নতুন নজির গড়া শেখ হাসিনার সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ

এক দশকে অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করে ‘উন্নত-সমৃদ্ধ’ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখানো শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার প্রধান হওয়ার অনন্য নজির গড়তে চলেছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Dec 2018, 06:07 PM
Updated : 31 Dec 2018, 00:04 AM

রোববার অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে আওয়ামী লীগ; ভোটের প্রচারে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার গুরুত্বের কথাই বলে আসছিলেন দলটির নেতারা।

রোববার ভোট হওয়া ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২৮৮টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ ও তার জোটসঙ্গীরা। তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তাদের মিত্রদের জুটেছে মাত্র সাতটি আসন।

এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার শক্ত অবস্থান আরও পোক্ত হল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে নিহত হওয়ার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রথম সরকার গঠন করেন তার মেয়ে শেখ হাসিনা।

তবে ২০০১ সালের নির্বাচনে হারতে হয় তাকে, যার পেছনে বিদেশের ষড়যন্ত্র ছিল বলে তিনি নিজেই বিভিন্ন সময় বলে আসছেন।

এরপর ২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার নতুন ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হয় তাকে; তাকে রাজনীতি থেকে বাদ দেওয়ার সেই চেষ্টার মধ্য দিয়ে দৃশ্যত আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠেন তিনি।

শেখ হাসিনা: টানা তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সামনে

এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে শেখ হাসিনা যখন দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন তখন বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ এর কাছাকাছি, ২০১৮ সালে এই নির্বাচনের প্রাক্কালে সেই প্রবৃদ্ধি ৮ ছুঁই ছুঁই। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তিতে ২০২১ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১০ এর ঘরে নিতে চান শেখ হাসিনা।

যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর জামায়াতে ইসলামীর নাশকতা মোকাবেলা করে ২০১৪ সালে ভোটের সামনে এলে আবার বিএনপির চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হাসিনা।

বিএনপি-জামায়াত জোটের ভোট ঠেকানোর আন্দোলন এবং পরের বছর টানা তিন মাসের হরতাল-অবরোধ ঠেকিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে অনেকটাই দুর্বল করে ফেলেন শেখ হাসিনা।

এরপর জঙ্গি গোষ্ঠীর আক্রমণ সামাল দিতে হয় তাকে। ২০১৬ সালের গুলশান হামলার পর জঙ্গি দমনেও সাফল্য পায় বাংলাদেশ।

এরপর কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতাহীন পরিবেশে দ্রুত এগিয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। ঝামেলাহীন ব্যবসার পরিবেশ নিশ্চিতে তার গুনগান গাইছেন ব্যবসায়ীরা।

অধিকাংশ দলের বর্জনের মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচন করার সমালোচনার প্রেক্ষাপটে একাদশ সংসদ নির্বাচনে যখন সব দলের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত ছিল, তখন আকস্মিকভাবে সংলাপে বিএনপিকে ডেকে নিয়ে তাকে নির্বাচনেও এনে রাজনৈতিক কৌশলে এগিয়ে যান শেখ হাসিনা।

এরমধ্যে দুর্নীতির মামলায় প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়া কারাগারে গেলে কার্যত এখন অপ্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হাসিনা। বিএনপি আওয়ামী লীগেরই এস সময়ের নেতা কামাল হোসেনকে পাশে রেখে চ্যালেঞ্জ নিয়ে নামলেও ভোটের মাঠে হালে পানি পায়নি।

এবারের নির্বাচনের ইশতেহারে আওয়ামী লীগ গুরুত্ব দিয়েছে অর্থনৈতিক অগ্রগতির উপর; তারা বলেছে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রা’র কথা।

তারা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গ্রামাঞ্চলে উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়ে গ্রাম ও শহরের মধ্যে বিভেদ ঘোচানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বাংলাদেশের শহর থেকে গ্রাম সব জায়গার মানুষের হাতে মোবাইল টেলিফোন ও ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রশংসিত হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার।

শেখ হাসিনা বলেছেন, টানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেলে তার দল ‘টেকসই বিনিয়োগ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন’ নিশ্চিৎ করবে। এটাই তাদের এবারের অঙ্গীকার।

ভোটের আগে আওয়ামী লীগ নেতারা বার বারই বলছিলেন, উন্নয়নেই তাদের ফের ক্ষমতায় নিতে ভোট নিশ্চিত করবে।

তবে এর মধ্যেই মানবাধিকার নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনা শুনতে হয়েছে শেখ হাসিনার সরকারকে। কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দুর্নীতির লাগাম টানতে না পারার সমালোচনা রয়েছে। এই ১০ বছরে ব্যাংক খাত নিয়ে নিয়মিতই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় সরকারের নীতি-নির্ধারকদের।

দুর্নীতি যে পুরোপুরি নির্মূল হয়নি, তা স্বীকার করেছেন শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও।

সংসদ ও রাজনীতিতে একচ্ছত্র আধিপত্য  নিশ্চিতের পর এখন শেখ হাসিনার সামনে দুর্নীতিমুক্ত রেখে অর্থনীতির অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা ও মানবাধিকার নিশ্চিতের বিষয়টিই চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন রাজনীতির বিশ্লেষকরা।  

আর শেখ হাসিনা বরাবরই বলছেন, তিনি চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পান না।

বঙ্গবন্ধুকন্যার ভাষায়, তার রাজনীতি নিজের জন্য নয়, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নেই তার এই পথচলা।