বাংলাদেশ

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকারে বাধা দিলে কঠোর ব্যবস্থা: পূর্তমন্ত্রী

Byনিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীতে ‘ওয়ানগালা’ উৎসবে গারোদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে নৃত্য পরিবেশনা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

শুক্রবার বিকালে রাজধানীর বনানীর সোয়াট মাঠে ঢাকাবাসী গারো সম্প্রদায়ের ‘ওয়ানগালা’ উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

রেজাউল করিম বলেন, “হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টানদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও বিভিন্ন জাতিসত্তার অধিকারে কেউ হস্তক্ষেপ করুক- এটা আমরা চাই না। যদি কেউ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে। কোনোভাবেই কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”

এ সময় পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, “প্রশাসনের যারা আছেন তাদেরকে অনুরোধ করব, প্রত্যেক জাতি গোষ্ঠী নিজস্ব সংস্কৃতি, কৃষ্টি পালনের ক্ষেত্রে তারা যেন কোনোভাবেই বাধার সম্মুখীন না হয়।”

পাহাড় ও সমতলের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির দাবি জানিয়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা বলছেন, তা না হলে তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখা যাবে না।

রাজধানীতে ‘ওয়ানগালা’ উৎসবে গারোদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে নৃত্য পরিবেশনা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

রাজধানীতে ‘ওয়ানগালা’ উৎসবে গারোদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে নৃত্য পরিবেশনা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

বাংলাদেশ আদিবাসী পরিষদও বলছে, ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি।

এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে শ ম রেজাউল করিম বলেন, “আপনাদের মনে রাখতে হবে, আপনাদের নিজস্ব জীবন সংস্কৃতি, কৃষ্টি ধারণ করে বাঙালি জাতিসত্তাকে ব্যবহার করতে হবে। আমরা চাই, গারোরা বিলীন হয়ে না যাক, তাদের সংস্কৃতি ধ্বংস না হোক।

“আপনাদের ভাষা সমৃদ্ধ করুন, ভাষার লিখিত অংশ যেন হারিয়ে না যায়। আপনাদের যত সংস্কৃতি তা যেন হারিয়ে না যায়,সরকার সকল পৃষ্ঠপোষকতা দেবে।”

রাজধানীতে ‘ওয়ানগালা’ উৎসবে গারোদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে নৃত্য পরিবেশনা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

রাজধানীতে ‘ওয়ানগালা’ উৎসবে গারোদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে নৃত্য পরিবেশনা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

পাহাড়ে বাঙালিদের বসবাস শুরু হওয়ার পরই তাদের সঙ্গে ভূমি নিয়ে বিরোধ তৈরি হয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের। পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর ও পার্বত্য জেলায় ভূমি কমিশন গঠন করা হলেও তাতে সমাধান আসছে না বলে অভিযোগ তাদের।

শ ম রেজাউল করিম বলেন, “একটি ক্ষতিকর কাজ অন্যরা করে গেছেন। পাহাড়ের বুকে পাহাড়িরা বসবাস করত, কী দরকার ছিল সমতলের বাঙালিদের নিয়ে সেখানে সেটেলমেন্ট করা? পাহাড়িদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের মাঝখানে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি কিন্তু আমরা করি নাই। আওয়ামী লীগ করে নাই, শেখ হাসিনার সরকার করে নাই।”

ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর সদস্যদের ধর্ম ও সংস্কৃতি পালনে যারা বাধা দেয় তারা কেউ সরকার ও আওয়ামী লীগের ‘নন’ বলে  দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা।

গারোদের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘ওয়ানগালায়’ শিশু শিল্পীদের নৃত্য পরিবেশনা। শুক্রবার বনানী সুয়াত মাঠে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

গারোদের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘ওয়ানগালায়’ শিশু শিল্পীদের নৃত্য পরিবেশনা। শুক্রবার বনানী সুয়াত মাঠে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

“তাদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে।এরা চায় বাংলাদেশ কেবল একটি গোষ্ঠীর রাষ্ট্র থাকুক,” পাহাড়িদের উদ্দেশে বলেন তিনি।

গারো ‘ওয়ানগালা’ উদযাপন পরিষদের সভাপতি মুকুল চিছামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আব্দুল বাসেত মজুমদার, কারিতাস ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের পরিচালক থিওফিল নওরেক, গারো ওয়ানগালার নকমা (সমাজ প্রধান) সাগর রিছিল বক্তব্য দেন।

ওয়ানগালা উৎসবটি মূলত ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা জানানোর উৎসব। গারোদের বিশ্বাস, শস্য দেবসা মিশি সালজং পৃথিবীতে প্রথম ফসল দিয়েছিলেন। তিনি সারা বছর পরিমাণমতো আলো-বাতাস-বৃষ্টি দিয়ে ভালো শস্য উৎপাদনে সহায়তা করেন। তাই নবান্নে নতুন ফসল ঘরে তোলার সময় মিশি সালজংকে ধন্যবাদ জানাতে উৎসবের আয়োজন করে গারোরা।

নবান্নে ফসল দেবতাকে উৎসর্গ না করে নিজেরা কোনো খাদ্য গ্রহণ করে না গারোরা। খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পরে গারোদের একাংশ এখন যিশু খ্রিষ্ট বা ঈশ্বরকে উৎসর্গ করে ওয়ানগালা পালন করেন।

শুক্রবার সকালে রাজধানীতে গারোদের দেবতা পূজার মাধ্যমে শুরু হয় ওয়ানগালার আনুষ্ঠানিকতা। পালন করা হয় নিজস্ব ধর্মীয় রীতি ‘আমুয়া’, ‘রুগালা’।

SCROLL FOR NEXT