বাংলাদেশ

কুয়াকাটায় হাসানাতপুত্রের সঙ্গী গুলিবিদ্ধ, লুকোছাপা  

Byবরিশাল প্রতিনিধি

শুক্রবার সন্ধ্যায় কুয়াকাটার মোটেল ‘সী-ভিউ’র একটি কক্ষে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর রাত দেড়টার দিকে ব্যবসায়ী নিরব হোসেন টুটুলকে (৩৮) গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয় বলে বরিশাল মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর) শোয়েব আহম্মেদ জানিয়েছেন।

তবে কিভাবে তিনি গুলিবিদ্ধ হলেন, তা জানা যায়নি। আর তার গুলিবিদ্ধ হওয়া নিয়ে কেউ কথা বলতে চাইছেন না। 

আহত টুটুল বরিশাল মৎস্য আড়ৎদার সমিতির যুগ্ম সম্পাদক। তিনি নগরীর নাজিরেরপুল এলাকার হারুন অর রশিদের ছেলে।

টুটুল সংসদ সদস্য হাসানাতের বড় ছেলে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, সাদিক আবদুল্লাহ বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বিভিন্ন উপায়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাদের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার তিনি আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকে নিয়ে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ভ্রমণে যান।

“সেখানে সৈকত সংলগ্ন মোটেল ‘সী-ভিউ’-তে উঠেন তারা। ওই হোটেলেই গুলিবিদ্ধ হন ব্যবসায়ী টুটুল,” বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা।

এ বিষয়ে জানতে হোটেল সী-ভিউ এর ব্যবস্থাপক সোলায়মান ইসলামের মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

তবে সোলায়মানের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন জানিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক আমির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিকাল ৩টার দিকে ৫০ জনকে নিয়ে হোটেলে উঠেছিলেন সাদিক আবদুল্লাহ। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে হোটেলের দ্বিতীয় তলার এক নম্বর কক্ষ থেকে গুলির শব্দ শোনা যায়। পরে একজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় বরিশাল নিয়ে যাওয়া হয়।

কুয়াকাটা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই সঞ্জয় মণ্ডল জানান, শটগানের গুলিতে একজন আহত হয়েছেন শুনে তারা সেখানে গিয়েছিলেন। তবে তারা পৌঁছানোর আগেই আহতকে সেখান থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়।

মোটেল সী-ভিউ

মোটেল সী-ভিউ

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর আওয়ামী লীগের ওই নেতা জানান, আহত টুটুলকে প্রথমে পটুয়াখালী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির জন্য নাম লিপিবদ্ধ করেও তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ফেয়ার হেলথ ক্লিনিকে।

আওয়ামী লীগের ওই নেতা কথা সত্যতা যাচাই করতে তিনটি হাসপাতালেই যোগাযোগ করা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে।

পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক দিলরুবা আক্তার লিজা জানান, টুটুলের আহত হওয়ার কারণ সম্পর্কে তাদের কিছু জানানো হয়নি। তারা আহতকে শুধু রক্ত দিয়েছেন।

রাত সোয়া ৯টার দিকে টুটুলকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি দেখানো হয়। সেখানে ভর্তি রেজিস্ট্রারে লেখা হয়েছে, টুটুল সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।

তবে হাসপাতালের কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক হাবিবুর রহমান জানান, কয়েকজন যুবক টুটুলের নাম হাসপাতালের ভর্তি রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করলেও তাকে হাসপাতালে আনা হয়নি।

রাত সোয়া ১০টার দিকে নগরীর কালিবাড়ি রোডের ফেয়ার হেলথ ক্লিনিকে টুটুলকে ভর্তি করা হয় বলে জানান ওই ক্লিনিকের চিকিৎসক জহুরুল হক মানিক।

তিনি বলেন, “আহতের ডান পায়ের হাটুর ওপরের অংশে গুরুতর জখম হয়ে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়েছে। পায়ের ওই অংশের স্নায়ু কাজ করছে না।”

টুটুলের ডান পা কেটে ফেলতে হতে পারে বলে জানান তিনি। তবে তার পায়ে গুলি পাওয়া গেছে কি না, জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান মানিক।

এ বিষয়ে জানতে সাদিক আবদুল্লাহর মোবাইল ফোনে একাধিক কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

SCROLL FOR NEXT