ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোকে ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রধান নির্বাহী জনি গ্রেভ নিশ্চিত করেছেন, গত জুনেই স্যামুয়েলস বোর্ডকে জানিয়ে দিয়েছেন পেশাদার ক্রিকেট থেকে বিদায়ের কথা।
নানা আলোচনা-সমালোচনা, চড়াই-উতরাইয়ে ভরপুর এক বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের সমাপ্তি হলো এতে। ক্যারিয়ারের বড় অংশ জুড়ে ছিল সহজাত প্রতিভার স্পূরণ ও বিতর্ক। পেছন ফিরে তাকিয়ে, সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অধ্যায় অবশ্যই দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ম্যাচ অব দা ম্যাচ হওয়া।
২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে স্যামুয়েলস শুরু করেছিলেন ভীষণ মন্থরতায়। ১০ ওভার শেষে তার রান ছিল ৩২ বলে ২০, দলের রান ২ উইকেটে ৩২। পরের ১০ ওভারে বিস্ময়কর পাল্টা আক্রমণে তিনি পাল্টে দেন ম্যাচের মোড়। বিশেষ করে, টি-টোয়েন্টির সেই সময়ের ভয়ঙ্কর বোলার লাসিথ মালিঙ্গার ওপর ঝড় বইয়ে দিয়ে শেষ পর্যন্ত খেলেন ৫৬ বলে ৭৮ রানের ইনিংস। নিজের ৬ ছক্কার ৫টিই সেদিন মালিঙ্গার বলে মেরেছিলেন স্যামুয়েলস। পরে বল হাতে ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রানে ১ উইকেট নিয়ে শিরোপা এনে দেন দলকে।
চার বছর পর আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে কলকাতায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন ৬৬ বলে ৮৫ রানের ইনিংস। সেদিন শেষ ওভারে কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের চার ছক্কা অনেকের চোখে লেগে আছে, তবে জয়ের মূল নায়ক হয়ে ম্যাচ সেরা ছিলেন স্যাময়েলসই। দুটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে ম্যান অব দা ম্যাচ হওয়ার কৃতিত্ব নেই আর কারও।
২০১৫ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ক্রিস গেইলের সঙ্গে তার ৩৭২ রানের জুটি ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড।
অমিত সম্ভাবনাময় একজন হিসেবে ২০০০ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন স্যামুয়েলস। ২০০২ সালে ভারত সফরে কলকাতা টেস্টে দারুণ সেঞ্চুরির পর ওয়ানডে সিরিজে উপহার দেন ৭৩ বলের সেঞ্চুরি।
নিজের দিনে ব্যাট হাতে তিনি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। তবে ধারাবাহিকতার অভাবেই দলে আসা-যাওয়া করতে হয়েছে অনেকবার। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার পরও বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন নানা সময়ে।
২০১৪ সালে পারিশ্রমিক সংক্রান্ত জটিলতায় ভারত সফর অসমাপ্ত রেখেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ফিরে আসার সময় স্যামুয়েলস প্রকাশ্যেই বিরোধিতা করেছিলেন তখনকার অধিনায়ক ডোয়াইন ব্রাভোর। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালের পর একাই সংবাদ সম্মেলনে এসে টেবিলের ওপর দুই পা তুলে কথা বলেন সংবাদকর্মীদের সঙ্গে।
এছাড়াও বিগ ব্যাশে শেন ওয়ার্নের দিকে ব্যাট ছুঁড়ে মারা, ওয়ার্নের সঙ্গে পরেও নানা বিতর্ক, বেন স্টোকসের সঙ্গে লড়াই এবং আরও নানা বিতর্কে স্যামুয়েলস আলোচনায় ছিলেন নিত্যই।
বিতর্কের কারণেই হয়তো পূর্ণতা পায়নি তার সম্ভাবনার। ৭১ টেস্টের ক্যারিয়ারে ৩২.৬৪ গড়ে ৩ হাজার ৯১৭ রান করেছেন তিনি। সেঞ্চুরি ৭টি, ৫টিই দেশের বাইরে। সর্বোচ্চ ২৬০ বাংলাদেশের বিপক্ষে খুলনায়।
ওয়ানডেতে ২০৭ ম্যাচে ৫ হাজার ৬০৬ রান করেছেন ৩২.৯৭ গড়ে। সেঞ্চুরি ১০টি, ৭টিই দেশের বাইরে। হাফ সেঞ্চুরি ৩০টি। টি-টায়েন্টিতে ৬৭ ম্যাচে ২৯.২৯ গড়ে রান ১ হাজার ৬১১।
বল হাতে তিনি ছিলেন দারুণ কার্যকর। অফ স্পিনে টেস্টে উইকেট ৪১টি, ওয়ানডেতে ৮৯টি, টি-টোয়েন্টি ২২টি। বোলিং অ্যাকশন নিয়ে অবশ্য তাকে ভুগতে হয়েছে অনেক।
ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও একটা সময় স্যামুয়েলস ছিলেন বেশ কাঙ্ক্ষিত একজন। খেলেছেন আইপিএল, বিপিএল, বিগ ব্যাশ, টি-টোয়েন্টি ব্লাস্ট, এসএলপিএল, সিপিএল, পিএসএলে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ওই বাংলাদেশ সফরের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে জায়গা হারান তিনি। এরপর অনেকটা আড়ালেই ছিলেন। অবসরেও গেলেন নিভৃতেই।