নাগরিক সংবাদ

সাপ খেলা যাদের পেশা

Byআ.ন.ম আফজাল হোসেন
সাপুড়ে আসমা
সাপুড়ে আসমা

নাম আসমা। বয়স ২৮-৩০ বছর। গলায় একটি বড় বিষধর গোখরো। দোকানে কেনা কাটার ফাকে পাশেই দেখি এই মেয়েটি। ওর দিকে দৃষ্টি পড়তেই হাত পাতে। আমার গোখরোর জন্য কয়েকটা টাকা দেন। ওকে দুধ কিনে খাওয়াবো। গোখরোর চেয়ে আসমার পেটের খিদে যে আরো বেশী, তা সামান্যতেই বুঝা যায়। বাড়ি কোথায় জিজ্ঞাস করতেই উত্তর দিলো, নাটোরের শিংড়া। বাপ দাদা থেকে আমরা এই পেশা করি। আমার এক মেয়ে আছে। ওকে ওর দাদির কাছে রেখে এসেছি। নাম লতা, সে স্কুলে যায়। আমি চাই না আমার ছেলে-মেয়েরা এই কাজ করুক। কেন চান না? জিজ্ঞেস করলে আসমা বলে, 'আমার বাবা সাপের খেলা দেখাতে গিয়ে আমার সামনেই মারা যায়। তখন আমার বয়স ১২ বছর।' তাই আমি চাই না আমার ছেলে-মেয়ে জীবন নিয়ে খেলুক। তাহলে আপনি কেন এটা করছেন? আসমা বলে পেটের তাগিদে। মানুষকে সাপ দেখায় কেউ ভয়ে টাকা দেয়, কেউ আমাদের কষ্ঠ দেখে কেউবা দেয় আনন্দে। এছাড়াও তো আরো পেশা ছিল? আসমা বলে, বাপ-দাদার পেশা এটাই সহজ মনে হয়েছে। আপনার স্বামী কি করেন? জবাবে আসমা বলে, নতুন নতুন সাপ ধরে আনে আর আমি খেলা দেখায়। আমি বললাম সাপের খেলা না দেখায়ে পাসের চাষ করলে হয় না? এই ধরুন সাপের খামার। হতবাক আসমা। সাপের চাষ? কি বলেন স্যার। সাপের চাষ হয় নাকি? আর চাষ করলেও এ গুলো কে কিনবে? তার মানে সাপের চাষ বা খামারের ধারনা তার কাছে একেবারেই নতুন। সাপের খামার নিয়ে তার সাথে অনেক আলাম করলাম সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল। কেউ যদি আমাকে একটি সাপের খামার গড়াতে সাহায্য করত। তাহলে স্বামী সন্তান নিয়ে এক জায়গায় থাকতে পারতাম, বলে দু'চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে আসল আসমার।
হয়তো মনে পড়েছে তার কচি মেয়ের মুখ। যাকে কোল থেকে নেমে দিয়ে জীবিকার তাগিদে এতদূর এসে ছেড়া পলিথিনের নীচে কোন এক উচু রাস্তার কিনারায় যার রাত কাটাতে হয়!

সত্যি আসমার সাথে আজ দুপুরে আমার দেখা হয়। তার এই দু:খের সাথে সহমত প্রকাশ করে আমি বলতে চাই, আমরা কত কিছুই না করছি। এই ধরুন রিক্সা ওয়ালার হাসপাতাল, কোটি টাকার হার্ট চিকিত্সা। আমরা কি আসমাদের জন্য কিছু করতে পারিনা। ওদের সাপের চাষ, সাপের খামারের জন্য কিছু প্রশিক্ষণ কিছু আর্থিক সাহায্য। আসমাদের স্বামী সন্তান নিয়ে বেচে থাকার একটা অবলম্বন।

SCROLL FOR NEXT