বাংলাদেশ এখন বিশ্বনন্দিত: মুহিত

মন্দার মধ্যেও প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের উপরে ধরে রাখার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও সামাজিক অনেক সূচকে উন্নতির কারণে বাংলাদেশকে বিশ্ববাসী এখন অন্য চোখে দেখছে।

আবদুর রহিম হারমাছি লিমা (পেরু) থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Oct 2015, 03:48 AM
Updated : 10 Oct 2015, 04:18 AM

শুক্রবার পেরুর রাজধানী লিমায় বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় সংস্থার প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের মুখে বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসার পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

“দিন পাল্টে গেছে। আমরা এখন যেখানেই যাই না কেন, সবাই আমাদের মর্যাদার চোখে দেখে; সম্মান করে। এখানে (বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের সম্মেলন) এসেও সম্মান পাচ্ছি,” বলেন বাংলাদেশের তিনটি সরকারের এই অর্থমন্ত্রী। 

মুহিত বলেন, ১৮৮টি দেশের অর্থমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশের প্রশংসা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

“বাংলাদেশ এখন যে কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশ্বনন্দিত একটি দেশ হিসেবে মর্যাদা পায়। একটি আদর্শ দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়। গত কয়েক বছরে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমরা যে উন্নতি করেছি, এটা তারই স্বীকৃতি।”

বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট নারীদের অর্থনীতির মূলধারায় আনতে বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেন, “তারা যদি এই ধারা অব্যাহত রাখে তাহলে আগামী দশকে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ৩৪ থেকে ৮২ শতাংশে উন্নীত হবে, যা তাদের জিডিপিতে ১ দশমিক ৮ শতাংশ যোগ করবে।”

লিমা কনভেনশন সেন্টারে বিশ্ব ব্যাংকের ১৮৮টি সদস্য দেশের অর্থমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাসহ প্রায় ১০ হাজার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বাংলাদেশের এই প্রশংশা ঝরে।

সম্মেলনে বক্তৃতায় বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট

অর্থমন্ত্রী মুহিতের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল এসময় উপস্থিত ছিলেন।

পদ্মা সেতুর রেশ কাটিয়ে বিশ্ব ব্যাংক এবং সেই সঙ্গে আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন খুবই ভালো দাবি করেন মুহিত।

“বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের এখন কোনো সমস্যা নেই। খুবই ভালো সম্পর্ক। আইএমএফের সঙ্গে সম্পর্কও ভালো।”

২০০৮ ও ২০০৯ সালের বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার কথা মনে করিয়ে দিয়ে মুহিত বলেন,“আমরা বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছি, মন্দার মধ্যেও একটি দেশের অর্থনীতির চাকাকে কীভাবে সচল রাখতে হয়। কীভাবে ধারাবাহিকভাবে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা যায়।”

“আমরা ইতোমধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশে চলে গেছি। কিছুদিন পরেই তা একেবারে পাকাপাকি হয়ে যাবে,” বলেন আওয়ামী লীগ সরকারের এই অর্থমন্ত্রী, যারা আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে নেওয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে।

দেশে সামাজিক সূচকে উন্নতির চিত্র তুলে ধরে মুহিত বলেন, “আমরা জানি, মানব উন্নয়নে যে খরচ হয় সেটা করতে গেলে রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে অর্থ্যাৎ ডমেস্টিক রিসোর্স মবিলাইজেশন করতে হবে।

“২৭ বছর আগে আমি যখন অর্থমন্ত্রী ছিলাম তখন ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত ছিল ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০০৯ সালের আমরা যখন ক্ষমতায় আসলাম তখনও ছিল সেই ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। গত কয়েক বছরে সেটাকে আমরা ১০ শতাংশের উপরে নিয়ে গেছি।”

অর্থনীতির আকার বাড়ার পরিসংখ্যান হিসেবে ২০০৯ সালে এডিপির আকার ২৫ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে তা এবার ১ লাখ কোটি টাকা এবং বাজেটের আকার ৮৯ হাজার কোটি টাকা থেকে ৩ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত হওয়ার তথ্য দেন তিনি।

সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত

“এ সব তথ্য বিশ্লেষণ করলেই পরিবর্তনের ছোঁয়া বোঝা যায়। সে কারণেই আমাদের দেশের মানুষ বলে, শেখ হাসিনার সরকার উন্নয়নের সরকার। এখানেই আমাদের বড় প্রাপ্তি।”

শান্তি ও উন্নয়ন উন্নয়ন- জনগণের দুই প্রত্যাশা পূরণেই আওয়ামী লীগ কাজ করছে জানিয়ে মুহিত বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি এবং সফলও হয়েছি।”

গ্রামীণ অর্থনীতির গতিশীলতার উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, “এখন গ্রামে অভাব নেই। ভিক্ষুক খুঁজে পাওয়া যায় না।

“শিক্ষা খাতে আমরা প্রচুর বিনিয়োগ করেছি। তার সুফল আমরা এখন পাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। এটা আমাদের একটা বড় সাফল্য। অনেক উন্নত দেশও এটা করতে পারেনি।”

জলবা্য়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলার লড়াইয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে আমরা বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছি।

“সবশেষে যেটা বলব, সেটা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর সেটা হল গত কয়েক বছর ধরে আমরা যে ৬ শতংশের বেশি হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করছি সেটা পৃথিবীর অনেক বড় বড় দেশও করতে পারিনি। আর এটাই আমাদের সাফল্য; গর্বের।”