সাফল‌্যের বার্তা নিয়ে বিশ্ব ব‌্যাংক-আইএমএফ বৈঠকে

বিশ্বের আর্থিক খাতের দুই মোড়ল বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভাটি প্রতিবারের মতো হলেও এবার বাংলাদেশের অংশগ্রহণের প্রেক্ষাপট ভিন্ন।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Oct 2016, 04:31 PM
Updated : 4 Oct 2016, 04:40 PM

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে আগামী ৭ অক্টোবর ১৮৮টি দেশের অর্থমন্ত্রী ও গভর্নরদের অংশগ্রহণে শুরু হতে যাওয়া এই সভায় এবার বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা যাচ্ছেন ‘অভূতপূর্ব সাফল‌্যের বার্তা’ নিয়ে। 

এই বৈঠকের কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশের অর্থনীতির এগিয়ে যাওয়ার ধারার চিত্র হিসেবে অতিদারিদ্র্য ১৩ শতাংশের নিচে আনার তথ‌্য আসে বিশ্ব ব‌্যাংকেরই কাছ থেকে।

এই স্বীকৃতি নিয়েই এবারের বৈঠকে বাংলাদেশ নিজের সাফল্যের বার্তা নিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব‌্য করেন সভায় ঢাকার প্রতিনিধি দলের এক সদস‌্য।

যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “দারিদ্র্য বিমোচন এবং এমডিজি (সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে) বাংলাদেশের সাফল্যে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট অভিভূত। তাই নিজের আগ্রহেই আমাদের দেশ সফর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”

আগামী ১৭ অক্টোবর বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবসে এবার বাংলাদেশেই উপস্থিত হবেন বিশ্ব ব‌্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। সংস্থার উদ‌্যোগে বাংলাদেশে দিবসটি পালন হবে বলে ঢাকায় এবারের আয়োজনেও রয়েছে ভিন্নতা।

সেদিন ঢাকায় দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে একটি ‘পাবলিক লেকচার’ হবে। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেবেন কিম।

বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিতে ‘বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবস’ পালন করে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলেও মন্তব্য করেন মুহিত।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী মুহিত, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, অষ্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেভিন রুডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা বক্তৃতা করবেন ওই অনুষ্ঠানে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ৭ থেকে ৯ অক্টোবর বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভা শেষ করেই তিন দিনের সফরে ঢাকায় রওনা হবেন বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট।

বিশ্ব ব‌্যাংক-আইএমএফের তিন দিনের বার্ষিক সভায় বাংলাদেশের ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন অর্থমন্ত্রী মুহিত। বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ বৈঠক শুরুর আগে সেখানে কমনওয়েলথ অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকেও অংশ নেবেন তিনি। জিম ইয়ং কিমের সঙ্গেও বৈঠক করবেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, ওয়াশিংটনে বিশ্ব ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ রয়েছেন প্রতিনিধি দলে। প্রতিনিধিদলে তিনজন সাংবাদিকও রয়েছেন।

সম্মেলন শুরুর আগে এক বিবৃতিতে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বিলোপের জন্য এবারের বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ সম্মেলনে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ঘোষণা দেওয়া হবে।

“দারিদ্র্য, অসমতা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির মধ্যে সম্পর্ক, দারিদ্র্যের পরিবর্তিত রূপ, বৈশ্বিক উন্নতিতে বিশ্ব ব্যাংকের অবদানের ধারাবাহিক অবদানের কথাও তুলে ধরা হবে সম্মেলনে।”

অর্থমন্ত্রী বলেন, গত বছরের অক্টোবরে পেরুর রাজধানী লিমায় সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে দারিদ্র্য বিমোচনে অবদান রাখায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছিলেন।

“এবার বাংলাদেশে বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবস পালন বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের সম্মেলনে নতুন মাত্রা যোগ করবে,” বলেন তিনি।

বাংলাদেশের সাফল‌্যের ভূয়শী প্রশংসা করে ঢাকায় বিশ্ব ব‌্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি চিমিয়াও ফান বলছেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের অর্জন প্রশংসনীয়। এমনিক ভারত, পাকিস্তান ও ভুটানের চেয়েও ভালো।

“‍যেভাবে বাংলাদেশের অগ্রগতি হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালে দারিদ্র্যের হার ৩ শতাংশে নেমে আসবে বলে আমার বিশ্বাস।”

২০০৫ সালে বাংলাদেশে অতিদারিদ্র্যের হার ছিল ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ, ১১ বছর পর তা এখন ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ, ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে (পারচেজিং পাওয়ার পেরিটি) বাংলাদেশের ১২ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষের দৈনিক আয় ১ দশমিক ৯ ডলারের (১১৫ টাকা) কম।