নাগরিক সংবাদ

লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের শ্রমিক কলোনিতে ভেঙ্গে পড়েছে ব্রিটিশ আমলের টিএন্ডটির তারখাম্বা

Byনিতাই বাবু

ভেঙ্গে পড়া টিএন্ডটি তারখাম্বা।

গত কয়েকদিন ধরে আকাশ ছিলো মেঘলা, বৃষ্টি হবে হবে ভাব। সময়টা এপ্রিলের পহেলা তারিখ হতে শুরু করে ৩ তারিখ। ৩ তারিখ দুপুরবেলা থেকে মনে হচ্ছিল যেন আকাশ ভেঙ্গে প্রলয় শুরু হয়ে যাবে যেকোনো সময়, হয়েছেও তাই। যখন মানুষে সন্ধ্যাবাতি জ্বালিয়ে প্রভুকে সন্তুষ্টি করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল, ঠিক সে সময় ঘটে গেল এক নীরব দুর্ঘটনা। সবার অজান্তে কাউকে না-জানিয়ে প্রচণ্ড বাতাস আর ঝড়বৃষ্টিরর মাধ্যে ধপাস করে পড়ে গেল বহু-প্রাচীন ১৩২ ফুট লম্বা টিএন্ডটির একটি তারখাম্বা। তারখাম্বাটির অবস্থান ছিল নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন গোদনাইল নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের শ্রমিক কর্মচারীদের বাসস্থানের সামনে। তারখাম্বাটি ৩টি বসত ঘরের ওপর আঘাত হানে। তারখাম্বাটি পড়ে যাওয়ার ফলে ৩টি ঘরই দুমড়েমুচড়ে যায়, তবে ভাগ্যক্রমে কোনো হতাহত হয়নি।

ভেঙ্গে পড়া তারখাম্বার নীচে দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে এলাকায় বসবাসরত মানুষের।

জানা যায়, নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলস্ তৈরি হওয়ার বহু আগে থেকে টিএন্ডটির তারখাম্বাগুলো স্থাপিত হয়েছিল। মিল তৈরি হয়েছিল ১৯৪৪ সালের কোনো একসময়ে, আর এই তারখাম্বাগুলি স্থাপিত হয়েছিল যখন এই বঙ্গদেশে প্রথম টেলিগ্রাফ আর টেলিফোনের আবির্ভাব ঘটে তখন। এরকম খাম্বা ছিলো ৪টি, আর টিএন্ডটির সংযোগ ছিল বৈদ্যের বাজার থেকে নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা হয়ে ঢাকা পর্যন্ত। বৈদ্যের বাজার থেকে টিএন্ডটির দুইটি তার শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে আনার জন্য শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাড় বন্দর থানাধীন চৌড়াপাড়া আর নদীর পশ্চিমপাড় লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের ভিতরে স্থাপিত করে ব্রিটিশ সরকার।

ভেঙ্গে পড়া তারখাম্বার মাথা।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে 'বার্হ্মাস্ট্যান্ড' ও 'মেঘনা' তেলের ডিপোতে আসা তেলবাহী জাহাজের মাস্তুল এই তারখাম্বার তারে লেগে দুইটি তার ছিঁড়ে যায়, তা আর কখনো মেরামত করেনি টিএন্ডটি কর্তৃপক্ষ। তারপর থেকে অযত্নে অবেহেলায় কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সেই ব্রিটিশ আমলের গড়া তারখাম্বাগুলো। শোনা যায় এর বহু আগেই আরো দুটিখাম্বা বিধ্বস্ত হয়, থেকে যায় শীতলক্ষ্যা নদীর এপার-ওপারে খাম্বা দুটি। নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের খাম্বাটি ছিলো সর্বশেষ স্মৃতি, এটিরও বিলুপ্তি ঘটলো গত ৩ এপ্রিল ২০১৭ ইং তারিখে। যখন বাতাসে এই তারখাম্বাটি পড়ে যায় তখন বিকট শব্দে পুড়ো এলাকা ভূমিকম্পনের মতো কম্পিত হয়, আতঙ্কিত ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। কোনো হতাহত ছাড়াই তারখাম্বাটি তিন-চারটি বসত-ঘরের উপরে হেলে পড়ে।

তারখাম্বাটি ভেঙ্গে পড়ার পর টিএন্ডটির অফিস থেকে এটি সরানোর কোনো ব্যবস্থা করছেনা। তবে একবার চার-পাঁচজন অফিসার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখে গেছেন। এখন এই হেলে পড়া তারখাম্বাটির কারণে ঘরে বসবাস করা লোকেরা নিজেদের থাকার ঘরখানাও মেরামত করতে পারছে না। যার কারণে এই বিধ্বস্ত হওয়া তারখাম্বার নীচেই রাতযাপন করতে হচ্ছে ঘরের মালিকদের। যখন খাম্বাটি পড়েছিল তখন কোনো হতাহত না হলেও এখন তা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে টিএন্ডটি কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে। এই তারখাম্বার চাপে যে কোনো সময় মাটিচাপা হতে পারে ঘরে থাকা ছোট ছোট অবুঝ শিশুরা। দেখার কেউ নাই, আমরা অসহায়, নিরুপায়।

SCROLL FOR NEXT