বাংলাদেশ

আবদুর রউফের দাফন হবে বনানীতে

Byকিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

শুক্রবার বাদ জুম্মা ভৈরব কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে আবদুর রউফের (৮৩) মৃত্যু হয়।  

তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে এবং নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

তার চাচাত ভাই ভৈরব প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মনসুর জানান, শুক্রবার রাতে ঢাকায় মহাখালী ডিওএইচএস মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বনানীতে নৌবাহিনীর কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হবে।

তিনি জানান, আবদুর রউফ বক্ষব্যাধির চিকিৎসার জন্য ভারতের দিল্লীতে স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালে ছিলেন। গত মঙ্গলবার দেশে এনে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভোরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

সকালে তার মরদেহ ভৈরবে নিজ বাড়িতে আনা হয় বলে জানান তিনি।

মনসুর জানান, জানাজার আগে ভৈরবের পৌর মেয়র মো. শাহীন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার, ভৈরব চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হুমায়ুন কবীর, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সায়েদুল্লাহ মিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, প্রেস ক্লাব, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তার কফিনে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

ভৈরব-কুলিয়ারচরের সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপন শোক প্রকাশ করেছেন।

আবদুর রউফের সংক্ষিপ্ত জীবনী

১৯৩৩ সালের ১১ নভেম্বর কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার ভৈরবপুর গ্রামে আবদুর রউফের জন্ম। বাবা আবদুল লতিফ ছিলেন স্থানীয় পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান।

ছাত্রজীবনে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন আবদুর রউফ। ১৯৫১-৫২ সালে তিনি ছিলেন ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক। ১৯৫৩-৫৪ সালে তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৫৫-৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এমএ পাস করে আবদুর রউফ শিক্ষকতায় যোগ দেন। ১৯৬১ সালে বিএড পাস করার পর উপাধ্যক্ষ হিসেবে ঢাকার শাহীন স্কুলে যোগ দেন।

১৯৬২ সালে যোগ দেন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে। সেখানে কর্মরত থাকা অবস্থায় স্বাধীনতার আন্দোলনে জড়িত হন। ১৯৬৮ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আসামি করা হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ১৪ মাস কারাগারে থাকার পর ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের পর মুক্তি পান।

এরপর তিনি নরসিংদী কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বাধীন ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের তরুণদের নিয়ে যে বিশেষ গেরিলা বাহিনী গঠিত হয়েছিল, সেই বাহিনীর তিন সদস্যের পরিচালকমণ্ডলীর একজন ছিলেন তিনি।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের অগাস্টে আবদুর রউফ পুনরায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যোগ দেন এবং নৌবাহিনীর পুনর্গঠনে বিশেষ অবদান রাখেন। ১৯৭৩ সালে সেখানে তিনি কমান্ডার পদে উন্নীত হন।

বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর তৎকালীন সামরিক সরকার তাকে কারারুদ্ধ করে। ১৯৭৬ সালে কারামুক্তির পর তিনি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন।

১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে তিনি পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের (পিএসটিসি) প্রধান নির্বাহী হিসেবে যোগ দেন।

১৯৯৩ সালে গণফোরাম গঠনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন গণফোরাম সভাপতিমন্ডলীর সদস্য।

মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ দেয়।

SCROLL FOR NEXT