প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শনিবার ভার্চুয়ালি ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন’ উদ্বোধন করেন।

|

ছবি: পিআিইডি।

)<div class="paragraphs"><p>প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শনিবার ভার্চুয়ালি ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন’ উদ্বোধন করেন।</p></div>
বাংলাদেশ

ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব অটুট থাকুক: প্রধানমন্ত্রী

Byনিউজ ডেস্ক

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বকে ‘অকৃত্রিম’ বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুই দেশের এ বন্ধুত্ব অটুট থাকুক, সেটাই তিনি চান।

তার কথায়, “ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু ভ্রাতৃপ্রতীম প্রতিবেশী রাষ্ট্র। আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের অবাধ প্রবাহ এবং ঐতিহাসিক ও ভৌগলিক সেতুবন্ধন আমাদের দুই দেশের সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর করেছে।”

শনিবার বিকালে ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন বলে বাসসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

উভয় দেশের মধ্যে স্থাপিত জ্বালানি তেলের প্রথম এ পাইপলাইনে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শনিবার ভার্চুয়ালি ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন’ উদ্বোধন করেন

শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, সেটাকে আমরা কার্যকর করতে চাই। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা আরও উন্নত করতে চাই, যাতে, ভারতের সঙ্গে আমাদের এই বন্ধুতত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে দুই দেশের জনগণের সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণে আমরা একসাথে কাজ করে যেতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। কারণ, আমরা চাই আমাদের দেশের এই উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হোক।”

দুই দেশের সহযোগিতামূলক সম্পর্কের কথা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর এবং সিলেট, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে উন্নত করেছি।

"এগুলো ভারতের জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দিচ্ছি, যাতে এই বন্দরগুলো ব্যবহারে ভারতের কোনো অসুবিধা না হয়। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সহজ হবে এবং দুই দেশের মানুষই লাভবান হবে।”

অনুষ্ঠানে ভারতের শিলিগুড়ি থেকে ১৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনে বাংলাদেশের পার্বতীপুরে ডিজেল আনার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

পাইপলাইনটি আসামের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেডের (এনআরএল) সঙ্গে যুক্ত, সেই লাইনে ডিজেল আসছে বিপিসির পার্বতীপুর ডিপোতে।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমি বিশ্বাস করি এই মৈত্রী পাইপলাইন আমাদের দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের মধ্যে সহযোগিতা উন্নয়নের একটি মাইলফলক অর্জন।… এই পাইপলাইন বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় ডিজেলের স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করবে।”

রেলওয়ের ওয়াগনের মাধ্যমে ভারত থেকে বছরে ৬০ থেকে ৮০ হাজার টন ডিজেল আমদানি হয়ে আসছিল উল্লেখ করে সরকারপ্রধান জানান, পাইপলাইন নির্মাণের ফলে বছরে প্রায় ১০ লাখ টন ডিজেল আমদানি করা সম্ভব হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পাইলাইনের মাধ্যমে আসামের একটি ভালো বাজার বাংলাদেশে সৃষ্টি হল, যেখানে এই ডিজেল মানুষের উন্নয়নের কাজে লাগবে এবং সেখানে আসামবাসীও লাভবান হবে, ভারতবাসীও লাভবান হবে।”

তিনি বলেন, “পাবর্তীপুরে বর্তমানে আমাদের স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ১৫ হাজার মেট্রিক টন। তবে আমরা এই স্টোরেজ ক্যাপাসিটি বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছি।”

আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আগামী দিনেও ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মতো আরও সফলতা বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে উদযাপন করবে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে একইসঙ্গে কাজ করবে।”

তিনি বলেন, “আমরা সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। আমি চাই, ভারতের বিনিয়োগকারীরা সেখানে এসে আরও বিনিয়োগ করুন। আমরা দুই দেশই তাতে লাভবান হব।”

দুই দেশের সরকার বিগত সময়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রের অনেকগুলো সম্ভবনাকে বাস্তবে রূপ দান করেছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

“দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান যে সমস্ত সমস্যাগুলো- একে একে সমাধান করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে-গঙ্গার পানি চুক্তি; ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় বন্ধ হয়ে যাওয়া সড়ক ও রেল যোগাযোগগুলো একে একে উন্মুক্ত করা; ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও উন্নয়নে একযোগে কাজ করে যাওয়া এবং ভারতের কাছ থেকে উন্নয়নে বিভিন্ন সহযোগিতা প্রাপ্তি, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা জোরদারকরণ এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি প্রভৃতি।”

দুই দেশের মানুষের পরস্পরিক কল্যাণে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বেড়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশে আমরা শতভাগ মানুষের জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ইতোমধ্যেই তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

"ভারতের কাছ থেকে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছি আর বিদ্যুৎ খাতে উপআঞ্চলিক পর্যায়সহ দ্বিপাক্ষিক আরও কয়েকটি উদ্যোগ বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। আর এই সহযোগিতার ফলে আমাদের বন্ধুত্ব আরও গভীর হচ্ছে।”

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

মৈত্রী পাইপলাইন জ্বালানি নিরাপত্তায় সহযোগিতা বাড়াবে: মোদী

দুই দেশের মধ্যে জ্বালানি নিরাপত্তায় মৈত্রী পাইপলাইন সহযোগিতা বাড়াবে উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র্র মোদী বলেছেন, “আমি নিশ্চিত যে এ পাইপলাইন বাংলাদেশের উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করবে এবং উভয় দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংযোগের একটি চমৎকার উদাহরণ হয়ে থাকবে।”

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। প্রত্যেক ভারতীয় এটি নিয়ে গর্বিত এবং আমরা আনন্দিত যে আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় অবদান রাখতে পেরেছি। “

দুই বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশীর মধ্যে সংযোগ বাড়ার তথ্য তুলে ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই দেশ একসঙ্গে এ ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। ভারত রেল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বাংলাদেশে কোভিড টিকা এবং অক্সিজেন প্রেরণে সহায়তা করেছে।

মোদী বলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার দূরদৃষ্টির জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।”

আরও পড়ুন

SCROLL FOR NEXT