এক দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে অপরাধ কমেছে কেরানীগঞ্জে

সমন্বিত পদক্ষেপ ও নানা উদ্যোগ বাস্তবায়নের ফলে কেরানীগঞ্জে অপরাধ কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে, অথচ কয়েকবছর আগেও এ এলাকাটি ছিল মাদক কারবারী ও অপরাধীদের অভয়ারণ্য।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Dec 2018, 09:51 AM
Updated : 25 Dec 2018, 09:51 AM

স্থানীয় সংসদ সদস্য (ঢাকা-৩) এবং বিদ্যু, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর নেতৃত্বে পুলিশ প্রশাসনকে রাজনৈতিক চাপের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে দেয়া, মাদক নিয়ন্ত্রণে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে আসা, পুলিশবাহিনীকে সম্পূর্ণভাবে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখা এবং থানায় আইনি সেবা পেতে সব ধরনের দালালি বন্ধ করা হয়েছে।

শুধু বর্তমান নয় ভবিষ্যৎ নিয়েও নসরুল হামিদের রয়েছে নানা পরিকল্পনা। কেরানীগঞ্জের সব গুরুত্বপূর্ণ এলাকাকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনা, ইউনিয়নভিত্তিক আলাদা পুলিশ ফাঁড়ি নির্মাণ করা, কেরানীগঞ্জের প্রতিটি ইউনিয়নে পুলিশকে জানানোর জন্য অভিযোগ বক্স স্থাপন করা এবং  অনলাইন ক্রাইম কনট্রোল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার তৈরি করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তিনি।

ঢাকার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান বলেন, “পুরো ঢাকা জেলাতেই আমরা অপরাধ কমিয়ে এনেছি। কেরানীগঞ্জে অপরাধ একেবারেই নাই।”

কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজামান বলেন, “আগে এই থানা এলাকায় মাসে গড়ে ৮০ থেকে ৯০টি মামলা হতো। এখন মাসে গড়ে মামলা হয় ৩০টির মতো।”

তিনি বলেন, “মাননীয় প্রতিমন্ত্রী তার থানায় টহল দেয়ার জন্য পুলিশকে ৮টি গাড়ি দিয়েছেন। এজন্য পুলিশের মুভমেন্ট বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হচ্ছে। এছাড়া তার সংসদীয় আসনের থানায় কোনও রাজনৈতিক প্রভাব নেই। অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হয় কোনও ধরনের প্রভাব ছাড়াই।”

ওসি বলেন, “মাদকের প্রভাব অনেক কমে গেছে। সরবরাহ প্রায় নেই বললেই চলে। মূলত প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশনায় এলাকাভিত্তিক ও বিটভিত্তিক বিভিন্ন সচেতণামূলক অনুষ্ঠান করায় এই ধরনের উন্নতি হয়েছে।”

পুলিশ সুপার বলেন, “কেরানীগঞ্জে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। যুবসমাজ কর্মে মনোনিবেশ করেছে। একারণেও কেরানীগঞ্জে দ্রুতগতিতে অপরাধ কমছে।

“আগে কেরানীগঞ্জকে বলা হতো মাদকের হাট। এখন সেটা বদলে গেছে। মাননীয় প্রতিমন্ত্রী আমাদের নানাভাবে সহায়তাও করছেন। স্ব-উদ্যোগে পুলিশের জন্য গাড়ি দিয়েছেন, স্পিডবোড দিয়েছেন। নতুন থানা ভবনের জন্য উনি ৫০ শতাংশ জমির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন যেখানে একই কম্পাউন্ডে থানার অফিস ও আবাসিক এলাকা তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।”

গত ১০ বছরে অর্জন

# পুলিশ প্রশাসনকে রাজনৈতিক চাপের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করার স্বাধীনতা দেওয়ায় কেরানীগঞ্জের আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।

# মাদক নিয়ন্ত্রণে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে আসছে বর্তমান প্রশাসন।

# সম্পূর্ণভাবে পুলিশবাহিনীকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখা হয়েছে বিগত সাড়ে আট বছরে।

# থানায় আইনি সেবা পেতে সব ধরনের দালালি বন্ধ করা হয়েছে।

# অপরাধী যেই হোক তার অপরাধমূলক কাজের জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

# আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাহায্য করতে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

# সুস্থ স্বাভাবিক সমাজের বিকাশের জন্য মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার কোনও বিকল্প নেই। মাদক বিক্রেতাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

# ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব প্রকার ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কঠোর হাতে দমন করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আমাদের পরিকল্পনা

# কেরানীগঞ্জের সব গুরুত্বপূর্ণ এলাকাকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনা হবে।

# ইউনিয়নভিত্তিক আলাদা পুলিশ ফাঁড়ি নির্মাণ করা হবে।

# কেরানীগঞ্জের প্রতিটি ইউনিয়নে পুলিশকে জানানোর জন্য অভিযোগ বক্স স্থাপন করা হবে।

# অনলাইন ক্রাইম কনট্রোল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার তৈরি করা হবে।

# অসহায়দের জন্য বিনামূল্যে আইনি সেবা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

# ইভটিজিং বন্ধে ‘ধরিয়ে দিন’ সাইটের কাজ চলছে।

# মাদকসেবী এবং বিক্রেতাদের দমনে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে।

# অনলাইনে পুলিশের সেবা পেতে কেরানীগঞ্জের জন্য আলাদা অ্যাপস বানানো হবে।

কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজামান বলেন, “ছোটখাট দু একটি ঘটনা ছাড়া রাজনৈতিক সহিংসতাও নেই বললেই চলে। আর মামলার মধ্যে রয়েছে নারী নির্যাতন, মাদকের মামলা। খুনের ঘটনা নেই বললেই চলে। গত ছয় মাসে আমার থানা এলাকায় কোনও ডাকাতির ঘটনাও ঘটেনি।”