নাগরিক সংবাদ

অন্য দেশের দাঙ্গাজনিত সমস্যাটি বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে নিজের ঘরে কেন ডেকে আনবে!

Byনুরুন্নাহার শিরীন
collect from online news
collect from online news

পড়শি রাষ্ট্র মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সম্প্রদায় বহুবর্ষ ধরেই মিয়ানমারে বহিরাগত সম্প্রদায় হিসেবে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় অনুপ্রবেশ করছে উদবাস্তু হিসেবেই। এযাবতকাল ধরে এই অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা পাঁচ লক্ষাধিক। এবঙ এরা বাংলাদেশের মৌলবাদীদের সঙ্গে জড়িত হয়ে বিবিধ উপায়ে জড়িয়ে পড়া উস্কানীমূলক কর্মকান্ড পড়শি রাষ্ট্রে ছড়ায় বলে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ অনেক বছর ধরে অনুপ্রবেশকারী পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা উদবাস্তু পুষছে। যাদের মিয়ানমার কখনওই ফেরত নিতে চায়নি। ভবিষ্যতেও চাইবেনা বলেই মনে হয়।

তো, এই যখন পরিস্থিতি তখন সম্প্রতি মিয়ানমারে রাখাইনদের সঙ্গে জাতিগত দাঙ্গার সৃষ্ট পটভূমিতে আবারও রোহিঙ্গা উদবাস্তুরা বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে চাইছে। বিষয়টি এতই আলোচিত আজ যে এর একটি সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ সমাধান জরুরী। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ সহ বাংলাদেশের বহু বিদ্যজনেরা মিয়ানমারের জাতিগত সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের সীমান্ত রোহিঙ্গাদের জন্য খুলে দেয়ার পক্ষে মানবিকতা দেখাচ্ছেন। আমার প্রশ্ন মানবিকতা বাংলাদেশের ঘাড়ে না চাপিয়ে তাঁরাতো নিজেরা দায়ভার নিলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব, কিন্তু সেটি না করে জনঅধ্যুষিত বাংলাদেশ যেখানে ইতোমধ্যাই পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা উদবাস্তুর দায় সামলাতেই হিমসিম, তখন আরও অসংখ্য রোহিঙ্গার দায়িত্ব বাংলাদেশের ঘাড়ে চাপাতে চাওয়াটি কি যৌক্তিক ? মিয়ানমারের বিপুল জনপ্রিয় নেত্রী সদ্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রাপ্ত অং সাং সুচী-র মানবতা নিয়ে নিশ্চয় প্রস্ন ওঠেনা, তো, এক্ষেত্রে নিজের দেশের সমস্যা নিয়ে তিনি নিশ্চুপ কেন ? কেবল বাংলাদেশকেই কেন পড়শি রাষ্ট্র-র অভ্যন্তরীন জাতিগত দাঙ্গাজনিত সমস্যাটি নিজের ঘাড়ে নেবার প্রশ্ন আসছে ? উপরন্তু একাত্তুরের বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ-এর সীমান্ত পেরিয়ে পড়শি রাষ্ট্র ভারতে শরণার্থী হওয়া আর সেই সময়ের মুক্তিযুদ্ধের মহান সংগ্রাম-এর পটভূমির সঙ্গে কি করে এই সমস্যাটির তুলনা করতে চাইছেন অনেক খ্যাতিমান বিদ্যজনেরা ? বাংলাদেশ ছোট্ট একটি দেশ, যেখানে মানুষের নিত্য হাজার সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজতে সরকার এবঙ জনগণ-এর নিত্যই মোকাবিলা করতে হয় অনাকাঙ্ক্ষিত বহু সঙ্কটময় সময়, সেই বাংলাদেশের পক্ষে আরেক অবাঞ্ছিত রোহিঙ্গা সমস্যার দায়িত্বভার নিয়ে সীমান্ত খুলে দেয়ার মতো ঝুঁকিময় সিদ্ধান্ত মঙ্গলজনক হতে পারেনা বলেই ধারণা। এই সমস্যা সমাধানে যেমন মানবিক দিকটি আসে, ততোধিক গুরুত্ব পাওয়া উচিত বাংলাদেশের মতো এক ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের পক্ষে কতটা মানবিকতার দায়িত্ব ঘাড়ে নেয়া সম্ভব। পৃথিবীর বৃহত রাষ্ট্রগুলোর সীমান্তে ঘটমান অমানবিক কর্মকান্ডের দায়ভার বৃহত রাষ্ট্রগুলো কতটা নিজ ঘাড়ে নেয় আমার জানা নেই। তবুও আজ কেন যে কেবল বাংলাদেশের বেলায় এই অদ্ভুত দায়ভার নেবার আব্দারটি করা হচ্ছে যা তার জন্য আত্মঘাতীর মতো বিপদজনকও হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থেকেই যায়। এবঙ যারা সরকারের কাছে আবদারটি রাখছেন আপদে-বিপদে তাদের ভূমিকা কি হবে তার গ্যারান্টি নেই। সুতরাং "ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিওনা" এমন সনাতন প্রবাদবাক্য মনে এসেই যায়। কেননা অন্য দেশের আপদ নিজের দেশে বিপদ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা যেখানে সেখানে নিশ্চয় "চাচা আপন প্রাণ বাঁচা"-ই জরুরী বিষয়।

আদতেই হয়তো বিষয়টি আরও ঢের জটিল। যা আমার মতো সামান্য লিখিয়ের তেমন বোধগম্য নয়, যেমন সহজে বিদ্যজনেরা বুঝে ফেলেন। তবুও লিখলাম। কারণ আমারও ভাইবেরাদরের দুঃখদিন খুব করেই স্পর্শ করে হৃদয়। আমি নিশ্চয় অমানবিক বিদ্বেষজাত কেউ নই। আমিও চাইনা যে আজ অত্যন্ত কষ্টকর অবস্থার শিকার রোহিঙ্গারা জাতবিদ্বেষে দাঙ্গাবাজিতে জড়িয়ে পড়শির ঘাড়ে চাপুক। কিংবা মৌলবাদীদের দ্বারা সাংঘর্ষিক কর্মকান্ডে পরিচালিত হোক। আমার হার্দিক চাওয়া বিষয়টির সুষ্ঠু-সুন্দর-শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথা ভাবুক মিয়ানমার, জাতিসংঘ, বৃহত মানব-দরদী দেশগুলো সহ বাংলাদেশের বিদ্যজনেরা। যাতে সমস্যাভর্তি বাংলাদেশের বিপদ না বাড়ে। এটুকুই আমার বলবার তাড়না থেকেই লেখাটি লিখলাম। পড়শি রাষ্ট্র তার আভ্যন্তরীন সমস্যাটি নিজের ঘাড়ে নিয়েই জাতিগত বিদ্বেষ-এর সমাধান করুক, রোহিঙ্গারা তাদের বাসভূমে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ফিরে পাক আজ আমার একান্ত প্রার্থনা এই।

SCROLL FOR NEXT