বাণিজ্য

উড়োজাহাজ লিজে বিমানের ক্ষতি ‘৩০৫ কোটি’

Byনিজস্ব প্রতিবেদক

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির তদন্তে বলা হয়েছে, ওই উড়োজাহাজ লিজ নেওয়া এবং মেরামত করানোর ক্ষেত্রে ‘চরম অবহেলা ও অনিয়ম’ ঘটেছে। বিমান মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে ‘চরম উদাসীনতা’ দেখিয়েছে।

উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার পর থেকে ইঞ্জিন বিকল হওয়া, আবার ভাড়ায় আনা, সেগুলোর মেরামত এবং উড়োজাহাজের ভাড়াসহ আনুসঙ্গিক কাজে ৩০০ কোটির বেশি টাকা ক্ষতি হয় বলে স্থায়ী কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার কমিটির বৈঠকের পর এর সভাপতি ফারুক খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিমান টাকা ও সুনামের দিক থেকে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কেন লিজ নিয়েছিল, পরিচালনা পর্ষদ কী বিবেচনা করে লিজ নিয়েছে সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

“পরে ইঞ্জিন মেরামত করতে দিয়েছে-এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটি খুব একটা খুশি হতে পারেনি। এখানে চরম অবহেলা ও অনিয়ম ঘটেছে।”

মন্ত্রণালয়কেও কমিটি করে এ বিষয়ে তদন্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে সাবেক এই বিমানমন্ত্রী বলেন, “কাদের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা সুনির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করবে তারা। আগামী অগাস্ট মাসে এর প্রতিবেদন দেবে।”

বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে থাকা ১৩টি উড়োজোহাজের মধ্যে সাতটি লিজে আনা।

এগুলোর মধ্যে ইজিপ্ট এয়ার থেকে ভাড়ায় আনা উড়োজাহাজ দুটির কারণে বিমানের ক্ষতির মুখে পড়া নিয়ে সম্প্রতি একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।  

প্রতিবেদনে বলা হয়, পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে দুটি উড়োজাহাজ লিজ নেয় বিমান। এর একটি বিমানের বহরে যুক্ত হয় ২০১৪ সালের মার্চে এবং অন্যটি একই বছরের মে মাসে।
ওই দুটি উড়োজাহাজের যে কোনো একটি কোন না কোনো সময় বিকল হয়ে বসে থাকে।

এক বছর ফ্লাইট পরিচালনার পর একটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয় বাকি ইঞ্জিনটিও। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে আবারও ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। গত ডিসেম্বরে নষ্ট হয়ে যায় ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও।

পরে ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। তবে কোন সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। সে কারণে লিজ নেওয়া প্রতিষ্ঠান ও মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান উভয়কেই অর্থ দিতে হচ্ছে বিমানকে।

এই ঘটনা সংবাদমাধ্যমে আসার পর গত মাসে সংসদীয় কমিটির সদস্য কামরুল আশরাফ খানের নেতৃত্বে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে বৃহস্পতিবার বসে স্থায়ী কমিটি।

তদন্ত কমিটির সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদনে বলা হয়, “উড়োজাহাজ দুটি লিজ আনার চুক্তির সমস্ত শর্তই ছিল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে, যার ফলে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বিমানের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।”

সংসদীয় কমিটি বলছে, রাষ্ট্রীয় বিমান পরিবহন সংস্থাটি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৭৫ কোটি টাকা লাভ করলেও এই দুটি উড়োজাহাজের ক্ষতিতে ওই সাফল্য নষ্ট হচ্ছে।

ফারুক খান বলেন, “এয়ারক্রাফট দুটির চুক্তি করার সময় কারিগরি কমিটির কাজ নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। কমিটি ভেবেছিল, প্লেন ভালো ছিল। কিন্তু আসার পর দেখা গেল একটা একটা করে ইঞ্জিন নষ্ট হচ্ছে।”

উড়োজাহাজ দুটি লিজ নেওয়ার সময় ইঞ্জিনের সক্ষমতা যাচাইয়ে ব্যর্থতা এবং ‘অপ্রচলিত ব্যয়বহুল এই লিজ’ বিমানের স্বার্থবিরোধী বলে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়। এখন উড়োজাহাজ দুটি ফেরত দেওয়ার সুপারিশ করেছে তারা।

এই প্রেক্ষাপটে স্থায়ী কমিটি বলছে, “বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হলেও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তদারকি করা উচিত ছিল। কিন্তু এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের কোনো দায়িত্ব দেখা যায়নি। মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ‘চরম উদাসীনতা’ দেখিয়েছে।”

ফারুক খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী, কামরুল আশরাফ খান, মো. আফতাব উদ্দিন সরকার, রওশন আরা মান্নান, সাবিহা নাহার বেগম উপস্থিত ছিলেন।

SCROLL FOR NEXT