বিলিয়ন ডলারের ‘টাকা বন্ড’ শিগগিরই

বাংলাদেশে ১০০ কোটি ডলারের ‘টাকা বন্ড’ ছাড়তে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) প্রস্তাবে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

আবদুর রহিম হারমাছি লিমা থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2015, 04:09 AM
Updated : 7 Oct 2015, 04:09 AM

বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভায় যোগ দিতে পেরুর রাজধানী লিমায় অবস্থানরত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি এখানে খবর পেলাম, আইএফসির প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ সরকার ১ বিলিয়ন ডলারের টাকা বন্ড ছাড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। এখন আইএফসি, বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রণালয় বসে একটি কাঠামো ঠিক করে দ্রুত এই বন্ড ছাড়া হবে।”

আইএফসির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিভাগের কর্মকর্তারা চলতি বছর এপ্রিলে ওয়াশিংটনে বিশ্ব ব্যাংক সদর দপ্তরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে এক বৈঠকে এই বন্ড ছাড়ার প্রস্তাব দিলে তখনই প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার।

এরপর আইএফসি বাংলাদেশ সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠায় এবং তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অর্থমন্ত্রণালয় ৪ অক্টোবর এক চিঠিতে ‘টাকা বন্ড’ ছাড়ার অনুমোদনের বিষয়টি জানায়।

প্রবাসীদের জন্য ‘ডলার বন্ড’ থাকলেও বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো ‘টাকা বন্ড’ ছাড়া হচ্ছে। এর আগে ভারতেও এ ধরনের বন্ড চালু করে আইএফসি।  

গভর্নর বলেন, “এটা আমাদের জন্য গৌরবের বিষয়, এই প্রথম আমাদের টাকা আন্তর্জাতিক ফাইনানশিয়াল মার্কেটের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। আমাদের টাকা লন্ডন স্টক মার্কেটে লেনেলেন হবে। যে কেউ এই বন্ড কিনতে পারবে। ডলার দিয়ে এই বন্ড কিনতে হবে। সেই ডলার টাকায় কনভার্ট হয়ে তা বিনিয়োগ করা হবে।”

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সহকারী প্রধান ড. দেলোয়ার হোসেনও বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বৈঠকে যোগ দিতে লিমায় এসেছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “১১ অক্টোবর আইএফসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জিন ইয়ং কাইয়ের সঙ্গে আমাদের অর্থমন্ত্রীর বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে ‘টাকা বন্ডের’ সুদহারসহ কাঠামোগত অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।”

বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে বিনিয়ে বাড়াতেই আইএফসি এই বন্ড ছাড়ছে জানিয়ে গভর্নর আতিউর বলেন, আইএফসি বাংলাদেশে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করেছে। এই ১ বিলিয়ন ডলার ‘টাকা বন্ড’ ছাড়ার মাধ্যমে তাদের বিনিয়োগ আরও বাড়বে।

আইএফসির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের তহবিল সংগ্রহ করে তা বাংলাদেশি মুদ্রা টাকায় এ দেশের বাজারে ছাড়বে। যে কেউ এ বন্ড কিনতে পারবে।

এই বন্ড প্রবাসীদের জন্য ‘আকর্ষণীয় হবে’ মন্তব্য করে গভর্নর বলেন, “বিদেশের ব্যাংকে টাকা রাখলে কোনো সুদ পাওয়া যায় না। টাকা বন্ডে ৪/৫ শতাংশের মতো ইন্টারেস্ট থাকবে। আমাদের প্রবাসীরা তাদের সঞ্চয় ব্যাংকে না রেখে ‘টাকা বন্ডে’ বিনিয়োগ করলে ভালো মুনাফা পাবেন। অন্যরাও এ বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারবেন।”

মূলত দেশে বিনিয়োগ বাড়াতেই সরকার আইএফসির প্রস্তাবে রাজি হয়েছে বলে জানান আতিউর।

“এ কথা সত্যি যে, আমাদের বিনিয়োগে ঘাটতি আছে। এই বন্ড ছাড়ার মধ্য দিয়ে সে ঘাটতি পূরণ হবে আশা করি।”

কত দিনে ‘টাকা বন্ড’ বাজারে আসবে- এ প্রশ্নে গভর্নর বলেন, “বন্ড ছাড়ার ব্যাপারে আইএফসি ও বাংলাদেশ উভয়পক্ষই নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে যা যা দরকার তা দ্রুত শেষ করব। ইতোমধ্যে একজন উপদেষ্টাকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।”

বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভার উদ্বোধন হবে ৯ অক্টোবর। তার আগে বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন গভর্নর আতিউর রহমান। মঙ্গলবার সকালে তিনি কমনওয়েলথ গভর্নরদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

সেখানে তিনি বলেন, “রেমিটেন্সের অর্থ জঙ্গি অর্থায়নে যাচ্ছে- এমন যুক্তি দেখিয়ে অনেক দেশে বড় ব্যাংকগুলো রেমিটেন্স প্রবাহে বাধা সৃস্টি করছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।”

এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে কমনওয়েলথ দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানদের অনুরোধ করেন তিনি।

আতিউর রহমান আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর খলিল সাদিকীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও অংশ নেন।

বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৃহস্পতিবার পেরুতে পৌঁছে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন।

</div>  </p>