নাগরিক সংবাদ

বিশ্বজিৎ হত্যার রায় ও গরীবের সম্বল

Byসুকান্ত কুমার সাহা

রাষ্ট্র যখন নিজেই অপরাধীদের আশ্রয়স্থল হয় এবং সরকারের উপরের স্তর যখন শুধুই আত্মীয় আর নিজেদের স্বার্থ দেখে, তখন তা চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া সাধারণ মানুষের আর কীইবা করার আছে,? 'বিশ্বজিৎ হত্যা মামলা'র রায় দেখে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, এই রাষ্ট্রের রন্ধে রন্ধে অপরাধীরা বাসা বেঁধেছে, যেমন করে আসবাবপত্রে বাসা বেঁধে থাকে ছারপোকা'রা। গ্রাম বাংলার মানুষ মাত্রই জানেন- এই ছারপোকা একবার ঘরে ঢুকলে তা থেকে মুক্তি পাওয়া এক কথায় অসম্ভব; যতক্ষণ না ঘরে থাকা বিছানা-আসবাবপত্র একযোগে পরিষ্কার করে সেগুলোর উপর বিষ প্রয়োগ করা হচ্ছে! এখন প্রশ্ন হলো- আমাদের প্রিয়দেশের কোনায় কোনায় বাসাবেঁধে জ্যামিতিক হারে বংশবৃদ্ধি করতে থাকা ছারপোকাদের নির্মুল করবে কে? কে করবে এদের উপর বিষ প্রয়োগ? আপাতত আমি কোন আশা দেখছি না, যদিও এদের নির্মূলের পদ্ধতি সবারই কমবেশি জানা আছে? আজ অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে ব্যাংক-বীমা, যেদিকে তাকাই সেদিকেই দেখতে পাই এই রক্তচোষাদের লোলুপ শুড়।

বিশ্বজিৎ যেদিন হত্যার শিকার হয়, সেদিন থেকেই আমি এই ঘটনাটা ফলো করছিলাম। প্রকাশ্য দিবালোকে একেবারে ক্যামেরার সামনে ঘটা এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটা যখন সবার সামনে উম্মোচিত হয়, তখন সেটা দেখে সাধারণ মানুষের মধ্যে বড় ধরণের হাহাকার পড়ে গিয়েছিল। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের অঙ্গসংগঠন- ছাত্রলীগ যে একটা নিরীহ ছেলেকে প্রকাশ্যে এভাবে পিটিয়ে-কুপিয়ে মেরে ফেলতে পারে তা অনেকেরই বিশ্বাস হচ্ছিল না সেদিন। তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার সেই সময়ে এই ঘটনাটিকে 'বিচ্ছিন্ন ঘটনা' বলে চালিয়ে দিয়েছিল। তারা এবলেও জাতির কাছে ভাষণ দিয়েছিল যে, তাদের অংসংঠনের মধ্যে 'শিবিরের ক্যাডার' ঢুঁকে পড়েছে, আর তারাই এটা ঘটিয়েছে!" তারা যে সেদিন মিথ্যা কথা বলেছিল তার প্রমাণ হলো- গতকালের উচ্চাদালতের রায়। এই রায়ে যখন বলা হয়, প্রকাশ্যে এই হত্যার ঘটনা ঘটানো হলেও পুলিশ ও ডাক্তারী রিপোর্টে তা ভিন্নভাবে উল্লেখ করা আছে। অর্থাৎ আদালতে যাওয়া কাগজপত্রে মিথ্যা কথা লিখে দেওয়া হয়েছে, যাতে করে অপরাধীরা শাস্তি না পায়! এথেকে আমরা সাধারণ মানুষ বুঝতে পেড়েছি- মুখে আওয়ামীলীগের নেতারা ও তাদের সাঙ্গাতরা যতই মিষ্টি মিষ্টি কথা বলুক না কেন, আসলে এরা সব চিকনবুদ্ধির মানুষ। মামলা যাতে কেঁচে যায়, এবং তাদের দলের খুনিরা যাতে বেঁচে যায়, তার ব্যবস্থা ওনারা আগেই করে রেখেছিলেন।

সবশেষে, কিছু করতে না পেড়ে আঙ্গুল চুষতে থাকা কোটি জনতার সাথে সাথে আমিও বিশ্বজিতের খুনিদের "তাদের প্রাপ্য সাজা" থেকে এভাবে বাঁচিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ জানালাম। আপনি যদি নিজের আত্মীয়ের খুনে ব্যাথিত হয়ে এখনো কাঁদতে পারেন, 'সাজা কার্যকর করা' দেখতে চাইতে পারেন? ঠিক একইভাবে ক্ষমতাহীন বিশ্বজিতের বাবা-মা'ও আর কিছু না পাড়ুক, অন্তত সৃষ্টিকর্তার কাছে 'আপনাদের করা অন্যায়ের' বিচারের চাইতে পারেন!

কী পারেন কিনা? গরীবের তো ওটাই সম্বল!

আগের লেখাঃ

০৭/০৮/২০১৭

SCROLL FOR NEXT