বাংলাদেশ

এ বছরই ঘর পাবে আরও এক লাখ পরিবার

Byগোলাম মুজতবা ধ্রুব
বাড়ি পাওয়ার আনন্দে নুরেছা বেগমের মুখে লেগে ছিল হাসি। ছোটবেলা থেকেই মানুষের বাড়িতে বাড়িতে জীবন কেটেছে তার। নুরেছার ভাষায়, আল্লাহ এবার ‘চোখ তুলে’ তাকিয়েছেন তার দিকে, ‘উছিলা’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দীর্ঘায়ু কামনা করেন তিনি।

এর মধ্যে দ্বিতীয় ধাপে ৫০ হাজার পরিবারকে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তারপর জুন-জুলাইয়ে ঘর পাবে আরো ৫০ হাজার পরিবার।

দ্বিতীয় ধাপের ৫০ হাজার নতুন ঘর নির্মাণের কাজ আগামী ৭ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করতে বৃহস্পতিবার দেশের সব বিভাগীয় কমিশনার, ডিসিসহ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ বিষয়ে একটি সমন্বয় সভা হয়। সেখানেই বিস্তারিত পরিকল্পনা তুলে ধরে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

মুজিববর্ষে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার’ হিসেবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় এরইমধ্যে ২ শতাংশ জমির সঙ্গে ঘর পেয়েছে সারা দেশের ভূমিহীন-গৃহহীন প্রায় ৭০ হাজার পরিবার।

বৃহস্পতিবারের সভায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া সরকারপ্রধানের দেওয়া নির্দেশনা ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পৌঁছে দেন।

তার সভাপতিত্বে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেনসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন। 

তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজকে নির্দেশনা দিয়েছেন যে আরও ৫০ হাজার ঘরের জন্য আজকে ১ হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হচ্ছে মাঠ পর্যায়ে। এটিকে কেন্দ্র করেই আজ আমরা সকলে একত্রিত হলাম।”

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন বলেন, “এবার আমরা যে ঘরটি করব, তার নকশায় ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন এসেছে। প্রধানমন্ত্রী মনে করেছেন যে বাজেটটাও আরেকটু বাড়িয়ে দেওয়া দরকার। সেজন্য ঘর প্রতি ২০ হাজার টাকা বাজেট বৃদ্ধি করা হয়েছে।”

প্রথম পর্যায়ে প্রতিটি ঘরের জন্য পরিবহন খরচসহ ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বাজেট ধরা হয়েছিল। এবার তা বাড়িয়ে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। 

প্রথম পর্যায়ে যেসব ঘর বানানো হয়েছে, তার মান সারা দেশে ‘প্রশংসা পেয়েছে’ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব বলেন, সেই মান ধরে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম ‘সহ্য করা হবে না’।

সমন্বয় সভায় ডিভিও কনফারেন্সে যুক্ত কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এই বছরে আমরা আরও এক লক্ষ ঘর করব। এই পর্যায়ে ৫০ হাজার বরাদ্দ দিচ্ছি আজকে। আগামী দুই মাসের মধ্যে আমরা কিন্তু আরও ৫০ হাজার বরাদ্দ দেব। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া থাকবে।

“সুতরাং প্রত্যেককে আমরা অনুরোধ করব আরও উপকারভোগী চিহ্নিত করে আগামী ৭ দিনের মধ্যে আরো নতুন ঘর নির্মাণের প্রস্তাব পাঠাবেন। প্রস্তাব পাঠানোর ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের গুরুত্ব দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করবেন।”

তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, “আমরা দ্বিতীয় ধাপে যে ঘরগুলোর বরাদ্দ দিচ্ছি, এটার নির্মাণ সমাপ্ত হতে হবে ৭ এপ্রিলের মধ্যে। আমরা আশা করি ১৫ এপ্রিলের দিকে আমরা এই ঘরগুলো উদ্বোধন করব। ৭ এপ্রিল হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।”

কাজের অগ্রগতি জানতে ও মান পরীক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।

ভূমিহীন, গৃহহীনদের সরকার যে ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে, তাকে ‘শ্রেষ্ঠতম কাজ’ হিসেবে বর্ণনা করে এ কাজে যুক্ত হতে পারাকে ‘চাকরি জীবনের একটি সর্বশ্রেষ্ঠ সুযোগ’ বলেও মন্তব্য করেন মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।

তিনি বলেন, “আমরা আশা করি, এপ্রিল মাসে আরও ৫০ হাজার ঘর আমরা উদ্বোধন করব এবং আমরা আবার হয়ত জুলাই মাসে আরো ৫০ হাজার উদ্বোধন করতে পারব। সেইভাবেই আমরা এগিয়ে যেতে চাই।”

ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ‘আশ্রয়ন’ নামে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়, যা প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়।

এ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ২০ হাজার ৫২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়।

এবার মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। তার এই ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহ প্রদান নীতিমালা ২০২০’ প্রণয়ন করা হয়।

এ লক্ষ্যে গত বছর জুনে সারা দেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি পরিবারের তালিকা করা হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নেওয়া হয় তাদের জীবন বদলের উদ্যোগ।

ভূমিহীন, গৃহহীন, অসহায়, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন এবং তাদের ঋণপ্রদান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে সক্ষম করে তোলা এবং আয়বর্ধক কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করাই এই প্রকল্পের লক্ষ্য।

SCROLL FOR NEXT