আওয়ামী লীগের রেকর্ড ভোট, বিএনপির অর্ধেক জামানতহারা

একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভোটের হার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে, বিএনপির এত বেশি প্রার্থীও আর কখনও জামানত হারাননি।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2019, 07:26 AM
Updated : 11 Jan 2019, 07:26 AM

নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ভোটের যে ফলাফল ঘোষণা করেছে, তাতে প্রদত্ত ভোটের ৭৬ দশমিক ৮০ শতাংশ পড়েছে আওয়ামী লীগের নৌকায়।

এর আগে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল প্রদত্ত ভোটের ৭২.১৪ শতাংশ, আর ১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে পেয়েছিল ৭৩.২০ শতাংশ।

দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ৩০ ডিসেম্বর ভোট হয় ২৯৯ আসনে। গোলযোগের কারণে একটি আসনের ফল সেদিন স্থগিত রাখা হয়। বাকি ২৯৮ আসনের ফলাফলের গেজেট ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।

২৯৮ আসনে ১০ কোটি ৩৫ লাখ ভোটারের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ ভোট সেদিন বাক্সে পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে রেকর্ড ৮৭.১৩ শতাংশ ভোট পড়েছিল।

 

# ১৯৮৬ সালে তৃতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে

# ১৯৮৮ সালে চতুর্থ সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অধিকাংশ দল বর্জন করে

# ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগসহ অধিকাংশ দল বর্জন করে

# ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপি ও শরিকরা বর্জন করে। ১৫৩ আসনে একক প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। ভোট হয় ১৪৭ আসনে

এবার আওয়ামী লীগ ও শরিক কয়েকটি দল মিলিয়ে নৌকার প্রার্থী ছিলেন ২৭১ জন। তাদের মধ্যে নৌকার প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ২৬৫টি আসনে। দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২৫৭ আসন।

অন্যদিকে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন মোট ২৮১ জন। সব মিলিয়ে প্রদত্ত ভোটের ১৩.৫১ শতাংশ পেয়েছেন ধানের শীষের প্রার্থীরা।

অতীতে বিএনপির ভোটের হার মোট প্রদত্ত ভোটের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করত। এত কম ভোট বিএনপি আর কোনো নির্বাচনে পায়নি।

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন পাঁচটি আসনে। আর জোটগতভাবে তারা পায় সাতটি আসন। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থগিত আসনেও বিএনপির প্রার্থী জয়ী হয়।    

অন্যদিকে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি ১৭৪ আসনে তাদের লাঙ্গল প্রতীকে প্রার্থী দিয়ে মোট প্রদত্ত ভোটের ৫.৩৭ শতাংশ পেয়েছে। লাঙ্গলের ইতিহাসে এটাই সর্বনিম্ন ভোট। ভোটের অংকে বিএনপির চেয়ে কম হলেও জাতীয় পার্টি এবার আসন পেয়েছে ২২টি।

ভোটের পরিসংখ্যানে দলগত অবস্থান: ১৯৭৩-২০১৮

 

আওয়ামী লীগ

বিএনপি

জাতীয় পার্টি

সাল

ভোট প্রাপ্তির হার

আসন

ভোট প্রাপ্তির হার

আসন

ভোট প্রাপ্তির হার

আসন

১৯৭৩

৭৩.২০%

২৯৩

-

-

-

-

১৯৭৯

২৬.৮৩%

৩৯

৪১.১৬%

২০৭

-

 

১৯৮৬

২৬.৮৩%

৭৬

-

-

৪২.৪৩%

১৫৩

১৯৯১

৩১.৮১%

৮৮

৩০.৮১%

১৪০

১১.৯২%

৩৫

১৯৯৬

৩৭.৪৪%

১৪৬

৩৩.৬১%

১১৬

১৬.৪০%

৩২

২০০১

৪০.২১%

৬২

৪০.৮৬%

১৯৩

৭.২৬%

১৪

২০০৮

৪৮.০৪%

২৩০

৩২.৫০%

৩০

৭.০৪%

২৭

২০১৪

৭২.১৪%

২৩৪

-

-

৭%

৩৪

২০১৮

৭৬.৮০%

২৫৭

১৩.৫১%

৫.৩৭%

২২

[এই তালিকায় উপ নির্বাচনের তথ্য যোগ করা হয়নি]

জামানত গেছে অধিকাংশের

দেশে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সবগুলোই একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়। দলীয় ও স্বতন্ত্র মিলে এবার প্রার্থী ছিলেন ১ হাজার ৮৫০ জনের বেশি। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৪২২ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে রেকর্ড ১৯৩৪ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়, যা মোট প্রার্থীর ৬৯ শতাংশ।

নির্বাচনী আইন অনুসারে একটি আসনে প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের একভাগ না পেলে প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। এবার ২০ হাজার টাকা জামানত দিতে হয়েছে প্রার্থীদের।

এবারের একাদশ সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসনে প্রার্থী ছিল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা মার্কায়। তাদের ২৯৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ২৯৬ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

ধানের শীষের ২৮১ প্রার্থীর মধ্যে ১৬০ জনের (৫৭ শতাংশ) জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে এবার। আর লাঙ্গলের ১৭৪ প্রার্থীর মধ্যে ১৫০ জন (৮৬ শতাংশ) জামানত হারিয়েছেন। আওয়ামী লীগের কেউ জামানাত হারাননি।

নবম সংসদ নির্বাচনে ৯৬৯ জন জামানত হারিয়েছিলেন। তার মধ্যে আওয়ামী লীগের চার জন, বিএনপির ১৪ জন ও জাতীয় পার্টির ১৩ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়মী লীগের কেউ জামানত হারাননি, জাতীয় পার্টির ৪১ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল।

জামানতের খতিয়ান

 

ভোটের হিসাব

প্রার্থীর প্রতীক

বাজেয়াপ্ত

বাজেয়াপ্ত নয়

মোট

 

প্রার্থীর প্রতীক

মোট

%

হাত পাখা

২৯৬

২৯৭

 

নৌকা

৬৩১৭৬১১৪

৭৬.৮০%

ধানের শীষ

১৬০

১২১

২৮১

 

ধানের শীষ

১১১১১৭৩৯

১৩.৫১%

লাঙ্গল

১৫০

২৪

১৭৪

 

লাঙ্গল

৪৪১৮৯০০

৫.৩৭%

গোলাপ ফুল

৮৯

৮৯

 

হাত পাখা

১২৫৪৮০০

১.৫৩%

আম

৭৯

৭৯

 

সিংহ

৪৯৫২৭৮

০.৬০%

কাস্তে

৭৪

৭৪

 

আপেল

৩৬৪৬০১

০.৪৪%

টেলিভিশন

৫৭

৫৭

 

ট্রাক

২১০৫৩৩

০.২৬%

হারিকেন

৪৮

৪৮

 

ডাব

১৮৪৮২২

০.২২%

সিংহ

৪৬

৫২

 

বাইসাইকেল

১৮২৬১১

০.২২%

মই

৪৪

৪৪

 

মটরগাড়ি (কার)

১৩১৭৭৮

০.১৬%

কোদাল

২৮

২৮

 

গোলাপ ফুল

১০৯৩৪৬

০.১৩%

মিনার

২৫

২৫

 

উদীয়মান সূর্য্য

১০৩৫৩৪

০.১৩%

মোমবাতি

২৫

২৫

 

কলার ছড়ি

৭৩৩৫১

০.০৯%

বট গাছ

২৪

২৪

 

মোমবাতি

৬০৩৬৭

০.০৭%

কুলা

২৩

২৩

 

কাস্তে

৫৫৪১৭

০.০৭%

আপেল

২১

২৩

 

আম

৩৬০৬৭

০.০৪%

উদীয়মান সূর্য্য

১৯

২০

 

চেয়ার

৩১০১৭

০.০৪%

চেয়ার

১৮

১৮

 

মাথাল

২৮৮৯৫

০.০৪%

ফুলের মালা

১৬

১৬

 

মশাল

২৭৪৭৪

০.০৩%

তারা

১৫

১৫

 

ছাতা

২৫১৫২

০.০৩%

বাঘ

১৪

১৪

 

কুলা

১৮১৮৩

০.০২%

মটরগাড়ি (কার)

১৪

১৫

 

কোদাল

১৮০৪৩

০.০২%

মাছ

১৩

১৩

 

মই

১৭৫৯১

০.০২%

কাঁঠাল

১১

১১

 

হারিকেন

১৫১১৬

০.০২%

দেওয়াল ঘড়ি

১০

১০

 

টেলিভিশন

১৩৮৪২

০.০২%

বাইসাইকেল

১০

১১

 

মিনার

১১৩২৮

০.০১%

কুঁড়ে ঘড়

 

দেওয়াল ঘড়ি

১১২০৩

০.০১%

ট্রাক

 

বট গাছ

৯৭৯৬

০.০১%

মশাল

 

কুঁড়ে ঘড়

৮৩৬৭

০.০১%

কবুতর

 

বাঘ

৬১১৩

০.০১%

কুড়াল

 

ফুলের মালা

৬০৮৭

০.০১%

খেঁজুর গাছ

 

মাছ

৫২৭৭

০.০১%

গামছা

 

গাভি

৫১৭৬

০.০১%

রিক্সা

 

কাঁঠাল

৪৬০৬

০.০১%

ছাতা

 

হুক্কা

৩৭৯৮

০.০০%

ডাব

 

তারা

৩১১৯

০.০০%

হুক্কা

 

রিক্সা

২৮৯৯

০.০০%

গাভি

 

খেঁজুর গাছ

২৩৪৫

০.০০%

দালান

 

হাতুড়ি

১৭২৯

০.০০%

নোঙ্গর

 

কবুতর

১৬৪১

০.০০%

মাথাল

 

নোঙ্গর

১৬৩০

০.০০%

হাতুড়ি

 

কুড়াল

১৪০৩

০.০০%

কলার ছড়ি

 

ছড়ি

১২১৯

০.০০%

গরুর গাড়ি

 

গামছা

৫৯৭

০.০০%

চাকা

 

দালান

৫০৩

০.০০%

ছড়ি

 

একতারা

৪২৮

০.০০%

একতারা

 

চাকা

৩৮৭

০.০০%

ফুলকপি

 

বেলুন

৩১৬

০.০০%

বেঞ্চ

 

ফুলকপি

৩০২

০.০০%

বেলুন

 

রকেট

২৫৪

০.০০%

রকেট

 

হাত (পাঞ্জা)

২২৮

০.০০%

হাত (পাঞ্জা)

 

গরুর গাড়ি

১১১

০.০০%

হাত ঘড়ি

 

বেঞ্চ

৫৬

০.০০%

নৌকা

২৭১

২৭১

 

হাত ঘড়ি

৫৫

০.০০%

 

 

 

 

 

 

 

 

মোট

১৪২২

৪৩৩

১৮৫৫

 

মোট

৮২২৫৫৫৪৪

১০০.০০%

পুরনো খবর