নাগরিক সংবাদ

সমতার অসমতা…

Byএহসান রাজন

একই প্রতিষ্ঠানের নিযুক্ত সহকর্মীদের দুইটা অংশ থাকে। একটা অংশের কাছে চাকরিটি হল মহা-সৌভাগ্যের; বলা চলে তাদের স্বপ্নের থেকেও বেশি কিছু; এমন কিছু যেটাকে তারা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী প্রাপ্য অথবা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি কিছু মনে করে। আর, দ্বিতীয় অংশ হল সেই সমস্ত ভাগ্যবঞ্চিত মানুষ যারা হয়ত কোন অবিচারের শিকার হয়ে; মেধা, দক্ষতার প্রাপ্য মূল্যায়ন না পেয়ে পারিপার্শ্বিকতার কারনে একই পোস্টে চাকুরী করে; যদিও তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী সেটা হয়ত বেমানান; তাদের স্বপ্নের থেকে অনেক নিচে সেই অবস্থান; তারাও হয়ত কখনো ভাবেনি যে, এমন কোন অবস্থানে তাদের চাকুরী করতে হবে। তারপরও শুধু হয়ত একটা পরিচয়ের জন্যই যাদেরকে নীরবে চাকুরীটি করে যেতে হয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেইও প্রথম অংশের সহকর্মীরা এতোটাই খুশী; চাকুরীকে নিজের যোগ্যতার চেয়ে এতোটাই উর্ধ্বে মনে করেন যে, উর্ধ্বতন কর্মকর্তা যতই অন্যায় আদেশ করুক না কেন; যতই অযৌক্তিক অবাস্তব সিদ্ধান্ত নেন না কেন, যতই অযাচিত কাজ করুক না কেন; "ন্যায়কে ন্যায়; অন্যায়কে অন্যায়; ভুল কে ভুল; ঠিক কে ঠিক; মিথ্যাকে মিথ্যা; আর সত্যকে সত্য" বলার মত সৎ সাহস পোষন করেন না। আর এর থেকেও ভয়াবহ হল তাদের চাটুকারীতার অভ্যাস। তারা সবসময়ই চেষ্টা করেন তাদের উর্ধতন কর্মকর্তাকে সন্তুষ্ট রাখার… সেটা যে কোন উপায়েই হোক। তারা নিজের কাজ ঠিকমত করার জন্য সময় পান না; কিন্তু উর্ধতন কর্মকর্তার বাড়ির দরজায় থাকা চাতুষ্পদ প্রাণিটা কেমন কাছে সেটার খবর নেওয়ার সময় ঠিকই পান। আর, উর্ধতন কর্মকর্তার পরিবারের সদস্যদের কুশলাদী নিজের পরিবারের সদস্যদের অবস্থা জানার থেকেও ভাল করেই জানেন। আর এসবের থেকে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার ওয়ালেট যেন কখনো শীতল না হয় সে ব্যবস্থা করার জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো ব্যবস্থা তারাই করতে পারেন। উর্ধ্বতন কর্মকর্তার মতাদর্শ; বিশেষত রাজনৈতিক আদর্শকে একেবারে মহাকাশে উঠানোর জন্য তাদের প্রচেষ্টার অন্ত থাকে না। আর এসবের ফলশ্রুতিতে সেই প্রতিষ্ঠানের সার্বিক অবস্থার যে "বারোটা বাজে" সেটা ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে না।

দ্বিতীয় অংশের মানুষগুলো তাদের উপর অর্পিত দায়িত্বটুকুই শুধুমাত্র স্বয়ংসম্পূর্নভাবে সম্পন্ন করেন; এর বাইরে তেলবাজী, অন্যের আদর্শকে মাধ্যাকর্ষন ছাড়িয়ে মহাকাশে তুলে দেওয়া; উর্ধতন কর্মকর্তার অঞ্চলতুত আত্মীয়কেও "সুপার বস্‌" মনে করা এসবকে শুধু নিজের জন্য অপমানজনকই মনে করেন না; বরং মন থেকে ঘৃণা করেন; কেননা; তাদের মাঝে কোন সংকীর্নতা, যোগ্যতা, দক্ষতার প্রশ্নে কোন দূর্বলতা না থাকায় সত্য কথা বলা, ন্যায়সঙ্গত বিষয় প্রতিষ্ঠা করার; মিথ্যা ও অন্যায়কে দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করার সাহস, ক্ষমতা এবং যোগ্যতা তারা রাখেন।

প্রথম অংশের মানুষগুলো সবসময়ই বেশি সুবিধা পায়; সব সময়ই নিজের অবস্থা আর অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে। আর দ্বিতীয় অংশের মানুষগুলোর জন্য সব কিছু অর্জন করে নিতে হয়; সব সময়ই ভিতরে ভিতরে একটা অপূর্নতা নিয়ে পথ চলতে হয় সারাক্ষণ। যোগ্যতা আর অবস্থানের এই দ্বন্দ্ব সম্ভবত চলতেই থাকবে নিরন্তর…

লেখকঃ
প্রকৌশলী এস এ এহসান রাজন
প্রভাষক, কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগ, খুলনা পাবলিক কলেজ, খুলনা।
E-mail: ahsan.rajon@gmail.com

SCROLL FOR NEXT