পরিবেশ সচেতন নানা পদক্ষেপের মধ্যে অনেক দেশই আজকাল বিশ্ব উষ্ণায়ন কমাতে কম কার্বন নির্গমণের জন্য বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের দিকে মনোনিবেশ করেছে।
এতে কিছু উপকার হলেও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিরামিষাশী হওয়ার মধ্য দিয়ে অত্যন্ত কার্যকর ভাবে বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধ করা যেতে পারে।
সাম্প্রতিক এক জাতিসংঘ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কু-প্রভাব মোকাবেলায় নিরামিষ খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গোটা বিশ্বে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য গবাদি পশুপালন অনেকটাই দায়ী৷পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর কারণগুলোর মধ্যে এটি একটি।
খামারে যে পশুপালন করা হয় সেই পশুদের জন্য খাবার হিসাবে বিপুল পরিমাণ শস্যকণা এবং পানির ব্যবহার থেকে শুরু করে পশু হত্যা এবং তাদের মাংস বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ, প্রক্রিয়াজাত করা পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপই জ্বালানি-নিবিড় হওয়ায় তাপরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
পশুর জন্য চারণভূমির তৈরির জন্য বন পোড়ানোয় প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাস কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমণ বেড়ে যায়।খামারের পশুদের জন্য শস্য উৎপাদন করতে একরের পর একর বন পোড়ানোর কারণে গাছে সঞ্চিত বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়ে পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ে। তাছাড়া, পশুর বিষ্ঠা থেকেও বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমণ ঘটে।
২০০৬ সালের এক জাতিসংঘ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৮ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণ ঘটে মাংস ভক্ষণের কারণে। আর ২০০৯ সালে ওয়ার্ল্ড ওয়াচ ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ হার প্রায় ৫০ শতাংশ।
কিন্তু বিশ্বে বিশেষ করে উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তির দেশগুলোতে মাংস খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে৷ অথচ পরিবেশের জন্য এর পরিণাম ভয়াবহ৷
তারপরও বিশ্বব্যাপী মাংসই মানুষের পছন্দের খাবার হওয়ার কারণে এখন এর বিকল্প তৈরির কথা ভাবছে অনেকেই।ইইউ এর ‘লাইকমিট’ প্রকল্পের গবেষকরা পশু না মেরে মাংস তৈরি অর্থাৎ, নিরামিষ মাংস তৈরির একটি উপায় বের করেছেন।
পানি এবং উদ্ভিদের প্রোটিন মিশিয়ে সেই মিশ্রণ ফুটিয়ে এবং পরে ঠান্ডা করে এক ধরনের আঁশযুক্ত জিনিস তৈরি করা যায় যেটি অনেকটা মাংসের মতোই, বলছেন গবেষকরা।
এই নিরামিষ মাংস তৈরিতে উপকরণ হিসাবে আরো ব্যবহার করা যেতে পারে ভুট্টা, মটরশুটি, সয়াবিন, আটা প্রভৃতি।
কিন্তু গুণমান এবং স্বাদের দিক থেকে বিকল্প এ মাংস এখনো মানুষের মন জয় করার মতো হয়ে ওঠেনি।তবে ভবিষ্যতে ভালো মানের বিকল্প মাংস তৈরি করতে পারলে বিপুল সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে বলেই মনে করছেন গবেষকরা৷