অর্থনীতি

পিপলস লিজিং: আমানতকারীদের আশ্বস্ত করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

Byনিজস্ব প্রতিবেদক

বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনায় চরম সংকটে থাকা ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (পিএলএফএসএল) অবসায়নের (লিকুইডেশন) সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে এক্ষেত্রে আমানতকারীদের কোনো সমস্যা হবে না। তারা তাদের টাকা ফেরত পাবেন। কারণ পিপলস লিজিংয়ের আমানতের চেয়ে সম্পদের পরিমাণ বেশি আছে।

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ আলম।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, ২০১৪ সালে তদন্ত করে পিপলস লিজিংয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য জানতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তদন্তে পরিচালনা বোর্ডের অনেক সদস্যের অনিয়ম পাওয়া যায়। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠি দিয়ে পরিচালনা বোর্ড ভেঙে নতুন বোর্ড গঠন করে। একই সঙ্গে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

“কিন্তু এতো কিছুর পরও প্রতিষ্ঠানটির উন্নতি করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষায় প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নের জন্য আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেই। ২৬ জুন মন্ত্রণালয় অবসায়ন করতে অনুমতি দেয়। পরে অবসায়নের জন্য আদালতে যাওয়ার উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।”

‘অবসায়ন হলেও আমানতকারীদের আতঙ্কের কিছু নেই’ উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, “আমাদের কাছে যে হিসাব রয়েছে তাতে প্রতিষ্ঠানটির আমানতের তুলনায় সম্পদের পরিমাণ বেশি রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমানে আমানত দুই হাজার ৩৬ কোটি টাকা। এর বিপরীতে সম্পদ রয়েছে তিন হাজার ২৩৯ কোটি টাকা।”

আমানতকারীরা কতদিনের মধ্যে তাদের টাকা ফেরত পাবেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে সিরাজুল ইসলাম বলেন, “মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দ্রুত আমরা এ কার্যক্রম সম্পন্ন করব। তবে যেহেতু আমরা আদালতে যাচ্ছি, এটা এখন আদালতের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা আমানতকারীদের অর্থ যত দ্রুত সম্ভব দেয়ার চেষ্টা করব।”

আমানতকারীদের শতভাগ অর্থ ফেরত দেয়া হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটাও সিদ্ধান্ত নেবেন আদালত।”

১৯৯৭ সালে কার্যক্রম শুরু করা এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় মতিঝিলে। এছাড়া গুলশান ও চট্টগ্রামে দুটি শাখা রয়েছে। পিপলস লিজিংয়ে এক হাজার ১৩১ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ৭৪৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৬৬ দশমিক ১৪ শতাংশ।

ধারাবাহিক লোকসানের কারণে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এ প্রতিষ্ঠানটি ২০১৪ সালের পর থেকে কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি।

তাদের মোট শেয়ারের ৬৭ দশমিক ৮৪ শতাংশই রয়েছে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে স্পন্সর ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে ২৩ দশমিক ২১ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিংয়ের শেয়ারের দাম একেবারে তলানিতে নেমে এসেছে। বুধবার এই শেয়ারটি ৩ টাকা ৩০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। ছয় মাস আগে এর দর ছিল ৭ টাকা।

আইনে যা আছে

আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনের ২২ ধারা অনুযায়ী কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের স্বার্থের পরিপন্থি কাজে নিয়োজিত হলে ও আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়লে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসায়নের জন্য হাই কোর্ট বিভাগে আবেদন করতে পারবে।

২৯ ধারা অনুযায়ী হাই কোর্ট বিভাগ বাংলাদেশ ব্যাংকের আবেদনের ভিত্তিতে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসায়নের জন্য আদেশ প্রদান করতে পারবে।

এদিকে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি) নীতিমালা অনুযায়ী আদালতের মাধ্যমে অবসায়ন হলে সরকারি গেজেটে আদালতের আদেশের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। আদালত এক বা একাধিক ব্যক্তিকে অবসায়ন প্রক্রিয়ার জন্য অবসায়ক (লিকুইডেটর) নিয়োগ দিতে পারেন।

SCROLL FOR NEXT