বাংলাদেশ

‘আস্থা বাড়াবে’ কুমিল্লার ভোট

Byমঈনুল হক চৌধুরী

তারা বলছেন, রাজনৈতিক দলের সমালোচনার মুখে নতুন ইসির আন্তরিকতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় ‘ভালো’ নির্বাচন করা সম্ভব হয়েছে। এতে নতুন ইসির ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হয়েছে।

এ ধারা অব্যাহত রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোরও কমিশনের প্রতি আস্থা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইডব্লিউজি) ও জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) দুই প্রধান।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী থাকায় কুমিল্লার বৃহস্পতিবারের নির্বাচনের দিকে নজর ছিল সবার।

বিষয়টি স্মরণ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদাও বলছেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে তাদের সব ধরনের পদক্ষেপ ছিল। কুমিল্লার ভোটের মাধ্যমে সবার আস্থা অর্জনে শতভাগ সফল হয়েছেন তারা।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার পর কুমিল্লায় প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বড় নির্বাচন করে নতুন ইসি। এ ভোট নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরবিরোধী অভিযোগ করছিল।

সিইসির সঙ্গে দেখা করে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম বলেছিলেন, নিরপেক্ষতা দেখাতে গিয়ে ইসি ক্ষমতাসীনদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছিলেন, ক্ষমতাসীন দল আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে এবং এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছে।

তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, তাদের কাছে দুই দলই সমান। সবার জন্যে সমান সুযোগ তৈরি করা হয়েছে।

ভোট শেষে সিইসি নূরুল হুদা বলেন, যেখানে বিশৃঙ্খলার অপচেষ্টা করা হয়েছে সেখানেই কঠোরভাবে দমন করা হয়েছে। দুটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে। বিচ্ছিন্ন দুয়েকটি ঘটনা ছাড়া সফলভাবে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে।

বৃহস্পতিবারের ভোট নিয়ে পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর মোর্চা ইডব্লিউজির পরিচালক আব্দুল আলীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। নতুন কমিশন যে সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে সদিচ্ছা দেখিয়েছে, তা প্রতিফলিত হয়েছে। এর মাধ্যমে আস্থা অর্জনের পথে একটা অগ্রগতি বলতে হবে।”

তিনি বলেন, ভোটে রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ বাড়ায় বিশৃঙ্খলা তৈরিতেও অনেকের সংশ্লিষ্টতা থাকে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কঠোর নির্দেশনাও কাজে লেগেছে। সিইসি কুমিল্লায় গিয়ে ‘গণতন্ত্রের নবযাত্রা’ শুরুর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তার কথা আরও অর্থবহ হয়েছে ভোটের পরে।

“রাজনৈতিক দলগুলোকেও ইসির প্রতি আস্থা রাখতে হবে। ভোটের আগে-পরে ঢালাও অভিযোগ বা সমালোচনা করে বিভ্রান্ত করা ঠিক হবে না। সব সময় সমালোচনা-এ রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে।”

ইসির সদিচ্ছার পাশাপাশি সরকার, রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা পেলে সব সময় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলে মনে করেন ইডব্লিউজি পরিচালক।

জানিপপ চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে নতুন ইসির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। এ ধরনের সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে বর্তমান ইসি মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।”

কুমিল্লা নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের পথে ইসির প্রতি দলগুলোরও আস্থা অর্জনে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।

“একাদশ সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের শেষে। এ দীর্ঘ পথে আরও নির্বাচন করতে হবে কমিশন। নতুন কমিশন এসেই বলেছিল-তারা কথায় নয়, কাজের মাধ্যমে নিরপেক্ষতা প্রমাণ করবেন, আস্থা অর্জন করবেন। কুমিল্লা থেকে তার বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে বলে বিশ্বাস করি।”

সামনে যাওয়ার পথে কমিশনের সার্বিক সহযোগিতায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান অধ্যাপক নাজমুল।

নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর আবারও জিতেছেন। প্রায় ১১ হাজার ভোটে তিনি হারিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে।

ভোট নিয়ে সাক্কু অসন্তুষ্ট হলেওবিএনপি ভোট সুষ্ঠু হয়নি বলে দাবি করলেও এই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল সন্তুষ্ট ছিলেন সার্বিক পরিস্থিতিতে।

ভোট শেষে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুটি কেন্দ্র গোলযোগের কারণে স্থগিত করা হয়েছে। আর সব জায়গায় শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে।”

SCROLL FOR NEXT