২০৩০ সালের আগেই দারিদ্র্য শূন্যে নামবে: মুহিত

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অনুযায়ী ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় থাকলেও তার আগেই বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার শূন্যে নামবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

আবদুর রহিম হারমাছি ওয়াশিংটন ডিসি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2016, 05:53 PM
Updated : 8 Oct 2016, 05:53 PM

বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের আসন্ন ঢাকা সফরকে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের সাফল‌্যের ‘স্বীকৃতি’ হিসেবে দেখছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে শুক্রবার বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মুহিত বলেন, “বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর আমাদের জন্য একটি গর্বের বিষয় (ইটস এ ম্যাটার অফ প্রাইড)।

“আমরা দারিদ্র্য বিমোচনে যে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছি সেটা সরেজমিনে দেখতেই তিনি (কিম) বাংলাদেশ সফরে যাচ্ছেন।

“ইট ইজ এ গুড ওকেশান অব পাবলিসিটি ইন বাংলাদেশ। ইটস এ গুড রিকগনিশন অব পারফরমেন্স অব বাংলাদেশ।”

দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের অর্জনকে ‘অবশ্যই সাকসেস’ বলেন মুহিত।

বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবে, ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশে অতি দারিদ্র্যের হার মোট জনসংখ্যার ১২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে, যেখানে ২০০৯-১০ অর্থবছর শেষে এ হার ছিল সাড়ে ১৮ শতাংশ।

দ্রুত কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “তবে এটা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, আমাদের দারিদ্র্য শূন‌্যে নামিয়ে আনতে কোনো মতেই ২০৩০ সাল লাগবে না। তার আগেই আমরা সে লক্ষ্যে পৌঁছে যাব।”

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে (এসডিজি )  ২০৩০ সালের মধ্যে অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা শূন‌্য থেকে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে।

ঢাকা সফর নিয়ে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় কোনো বৈঠক হবে  কি না- এ প্রশ্নের ‍জবাবে মুহিত বলেন, “না, আমার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক হবে না। সব কিছুই তো আগেই ঠিক হয়ে আছে।”

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত

ওয়াশিংটনে বিশ্ব ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, “বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরে বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ভালো কাভারেজ পাওয়া যাবে। এতে বাংলাদেশের সুনাম বাড়বে।”

জিম ইয়ং কিম ঢাকা সফরে যাচ্ছেন ১৬ অক্টোবর, থাকবেন তিন দিন। ১৭ অক্টোবর ‘বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবস’ ঢাকাতেই কাটাবেন তিনি।

ওই দিন ঢাকায় দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে একটি ‘পাবলিক লেকচার’ হবে, সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেবেন কিম।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেভিন রুডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ কয়েকজন অর্থনীতিবিদ বক্তৃতা করবেন ওই অনুষ্ঠানে।

ঢাকায় অবস্থানকালে কিম শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী মুহিতের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন।

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশের কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পও কিম ঘুরে দেখবেন বলে সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন আগেই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন।

বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিতে ‘বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবস’ পালন করে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে মন্তব্য করেন মুহিত।

অর্থমন্ত্রী বলেন, গত বছর অক্টোবরে পেরুর রাজধানী লিমায় বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় সংস্থাটির ১৮৮টি দেশের প্রায় ১০ হাজার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে দারিদ্র্য বিমোচনে অবদান রাখায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছিলেন।

লিমায় বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের ওই সম্মেলন চলাকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অর্থনীতিতে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার গল্পকে ‘বিস্ময়কর’ বলেছিলেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু।

বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ঢাকায় তিন দিনের সফরে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বসবেন।

“এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশের অর্জন শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, অনুকরণীয় হয়েছে উন্নয়নশীল বিশ্বে। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় মাথাপিছু আয় কম হওয়ার পরও শিশু মৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অসামান্য সাফল্য দেখিয়েছে।

“বাংলাদেশ দেখিয়েছে প্রবৃদ্ধি দারিদ্র্য বিমোচনের একমাত্র অবলম্বন নয়, স্বল্প আয় নিয়েও অনেক অর্জন সম্ভব। এ সাফল্য দেখতেই বাংলাদেশ সফরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট।”

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিশ্ব ব্যাংকের পঞ্চম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঢাকা সফর করছেন জিম ইয়ং কিম।

বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যাকনামারা প্রথম বাংলাদেশ সফর করেন। সর্বশেষ ২০০৭ সালের নভেম্বরে আসেন তখনকার প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিক।

বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্টদের মধ‌্যে পল উলফোভিজ ও জেমস উলফেনসনও বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন এর আগে।

দক্ষিণ কোরীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক জিম ইয়ং কিম ২০১২ সালের ১ জুলাই বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হন।

শুক্রবার বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কিম নিজেই ঘোষণা দেন তার মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়ানো হয়েছে।

“সে কারণেই কিমের ঢাকা সফরকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে বাংলাদেশ,” বলেন মুহিত।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েনের পর ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংককে ‘না’ বলে দেওয়ায় বিশ্ব আর্থিক খাতের ‘মোড়ল’ এই সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হতে পারে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করলেও বাস্তবে তা ঘটেনি। বরং প্রতিবছরই বাংলাদেশে তাদের সহায়তার পরিমাণ বাড়ছে।

শনিবার সকালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) গভর্নরদের আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম।

বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রথম সারিতে ফটোসেশনে অংশ নেন।