নাগরিক সংবাদ

আমি কত্ত স্মার্ট রে…………

Byরায়হান তানজীম

ভুলে যাওয়া বা অন্যমনস্ক থাকার স্বভাব আমার সেই ছোট্ট বেলা থেকে, আজও আমি নিজেও আবিষ্কার করতে পারলাম না যে কেন এমন হয়, যার কারণে বন্ধু বান্ধব আত্মীয়স্বজনদের সাথে প্রায়ই ভুল বোঝাবুঝির সম্মুখীন হতে হয়, আর মাঝে মাঝে এতটাই আনমনা থাকি যে তার ভুলের মাশুল বহুদিন যাবত গুনতে হয়।

যাই হোক আজ বিশেষ একটি প্রয়োজনে মিরপুর-১ হতে শ্যামলী গিয়েছিলাম একটা কাজে, তো কাজ শেষ হবার পর ফুটপাথ ধরে হাঁটছি আমার চির-চারিত স্বভাব মোতাবেক মাটির দিকে তাকিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে, হঠাৎ চোখ তুলে তাকাতেই যে ব্যাপারটিতে চোখ থেমে গেল তা হল, একজন ভদ্রমহিলাকে দেখে (বেশ ভাল ফ্যামিলির) সাথে তার মেয়েও রয়েছে (কথাবার্তায় বুঝলাম), মহিলার পিঠে দেখি একটা ব্যাগসহ দুই হাতে দুইটা বেশ ভারি ব্যাগ , যার জন্য ভদ্রমহিলার হাটতে পর্যন্ত কষ্ট হচ্ছিল, অথচ তার মেয়ে পাশে থেকেও স্মার্ট ফোনে কি যেন দেখছিল ও স্টাইলের সাথেই বেশ চলছিল, এদিকে তার মায়ের অবস্থা যে এত নাজেহাল সেদিকে তার কোন ভ্রুক্ষেপ ই নাই।

আর আমাদের মায়েরা বা বাবারাও তেমন যে সন্তানের কষ্ট হবে বিধায় মুখ ফুটে বলেন ও না যে বাবা এটা ধর,কিন্তু কিছুদিন পর এই সন্তান যখন পিতামাতার কোল ছাড়া হয় তখনি বিপত্তি ঘটে, এমনকি অনেক সন্তানও আছে যারা বাড়িতে ভাত মাখিয়েও খায় না তাদের মুখে খাবার তুলে দিতে হয়।এমন ঘটনা যে আজ প্রথম দেখলাম তা নয় ইতিপূর্বে বহুবার দেখেছি যে, বাবার দুই হাতে দুই ব্যাগ অথচ পাশে সন্তান আরামে হেঁটে যাচ্ছে, আর এই সামান্যতম মানবতা শিক্ষা পিতামাতা যদি না দেন ছোট বেলায় তাহলে তো বড় হলে বিপত্তির শেষ নেই।

তো ঐ ঘটনা দেখার পর আমি আবারো চুপচাপ হাঁটছি ও রাস্তা পার হয়ে (ফুট-ওভার দিয়ে) পল্লবী (৯নাম্বার) বাসে উঠলাম মিরপুর-১ এ আসার উদ্দেশ্যে, যেহেতু দুপুর বেলা গাড়িতে ভিড় কম আর বেশিদূর ও যাব না তাই গাড়ির মুখের কাছেই দাঁড়ালাম, কিন্তু দুই বাচ্চার চেঁচামিচিতে কৌতূহলী হয়ে পিছনে সরে গেলাম যে আসলে তারা কি জন্য এমন করছে, অবশ্য যা দেখেছি তাতে খুব বেশি অবাক হবার কিছু নেই কারণ এমন ঘটনা এ শহরে অহরহ, দেখলাম বাচ্চা দুটি বড়জোর চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে, তাদের সাথে কোন অভিভাবক ও নেই, এবং তারা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল অথচ তাদের হাতে স্যামসাং এর বেশ দামি স্মার্ট ফোন এবং তারা সেই ফোনে বিভিন্ন গেইম খেলছে ও তার বর্ণনা বেশ জোরে জোরে দিচ্ছে।

এসব দেখেও আমি অবশ্য অবাক হচ্ছিনা অবাক হওয়া ছেড়ে দিচ্ছি কারণ আমার মনে হচ্ছে সামনে এমন একটি প্রজন্ম আসছে যারা প্রযুক্তির প্রতি এতটাই আসক্ত যে আত্মীয় সজন বাবা মা এর প্রতিও অতটা আসক্ত না, এ ছাড়া আরও অনেক বাচ্চাকেই দেখেছি অবশ্য বাচ্চা বলা ঠিক হচ্ছেনা, কারণ ওরা ইউটিউব, ফেসবুক, গেইম এসব এ এতটাই এক্সপার্ট যে আমাদেরও হার মানায়।

সর্বোপরি প্রযুক্তির জ্ঞান অবশ্যই দরকার আছে কিন্তু তার একটা সীমাবদ্ধতা থাকা জরুরি, পাশাপাশি সন্তানদেরকে নিজের ছোটখাটো কাজ ও মানবিকতা শিক্ষা দেওয়াও পিতামাতার জন্য অত্যন্ত জরুরি।

রায়হান তানজীম ফেসবুক-https://www.facebook.com/rayhantanjim72

SCROLL FOR NEXT