বাংলাদেশ

নাশকতা দমন করুন, দায়িত্ব আমার: পুলিশকে প্রধানমন্ত্রী

Byজ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

তিনি বলেছেন, “এখানে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নাই, কোনো চিন্তা নাই। যা কিছু হোক সে দায়িত্ব আমি নেব।”

নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্রুত আগাম নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি লাগাতার অবরোধের ২৩তম দিন বুধবার নিজের কার্যালয়ে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মত বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ এল। 

পুলিশ সদর দপ্তর, মেট্রোপলিটন, বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সরকারপ্রধান বলেন, “মানুষের জানমালের নিরাপত্তা আপনাদের দিতেই হবে। আর সেটা দেওয়ার জন্য যত কঠিন কাজ হোক সেটা আপনারা নির্দ্বিধায় করে যাবেন; অন্তত এইটুকু লিবার্টি আমি আপনাদের দিচ্ছি।”    

হরতাল-অবরোধে পেট্রোল বোমা হামলায় ‘মানুষ হত্যার’ চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা সম্পূর্ণভাবে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড। এই সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড দমনের জন্য যখন যেখানে যা করা প্রয়োজন আপনারা তাই করবেন। কারন মানুষ সেটা আশা করে।”

তিনি বলেন, দেশের মানুষ এখন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। তারা আশা করে ‘কঠোর হস্তে’ এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করা হবে।

অবরোধের এই ২৩ দিনে নাশকতা ও সহিংসতায় অন্তত ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। যানবাহনে দেওয়া আগুন ও পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়েছে বহু মানুষ।

এর মধ্যে দুটি ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে মামলা হয়েছে, যিনি অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। বিএনপির দাবি, সরকারের লোকেরাই নাশকতা করে তাদের ওপর দায় চাপাচ্ছে।       

পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আজ মানুষের ওপর যে জুলুম হচ্ছে, এই জুলুম যেন আর কেউ করতে না পারে। এবং যারা মানুষকে পোড়াবে বা মানুষের ওপর এভাবে আঘাত করবে তাদের বিরুদ্ধে যে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া দরকার- সেটা আপনারা নেবেন।”

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার সংরক্ষণ ও সংবিধান-গণতন্ত্র রক্ষার দায়িত্ব পালনে এ বাহিনীকে ‘ইস্পাত কঠিন মনোবল’ নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

পুলিশ সদস্যদের প্রতি আস্থার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি আশা করি, আপনারা যখন নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যাবেন তখন এ ব্যাপারে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেবেন।”

গত বছর ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরে নাশকতা দমনে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করে সন্ত্রাস ও নাশকতা মোকাবিলায় পুলিশের সঙ্গে জনগণকেও সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।

“সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ, সচেতন নাগরিক যারা, যারা শান্তি চায়- তাদেরকে এক করা। সেই সাথে সাথে আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি যারা রয়েছেন এবং র‌্যাব, আনসার-ভিডিপি, বিজিবি সকলকে সম্পৃক্ত করে এই সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড মোকাবিলা করতে হবে এবং যে কোনো উপায়ে দমন করতে হবে।”

বোমাবাজ ও নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দিতে ইতোমধ্যে সরকার পুলিশ ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে লিফলেটও বিলি করা হচ্ছে।   

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জুন মাসে বাজেট দেওয়ার পর পরিকল্পনা গ্রহণ করে উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয় নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস থেকে এবং মূল কাজ হয় জানুয়ারি মাসে।

“দুর্ভাগ্য, এই জানুয়ারি মাসেই তাণ্ডব শুরু করে দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। ফলে অর্থনীতির যে গতিশীলতা, উন্নয়নের যে গতিশীলতা ছিল- তা আজকে ব্যাহত হয়ে যাচ্ছে।”

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনায় শেখ হাসিনা বলেন, “কত মায়ের কোল যে খালি হচ্ছে। আমি জানি না বিএনপি নেত্রী তিনি তার সন্তান হারিয়েছেন। তার নিজের ব্যাথা তিনি বোঝেন।

“কিন্তু যাদেরকে পুড়িয়ে মারছেন; সেই সন্তানের পোড়া শরীর দেখে বা পোড়া লাশ দেখে সেই মায়ের মনে যে কি কষ্ট সেই কষ্টটা কি খালেদা জিয়া বুঝতে পারছেন? আমার একটা প্রশ্ন থাকল এখানে।”

SCROLL FOR NEXT