ঢাকার কানাডা ক্লাবে মঙ্গলবার মুনতাসির মামুনের ‘সাইকেলে আলস্কা থেকে টরোন্টো, পৃথিবীর পথে বাংলাদেশ’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে বইটি হাতে অতিথিরা।

)<div class="paragraphs"><p>ঢাকার কানাডা ক্লাবে মঙ্গলবার মুনতাসির মামুনের ‘সাইকেলে আলস্কা থেকে টরোন্টো, পৃথিবীর পথে বাংলাদেশ’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে বইটি হাতে অতিথিরা।</p></div>
বাংলাদেশ

‘পৃথিবীর পথে বাংলাদেশ’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসব

Byজ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

আলাস্কার ধু ধু প্রান্তর, জনমানবহীন দুর্গম পথ আর পরিত্যক্ত সব শহর অভিযাত্রীদের জন্য রেখে দিয়েছে রোমাঞ্চ আর অজানাকে জয় করার হাতছানি।

সাইকেলে বাংলাদেশের পতাকা বেঁধে তিন বন্ধু সাড়া দিয়েছিলেন সেই আহ্বানে; আলাস্কা থেকে টরোন্টোর সেই অভিযান ‘পৃথিবীর পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামে মলাটবন্দি করে এনেছেন তাদের একজন।

মঙ্গলবার ঢাকায় কানাডা হাই কমিশনে অনুষ্ঠিত হয় অভিযাত্রী মুনতাসির মামুনের লেখা ওই বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান।

ঢাকায় কানাডার হাই কমিশনার লিলি নিকোলসসহ অতিথিদের নিয়ে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।

‘পৃথিবীর পথে বাংলাদেশ: সাইকেলে আলাস্কা থেকে টরোন্টো’ বইটি প্রকাশ করেছে ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)।

কানাডার অপরূপ সৌন্দর্য আর ভৌগোলিক বিস্তৃতির কথা তুলে ধরে অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ভ্রমণ কথা থেকে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম অনেক কিছু জানতে পারবে।

লেখককে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “এখন আপনি আলাস্কা থেকে টরোন্টো পর্যন্ত ভ্রমণ করেছেন। ভবিষ্যতে হয়ত আপনি আলাস্কা থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত ভ্রমণ করবেন।”

ঢাকায় এমন একদিনে বইটির প্রকাশনা উৎসব হল, যেদিন ভালোবাসা দিবস আর পহেলা ফাল্গুনের সঙ্গে এসেছে বাংলাদেশকে কানাডার স্বীকৃতির ৫১ বছরও। ১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডা।

কানাডার সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরে মেয়র আতিক বলেন, “উত্তর আমেরিকার একমাত্র দেশ হিসাবে কানাডায় সব গার্মেন্টস পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়ার সেদেশের সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”

ঢাকায় সাইকেল চালানোর পরিবেশ তৈরির চেষ্টার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা অনেকে সাইকেল চালাই। কিন্তু সাইকেলে আলাস্কা থেকে টরোন্টো যাওয়া সত্যিকার অর্থে অন্য রকম।

“জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে দেশকে রক্ষায় বর্তমানে সাইকেল খুব বেশি প্রয়োজন। এক সময় মনে করা হতো সাইকেল গরিবের বাহন। কিন্তু না… সাইকেল তাদের বাহন যারা ধরিত্রীকে বাঁচাতে চায়, যারা জ্বালানি সাশ্রয় করতে চায়, যারা জলবায়ু ও আবহাওয়াকে রক্ষা করতে চায়।”

ঢাকার কানাডা ক্লাবে মঙ্গলবার মুনতাসির মামুনের ‘সাইকেলে আলস্কা থেকে টরোন্টো, পৃথিবীর পথে বাংলাদেশ’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে ঢাকায় কানাডীয় হাই কমিশনার লিলি নিকোলস

প্রকাশনা উৎসবের সুযোগে বাংলাদেশের সঙ্গে কানাডার সম্পর্কের বিস্তৃতির বিষয় তুলে ধরে হাই কমিশনার লিলি নিকোলস বলেন, “বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানকারী দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে ছিল কানাডা। স্বাধীনতার পর এমন এক সময়ে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে, যখন সহায়তা খুব কমই আসছিল এখানে। বাংলাদেশে যখন দুর্ভিক্ষের মধ্য দিয়ে যায়, তখন খাদ্য সহায়তা দিয়েছিল কানাডা।

“তখন থেকে এই বন্ধুত্ব বিকশিত হয়েছে। বর্তমানে এটা বহুমুখী সম্পর্ক। ৩ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য সম্পর্ক, এক লাখ বাংলাদেশি কানাডায় বসবাস করে। প্রতি বছর ১০ হাজার শিক্ষার্থী পড়তে যায়, সংখ্যাটি প্রতি বছর বাড়ছে। দুদেশের জনগণের মধ্যে অসাধারণ সম্পর্ক।”

মুনতাসির মামুনের বই দুদেশের মানুষে-মানুষে বন্ধন তৈরিতে ভূমিকা রাখবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দুদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে মুনতাসিরের মতো মানুষেরা হচ্ছে মুখ্য।

“তার মতো মানুষরা দুদেশের সংস্কৃতির মধ্যে যোগসূত্র ঘটায়। এর বাইরে প্রতি বছর ব্যান্‌ফ ফিল্ম ফেস্টিভাল আয়োজনের ক্ষেত্রেও তিনি ভূমিকা রাখেন।”

বইয়ের বিষয়ে পাখি বিশেষজ্ঞ, লেখক ও পর্যটক ইনাম আল হক বলেন, “আমি বইটি পড়া শুরু করেছি, কারণ লেখক আমার বন্ধু। কিন্তু আমি পড়া শেষ করেছি এই জন্য যে, আমি এটা হাত থেকে রাখতে পারিনি। সত্যিকার অর্থে! আমি অতিরঞ্জিত করছি না।

“খুবই সাবলীল, খুবই বাস্তব। পড়ার জন্য অসাধারণ বই। আপনি যদি বইয়ের প্রথম লাইনটা পড়েন, তাহলেই বুঝতে পারবেন, আমি যেটা বলছি সেটার বাস্তবতা।”

অভিযাত্রী মুনতাসির মামুন

লেখক মুনতাসির মামুন বলেন, “কানাডা অনেক বড় দেশ। আমরা সেখানে বাইসাইকেলে ভ্রমণ করেছি, যাতে মানুষের জীবনযাত্রা বুঝতে পারি। কেননা আপনি যদি মানুষকে আবিষ্কার করতে না পারেন, কোনো দেশকে বুঝতে পারবেন না। সংস্কৃতির সংযোগ আছে সব কিছুর সঙ্গে।

“এত বড় দেশে খুব কম জনসংখ্যার মধ্যে ভ্রমণটা কেমন হবে, সেটা নিয়ে আমরা ভাবনায় ছিলাম। এর মধ্যে দিয়ে আমাদের এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা আগে কখনও হয়নি।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে কয়েক হাজার লোকের বাস। কিন্তু আমরা যেখানে ভ্রমণ করেছি, সেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে থাকে মাত্র কয়েকজন। সুতরাং এটা এমন অভিজ্ঞতা খুব সহজে যেটা পাওয়া যায় না।”

প্রকাশনা উৎসবে মুনতাসির মামুনের ভ্রমণসঙ্গী কনক আদিত্য এবং অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক সারাহ-জেন এবং বাংলাদেশের প্রথম নারী এভারেস্টজয়ী নিশাত মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

SCROLL FOR NEXT