নাগরিক সংবাদ

মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনা!

Byশরফ উদ্দিন আহমদ

সড়ক দূর্ঘটনা আমাদের দেশে নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনই কোন-না-কোন সড়ক-মহাসড়কে সড়ক দূর্ঘটনায় মানুষ হতাহত হচ্ছেন। সম্পদেরও ক্ষতি হচ্ছে। কোন কোন খবরের কাগজ তাদের পরিসংখ্যানে সড়ক দূর্ঘটনার কারণে দেশের হাজার কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে। আসলে এটা বাস্তবিক। সড়ক দূর্ঘটনার কারণে একেকটা পরিবার নি:স্ব হয়ে যাচ্ছে। থমকে যাচ্ছে স্বাভাবিক জীবনের গতি। অথচ একটু সচেতন হলেই আমরা সড়ক দুর্ঘটনাগুলো রোধ করতে পারতাম। অসংখ্য মানুষকে অস্বাভাবিক মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারতাম। দেশের হাজার কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা করতে পারতাম।

গত দুই-তিন পূর্বে আমি ঢাকা থেকে সিলেটে মাইক্রোবাসযোগে আসলাম। নিজের জরুরি কাজ শেষ করতে একটু বিলম্ব হওয়ায় সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে একটু রাত হয়ে গেল। আমি আগেই জানতাম রাতের ভ্রমণ একটু ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও বাড়ি ফেরার তাগাদায় একটু ঝুঁকি নিয়েই রওয়ানা দিয়ে দিলাম। সিলেটে ফেরার পথে নূতন নূতন অভিজ্ঞতা হলো।

অধিকাংশ সড়ক দূর্ঘটনা চালকদের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের কারণে ঘটে থাকে এটা আমরা সকলেই জানি। এছাড়া, অপরিকল্পিতভাবে সড়ক-মহাসড়কগুলো নির্মাণ, সড়কের পাশে যেখানে-সেখানে হাট-বাজার-শপিংমল গড়ে উঠা, সড়কের বাঁক ইত্যাদি কারণেও সড়ক দুর্ঘটনাগুলো ঘটে থাকে।

সিলেটে ফেরার পথে বিভিন্ন জায়গায় সড়কের পাশে বা কোন খাদের কিনারে গাড়ী উল্টে থাকতে দেখলাম। কোন কোন জায়গায় রক্তের ছোপও দেখতে পাওয়া গেল। এগুলো কোন-না-কোন দূর্ঘটনার কারণে হয়েছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

ওভারটেকিং করার ফলে কিংবা পেছন থেকে কোন গাড়ী এসে ধাক্কা দেয়ার ফলে কিংবা গাড়ীর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কিংবা ওভার লোডিং এর কারণে কিংবা সামনের কোন কিছুকে বাঁচাতে গিয়ে কিংবা বিপরীতমুখী কোন গাড়ীর সাথে মুখোমুখি সংর্ঘষের কারণে দুর্ঘটনাগুলো ঘটে থাকতে পারে। তবে বিভিন্ন সময়ের সড়ক দুর্ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে আমি যেটা দেখতে পেলাম সেটা হচ্ছে অধিকাংশ সড়ক দূর্ঘটনাই মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটে থাকে। যেগুলো হয় খুবই মর্মান্তিক। আর এই মুখোমুখি মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা বেশী থাকে।

আমি যে গাড়ীতে করে সিলেট ফিরছিলাম সেটির সাথেও কয়েকবার বিপরীতমূখী গাড়ীর সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটতে যাচ্ছিল। সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় হয়তো আমাদের গাড়ীর সাথে কোন সংঘর্ষ ঘটে নি। কিন্তু ঘটতে কতক্ষণ? সেদিন হয়তো আমরা শেষ রক্ষা পেলাম। কিন্তু সবাই কি শেষ রক্ষা পাচ্ছে?

এই মুখোমুখি সংঘর্ষগুলো ঘটে একটি গাড়ীকে ওভারটেকিং করতে গিয়ে অন্য গাড়ীর পথ রুদ্ধ করে দেয়ার ফলে। এতে যে ওভারটেকিং করলো তার দোষেই বিপরীতমূখী অন্য গাড়ীসহ উভয় গাড়ীর যাত্রীদের প্রাণহানি ঘটে। চালকদের দায়িত্বশীল করে গড়ে তুলতে পারলেই এ ধরণের মুখোমুখি সংঘর্ষগুলো রোধ করা সম্ভব বলে আমরা মনে করি। আবার সড়ক-মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করেও মুখোমুখি সংঘর্ষগুলো রোধ করা সম্ভব। আমার মতে সড়ক-মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করে দিলে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনা অনেকাংশে কমিয়ে আনা যাবে। আমি জানি, রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে প্রচুর টাকার প্রয়োজন। কিন্তু একবার রোড ডিভাইডার নির্মাণ করে দিতে পারলে প্রতি বছর প্রচুর টাকার সম্পদ রক্ষা করা যেত । আর মানুষকে অস্বাভাবিক প্রাণহানি থেকেও রক্ষা করা যেত।

আমরা প্রতিনিয়ত মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় হতাহতের খবর শুনতে চাই না। গাড়ীর চালকদের ঠিক করার পাশাপাশি সড়কেরও সংস্কার জরুরি। সুতরাং মাননীয় যোগাযোগ মন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন- ব্যস্ততম সড়ক-মহাসড়কে অতি শীঘ্র রোড ডিভাইডার স্থাপনের ব্যবস্থা করুন। প্রফেসর মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার তার একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন- এ দেশের মানুষের প্রতি সৃষ্টিকর্তার এক ধরণের মায়া আছে বলে হয়তো সড়ক দূর্ঘটনায় যে পরিমাণ ক্ষতি হওয়ার কথা সে পরিমাণে ক্ষতি হচ্ছে না। আসলেই আমরা সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় আরো বড় বড় দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছি। না হলে আমাদের দেশের চালক এবং সড়কের যেই দুরঅবস্থা, তাতে আরো অনেক বেশী দূর্ঘটনা ঘটতে পারত। তিনি আরেকটি লেখায় বলেছিলেন- সড়কে দূর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড চলছে। আসলেই তো সড়কে দূর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড চলছে। এ হত্যাকাণ্ডগুলো বন্ধ করতে হবে।

আমরা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সড়ক দূর্ঘটনা রোধ করতে পারি। তবে এক্ষেত্রে সরকারকেই আগে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আর জনগণেরও আরো বেশী সচেতন হতে হবে।

SCROLL FOR NEXT