিগরি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে বিষয়টির সমাধান চান তিনি।
“বিদেশি চ্যানেল বিজ্ঞাপন প্রচারে আমাদের কোনো লাভ নেই। এর জন্য যদি কারও কোনো ক্ষতি হয় তাহলে আমরা তো বিপক্ষেই থাকব। কিন্তু এর জন্য আমাদের সময়ের প্রয়োজন। কারণ ব্রডকাস্টাররা বলবে এক কথা, কেবল অপারেটররা বলবে আরেক কথা। সবার সমন্বয় দরকার।”