অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল এই স্বর্গরাজ্যে যাবার। হঠাৎ করে মন মতো ছুটি আর চমৎকার একটি ট্রাভেল গ্রুপ 'চল ঘুরি বাংলাদেশ' এর একদিনের ভ্রমণে বেরিয়ে পড়লাম। এবারের ঘোর বর্ষায় ১৩.০৮.২০১৭ তারিখে ৫০ জনের দল বিছাকান্দির উদ্দেশে রওনা দিলাম। বর্ষার কারনে ভ্রমন সম্পন্ন করাটা অনেক কঠিন ছিল। ১৪.০৮.২০১৭ তারিখ জাফলং পৌঁছালাম।
ছবি: অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা পাংথুমাই গ্রাম
জাফলংয়ের সৌন্দর্য্যে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে সেখানকার আদিবাসীদের জীবনধারা। ধলাই ও পিয়াইনের স্বচ্ছ জলে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় নানা জাতের ছোট মাছ। দুই নদীর পানির নিচ থেকে ডুব দিয়ে হাজার হাজার শ্রমিকের পাথর উত্তোলনের দৃশ্যও মুগ্ধ করে পর্যটকদের। নদীর পানিতে নারী-পুরুষের এই 'ডুবোখেলা' দেখা যায় ভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি। সীমান্তের ওপারে ডাউকি নদীর উপরে দুই পাহাড়ের মধ্যখানে ঝুলন্ত সেতু বাড়িয়ে তুলেছে জাফলংয়ের সৌন্দর্য। পাহাড়, পানি, পান, পাথর, ঝর্ণা সবমিলিয়ে জাফলং যেনো এক রূপকথার রাজ্য। নৌকা করে রওনা দিলাম সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্নার (এলাকার লোকরা বলে মায়াবী ঝর্না) দিকে। দূর থেকে দেখা যায় মেঘে ঢাকা মেঘালয় পাহাড়। পাহাড়ের মধ্যে দূর থেকে দেখা যায় মায়াবতী ঝর্না। দেখে মনে হয় ভ্যানগগ এর আঁকা কোন শিল্পকর্ম।
ছবি: সৌন্দর্যের রানী পাংথুমাই ঝর্ণা
এরপর জাফলং থেকে সংগ্রামপুঞ্জি ঘুরে চলে এলাম লন্ডনী পাড়া। ওখান থেকে ট্রাক্টর চালিত গাড়িতে চলতে থাকলাম পাংথুমাই গ্রামের দিকে। এই গ্রাম টিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম বলা হয়। এক থেকে দেড় ঘন্টা হাটার পর সামনে পড়ল অপূর্ব পাংথুমাই ঝর্না। দুঃখের বিশয় হল কাছ থেকে দেখা গেল না। আসলে ঝর্নাটা ভারত সীমান্তে পড়ার কারণে একেবারে কাছে গিয়ে ঝর্নার রূপ উপভোগ করা যায় না। অজ্ঞতা দূর থেকে দেখেই এর সৌন্দর্যের স্বাদ মিটাতে হল।
ছবি: বিছানাকান্দি যাবার পথে
ছবি: অপরূপ পাহাড় আর মেঘের মিশ্রণ প্রশান্তি বয়ে আনে
হাঁটার রাস্তা পার হয়ে মামার বাজার থেকে দুপুরের খাবার সেরে ফেললাম। সেখান থেকে প্রথমে মোটরবাইক, এরপর ট্রলারে করে রওঅনা দিলাম আর এক স্বর্গরাজ্য বিছানাকান্দির উদ্দেশ্যে। শুকনো মৌসুমে এর আসল সৌন্দর্য চোখে পড়ে না। বর্ষার মৌসুমে জায়গাটা অনেক মায়াবী মনে হয়। কিছুক্ষণ জলপাথরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে এক সময় আপনি হারিয়ে যাবেন মেঘ আর পাহাড়ের রাজ্যে।
ছবি: মায়াবী আর অপরূপ সৌন্দর্যের জায়গা বিছানাকান্দি
ছবি: নৌকাপথে জাফলং ভ্রমণের সময়
দৃষ্টির শেষ সীমানা পর্যন্ত শুধু পাহাড় আর পাহাড়। পাহাড়, মেঘ আর স্বচ্ছ পানি এই তিন মিলিয়ে বিছানাকান্দির এক অপূর্ব রূপ তৈরি হয়, যা যেকোনো মানুষের মনে ফিরিয়ে আনে প্রশান্তি। শহুরে যান্ত্রিকতা কাটাতে প্রকৃতির এই রূপলীলায় নিজের গা ভাসিয়ে দিতে পারেন আর এজন্য আপনাকে আস্তে হবে এই দুটো জায়গাতে।
ছবি: এই সেই মায়াবী সংরাম্পুঞ্জি ঝর্ণা
এক নজরে জাফলং ও বিছানাকান্দির সংখিপ্ত পরিচিতি –
জাফলংঃ বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্তর্গত, একটি এলাকা। জাফলং, সিলেট শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে, ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত, এবং এখানে পাহাড় আর নদীর অপূর্ব সম্মিলন বলে এই এলাকা বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটনস্থল হিসেবে পরিচিত।
বিছানাকান্দিঃ সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় বিস্নাকান্দি।বাংলাদেশের সীমান্তে মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা ঠাণ্ডা পানির প্রবল স্রোত থরে থরে সাজানো পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলে। ঠিক যেন একটি পাথুরে নদী। সিলেট থেকে নগরীর অম্বরখান পয়েন্ট। সেখানে সিএনজি পাওয়া যায়। সিএনজি করে গোয়াইনঘাট হয়ে হাদার বাজার।হাদার বাজার থেকে ট্রলারে বিছানাকান্দি। বিছানাকান্দিতে রয়েছে ছোট-বড় অগণিত পাথরের সমারোহ। চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অজস্র পাথর, দেখে যেন মনে হয় পুরো এলাকাটাই পাথরের বিছানা।