বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই অবকাঠামো প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন না নিয়ে ভালোই হয়েছে বলেও মনে করছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলন চলাকালে বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এক সাক্ষাৎকারে মুহিত বলেন, “আমাদের সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেব যেভাবে কাজ করছেন তাতে এই সরকারের মেয়াদেই পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করেই ছাড়বেন। তিনি প্রায় প্রতিদিনই এই সেতুর কাজ পরিদর্শনে যাচ্ছেন। তদারকি করছেন। খুবই কর্মঠ। আমরা তাকে হাঁটি মিনিস্টার বলি। আমার তো মনে হয় তিনি হেঁটে হেঁটেই পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করে ছাড়বেন।
“তামাশা করছি না; সিরিয়াসলি বলছি…। ইতোমধ্যেই পদ্মা সেতুর কাজ প্রায় অর্ধেক শেষ হয়েছে। আমদের এই সরকারের সময়েই ওবায়দুল কাদের এই সেতুর কাজ শেষ করেই ছাড়বেন বলে আমি বিশ্বাস করি।”
পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থ না নেওয়ায় বাংলাদেশে সংস্থাটির ঋণ-সহায়তার ক্ষেত্রে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কি না-এ প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, “পদ্মায় বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন না নিয়ে একদিক দিয়ে আমাদের জন্য ভালোই হয়েছে। আমরা আমাদের নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি, অন্যদিকে বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুতে যে অর্থায়ন করতে চেয়েছিল তা তারা বিদ্যুৎসহ অন্যান্য অবকাঠামো খাতে অর্থায়ন করেছে।”
“পদ্মা সেতুতে তারা যে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করতে চেয়েছিল তার মধ্যে আমাদের বিদ্যুৎ খাতের পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন প্রকল্পেই ৬০ কোটি ডলার অর্থায়ন করেছে। বাকি ৬০ কোটি ডলার অন্যান্য প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে।”
আগামী বছরগুলোতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন আরও বাড়বে প্রত্যাশা করে মুহিত বলেন, “খুব শিগগিরই বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের জন্য তিন বছরের (২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর) ঋণ-সহায়তা ঘোষণা করবে। সেটা সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।”
“ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সুনাম আছে…। আমরা কখনোই খেলাপি হই না। আমরা ৪৫ বছর ধরে বিশ্ব ব্যাংকের বেস্ট ঋণ গ্রহীতা হিসেবে সুপরিচিত। আমাদের পারফরমেন্স খুবই ভালো।”
বিশ্ব ব্যাংকের যে সব ঋণ পাইপলাইনে আছে সেগুলোই দ্রুত ছাড় হবে বলে আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী মুহিত।
পরে সেতুর জাজিরা জেটিতে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই প্রথম স্প্যানটি সফলভাবে বসানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্য স্প্যানগুলো উঠবে।
এখন পর্যন্ত এ সেতুর সাড়ে ৪৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের।
এই প্রকল্পে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার কথা ছিল বিশ্ব ব্যাংকের। সংস্থাটি প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে অর্থায়ন স্থগিত করার পর টানাপড়েনের এক পর্যায়ে তাদের ‘না’ করে দেয় বাংলাদেশ। এরপর ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু তৈরির কাজ শুরু করে সরকার।
বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের সভার ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মুহিত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব কাজী শফিকুল আযম এবং ওয়াশিংটনে বিশ্ব ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন ভূঁইঞা প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে অংশ নিচ্ছেন।