শুক্রবার সকালে সেখানে দেখা যায়নি ঈদের সময়কার ব্যস্ততা। লঞ্চ মালিকরা বলছেন, যাত্রীর ধুম লাগেনি। লম্বা ছুটির কারণে এবার ঈদে অন্যান্য বারের মতো ‘ঠাসা যাত্রীও’ দেখা যাবে না সদরঘাটে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডাব্লিউটিএ) যুগ্ম-পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ঈদে নির্বিঘ্ন যাতায়াতের সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে সদরঘাটের ১৪টি প্রবেশ পথে বসানো হয়েছে ১৪টি সিসি-টিভি। যাত্রীদের চলাচলের সুবিধায় ৪,২০০ বর্গফুট পার্কিং স্পেস বাড়ানো হয়েছে। চাঁদপুর ও বরিশারের ‘ডে-সার্ভিসের’ যাত্রীরা এখন থেকে লালকুঠির ঘাট দিয়ে যাবেন।
এর ফলে সদরঘাটের মূল পন্টুনে যাত্রীর চাপ কমে যাবে বলে আশা করছেন তারা।
সারা দেশে ৪১টি নৌ-রুট আছে এবং লঞ্চের সংখ্যা ১৯০টি।
বিআইডাব্লিউটিএর এই কর্মকর্তা বলেন, ঈদে উপলক্ষে সদরঘাটে ঢাকা মহানগর পুলিশের পাশাপাশি ১৯৫ জন নৌ-পুলিশ দায়িত্ব পালন করবেন। নদীতে ছয়টি বোট সবসময় টহল দেবে। দায়িত্ব পালন করবেন র্যাব, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের পাশাপাশি বিএনসিসির ৫০ জন এবং মেরিন ক্যাডেটের ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবী।
বৃহস্পতিবার সদরঘাট থেকে ঈদের ‘স্পেশাল সার্ভিস’ শুরু হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ করপোরেশনের (বিআইডাব্লিউটিসি) সহকারী মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ বরকত উল্ল্যাহ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সদরঘাট থেকে দুটি স্টিমার মোড়লগঞ্জ ও হুলার হাট গেছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় হুলার হাট যাবে ‘লেপচা এবং সাড়ে ৬টায় যাবে ‘মাসুদ’।
১০ জুলাই পর্যন্ত এই বিশেষ ব্যবস্থা চলবে বলে তিনি জানান।
যাত্রীদের চাপ কেমন জানতে চাইলে লঞ্চ মালিক সমিতির উপদেষ্টা গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কিছু যাত্রী দেখা গেলেও তা তেমন নয়।
তিনি বলেন, নয়দিনের ছুটির কারণে এবার যাত্রীরা অনেক সময় পেয়েছে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য। তাই অন্যান্য বারের মতো চাপ সদরঘাটে দেখা যাবে না।
বিআইডাব্লিউটিএর পরিবহন পরিদর্শক (টিআই) মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, শুক্রবার সকালে চাঁদপুরের বেশ কিছু যাত্রী দেখা গেছে। কিন্তু বেলা বড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে।
টিআই সাত্তার বলেন, “এসব রুটের লঞ্চ সাধারণত বিকালে ছেড়ে যায়। তবে যাত্রী পেলে যে কোনো সময় ছেড়ে দেবে। যাত্রী নেই তাই ছাড়ছে না।”
লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করা হচ্ছে কি না- তা দেখতে বিআইডাব্লিউটিএ’র একজন ও জেলা প্রশাসনের দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন বলে তিনি জানান।
এবার ঈদের ছুটি নয়দিন হলেও সদরঘাট যেসব যাত্রীর সঙ্গে কথা হয় তাদের কেউ ছিলেন পোশাককর্মী, কেউ লেগুনাচালক কেউবা শিক্ষার্থী।
অনেক খোঁজাখুঁজির করেও যাত্রীদের মধ্যে একজন সরকারি চাকরিজীবীও পাওয়া যায়নি।
ইলিয়াস-সীমা দম্পতি ঈদ করতে যাবেন গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর দুমকির পাঙালিয়া গ্রামে। সাভারের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন তারা।
এত আগে (২৫ রমজান) ছুটি পেলেন কীভাবে জানতে চাইলে ইলিয়াস বলেন, “ছুটি দেয়নি। আমরা চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। বাড়ি যাচ্ছি ঈদ করতে।”
ঈদের পর ঢাকায় ফিরে চাকরির ‘একটা ব্যবস্থা’ করতে পারবেন বলে আশা করছেন পোশাক শ্রমিক এই দম্পতি।
সদরঘাটে কথা হচ্ছিল খাদিজা নামে আরেক পোশাকর্মীর সঙ্গে, তার বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপায়।
ঈদের জন্য ‘অগ্রিম ছুটি’ নেওয়ার কথা জানান তিনি।
গাজীপুরের আবদুল্লাহপুরের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন ভোলার সিদ্দিকুর। ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তার কারখানা ছুটি হয়ে গেছে। তাই আগেভাগে বাড়ি যাচ্ছেন।
ভোলার আরেক যাত্রী আল-আমিন চাকরি করেন নারায়ণগঞ্জের মদনগঞ্জের এক পোশাক কারখানায়। ঈদে ছুটি দেওয়া তিনিও বাড়ি যাচ্ছেন বলে জানান।
সেখানে আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্বিবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।