নাগরিক সংবাদ

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিপদ সংকেত সমূহ

Byহৃদয়ে বাংলাদেশ

আমি আশা করে বসে ছিলাম, অন্ততঃ আমাদের ব্লগের পেশাদার অর্থনীতিবিদেরা নির্মোহ ও একাডেমিক দৃষ্টিতে বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষন করে আমাদের জন্য তাদের জ্ঞানভান্ডার উন্মুক্ত করে দেবেন। কিন্তু এযাবৎকাল তেমন কাউকেই এগিয়ে আসতে দেখছিনা। এর অর্থ এই নয়, যে আমি নিরাশ হয়ে পড়েছি। বরং বলা চলে সময় দ্রুত বয়ে যাচ্ছে দেখে আমি একটি আলোচনার সুত্রপাত করলাম মাত্র এবং এই আশা পোষন করছি, যোগ্যরা তাঁদের জ্ঞাননির্ভর বিশ্লেষন দিতে এগিয়ে আসবেন। কারন, আমি মনে করছি, যে সমস্ত বিপদসংকেত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দেখা যাচ্ছে, তা জনগনকে অবহিত করা অত্যন্ত জরুরী।

১। রাষ্ট্রীয় তারল্য সংকট: দৈনন্দিন ও উন্নয়ন ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারের হাতে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব প্রকট হয়ে উঠছে। অর্থমন্ত্রীর মতো একই পালকের পাখি ও প্রাক্তন অর্থ উপদেষ্ঠা মির্জা আজিজুল ইসলাম পর্যন্ত এ বিষয়ে উদ্বেগাকুল। তাঁর বিশ্লেষনে, এর মধ্যে সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক ঋণ হ্রাস করার যে পরিকল্পনা নিচ্ছে, তাকে তিনি অবাস্তব বলে মনে করছেন। (সুত্র নীচে দেয়া হয়েছে)। এই অর্থের অভাবের ফলাফল হবে, শুধু উন্নয়ন কর্মকান্ড স্থবির হয়ে পড়া নয়, বরং উন্নয়ন কর্মসূচীর উপর নির্ভরশীল বিপুলসংখ্যক শ্রমজীবি মানুষ। এতে বেকারত্ব ও মানুষের আয়ক্ষমতা কমবে এবং বিপুল গ্রামীন মানুষের স্রোত শহর-নগর অভিমুখে ধাবিত হবে যা শহুরে মানুষদের জীবনযাত্রাও কষ্টকর ও যন্ত্রনাকাতর হয়ে উঠবে।

২। দ্রব্যমূল্যের নিরবিচ্ছিন্ন উর্ধগতি: বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি রোধ করা যাচ্ছেনা বরং কিছুটা অবোধ্য কারনে প্রক্ষিপ্ত কিছু মন্তব্য ছাড়া এ নিয়ে অর্থনীতিবিদদের কোন ফোরামে আলোচনাও চলছেনা। বরং এমন একটি আবহের ধারনা দেয়া হচ্ছে যে দেশে এখন দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত কোন সমস্যাই নেই। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক প্রবণতা।

৩। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের মুদ্রানীতি: সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক তথা রাষ্ট্রীয় মুদ্রানীতি ঘোষনা করেছেন, যা হবে সংকোচনমূলক। অর্থনীতিবিদেরা বলেন, মুদ্রাস্ফীতি ক্ষতিকর কিন্তু মুদ্রা সংকোচন অপরাধ। এভাবে বলার প্রধান কারন হচ্ছে, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিতে বাজারে মুদ্রাপ্রবাহ কমিয়ে আনা বা প্রত্যাহার করা হয় (এর উল্টোটি হচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি)। যার অর্থ, বাজারে পন্য থাকলেও মানুষের হাতে তা কেনার টাকা থাকবেনা। একদিকে উপার্জন হ্রাস, অন্যদিকে পণ্য কেনার অসামর্থ্যতা এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টির আশঙ্কা জাগায়।

৪। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানীতে ভর্তুকি: বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন যে দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে জ্বালানী সরবরাহ করতে যে ভর্তুকি এই অর্থবৎসরে দেয়া হবে তার পরিমান ২৮ হাজার কোটি থেকে চল্লিশ হাজার কোটি টাকা। এই ব্যয় বহন করতে হবে অতিরিক্ত কর বা অন্যান্য রাজস্ব আয় থেকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন করের চাপ দেশের জনগন বা দেশের অর্থনীতি কতটুকু সহ্য করতে পারবে, তা নিয়ে আমার গভীর সংশয় আছে।

৫। বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভে ভাটার টান: এটি খুব দুঃখজনক যে যখন বাংলাদেশের বিদেশী মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ বাড়ে, তা জনগনকে সাড়ম্বরে জানানো হয়, কিন্তু যখন সে রিজার্ভ কমে বিপদের শঙ্কা বাড়ায় তখন জনগনকে অন্ধকারে রাখা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে বিদেশী মুদ্রা উপার্জনের প্রধান দুটি উপায় প্রবাসীদের র‍্যামিট্যান্স এবং পন্য রফতানী। পন্য রপ্তানী যে কমে যাচ্ছে তার কিছু তথ্য রপ্তানীকারকেরা জানাচ্ছেন, কিন্তু জনশক্তি রফতানী যে স্থবির হয়ে আছে বা হ্রাস পাচ্ছে, তার প্রামানিক তথ্য আমাদের কাছে নেই। পন্য রফতানী হ্রাস পাওয়ায় বিদেশী মুদ্রার অবমূল্যায়ন এখন শুধু সময়ের ব্যপার মাত্র। যার অর্থ হবে আমদানীব্যয় বৃদ্ধি তথা পণ্যমূল্য বৃদ্ধি।

আমি একটুও নৈরাশ্যবাদী মানুষ নই বরং সমস্যা চিহ্নিত করে তার মোকাবেলা করতে সাহসী। তাই, আমার এই পোস্ট আতঙ্ক ছড়ানো বা ভীতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নয়, বরং আমি তাকিয়ে আছি দেশে ও প্রবাসে যোগ্য দেশপ্রেমিক মানুষদের দিকে। যারা উপরের সমস্যাগুলোসহ (আরো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হয়তো আমি উল্লেখ করতে ব্যর্থ হয়েছি) অন্যান্য অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের দিকনির্দেশনা দেবেন, বাংলাদেশকে বিপদমুক্ত করবেন।

[কৃতজ্ঞতা স্বীকার ও তথ্যসুত্র: http://www.amadershomoy2.com/content/2012/07/19/news0593.htm

SCROLL FOR NEXT