ভোট দেননি ধানের শীষের প্রার্থী আব্বাস-আফরোজা
জয়ন্ত সাহা, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 30 Dec 2018 10:17 PM BdST Updated: 30 Dec 2018 10:20 PM BdST
ভোট দিতে এসে ‘আওয়ামী লীগ কর্মীদের আধিপত্যে’ ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখল ও ভোটারদের উপর হামলার অভিযোগ তুলে ভোট না দিয়ে ফিরে যান ঢাকার দুই আসনে বিএনপির প্রার্থী মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস।
মহাজোটের প্রার্থী রাশেদ খান মেননের বিপক্ষে ঢাকা-৮ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
তার স্ত্রী ও মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা ধানের শীষ নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছিলেন পাশের ঢাকা-৯ আসনে নৌকার প্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরীর বিপক্ষে।
ভোটের দিন রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শাহজাহানপুরে মির্জা আব্বাস মহিলা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে এসে পরিবেশ দেখে ক্ষুব্ধ ও হতাশ হন মির্জা আব্বাস। এ সময় আফরোজা আব্বাসও তার সঙ্গে ছিলেন।
ভোটকেন্দ্রে নিজের সমর্থক, এজেন্টদের কাছ থেকে আওয়ামী লীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখল ও ভোটারদের উপর হামলার নানা অভিযোগ শোনেন মির্জা আব্বাস।
‘প্রহসনের নির্বাচন’ হচ্ছে অভিযোগ করে এ সময় মির্জা আব্বাস সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে ভোট দেবেন না তিনি। এরপর বাসায় ফিরে গিয়ে আর বেরোননি বিএনপির এই প্রার্থী।
কেন্দ্রে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “এখানো কোনো নির্বাচন হচ্ছে না, যা হচ্ছে প্রহসন।”
ঢাকা-৮ ও ঢাকা-৯ আসনে নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোতে বিএনপির এজেন্টরা অবস্থান করতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন সাবেক সাংসদ মির্জা আব্বাস।
এ সময় তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস অভিযোগ করেন, ভোট শুরুর আগে শনিবার রাতেই এই দুই আসনে ‘নৌকা প্রতীকে সিল মেরে গেছেন’ আওয়ামী লীগ কর্মীরা।
নিজের ভোটও না দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমার ভোটাররাই যেখানে ভোট দিতে পারছেন না, আমি ভোট দেব কী করে? আমি এ নির্বাচনে ভোট দেব না।”
নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা বা কমিশনে অভিযোগ করবেন কি না জানতে চাইলে আফরোজা বলেন, “এ নির্বাচন কমিশন অন্ধ ও কালা। কোনো দিক থেকে ভোট রক্ষার কোনো পদক্ষেপ নেই। আমি ভোট দিলাম না।”
পরে বিকালে মির্জা আব্বাস ও আফরোজা আব্বাস একসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ তোলেন। ক্ষমতাসীনরা বিএনপি সমর্থক ভোটারদের চিহ্নিত করে তাদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা।
নির্বাচনের আগে ‘নীরব ভোট বিপ্লবের’ আশা করেছিলেন ঢাকা-৯ আসনের প্রার্থী আফরোজার সমর্থকরা।
কিন্তু ভোটের দিন কেন্দ্রে আসা সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে অনেকের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে কালি মেখে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন আব্বাস দম্পতি।
বিএনপির এজেন্টদের ‘প্রাণনাশের’ হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
আওয়ামী লীগ সমর্থকদের কাছ থেকে হুমকি পাওয়ার দাবি করেছেন রাজধানীর মাদারটেক আব্দুল আজিজ স্কুল অ্যান্ড কলেজে দায়িত্বরত বিএনপির এজেন্ট হোসনে আরা, নুসরাত জাহান ও সাহারা বেগম।
বেলা ২টার দিকে দুপুরের খাবারের পর তাদের ‘কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়’ বলে অভিযোগ করেন তারা।
ওই সময় সাহারা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের প্রাণের ভয় আছে। ওরা হুমকি দিচ্ছে- বের হয়ে না গেলে, অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলবে বলে হুমকি দিয়েছে। আমরা কেন্দ্র ছেড়ে চলে যাব।”
তবে বিএনপির এজেন্টদের এই অভিযোগ অস্বীকার করেন সেখানকার প্রিজাইডিং অফিসার মো. মোসলেম উদ্দিন।
তিনি বলেন, “কেন্দ্রে সব দলের এজেন্ট রয়েছে। কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রয়েছে।”
ভোটে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন ঢাকা-৯ আসনের সাধারণ ভোটাররাও। তাদের ভাষ্য, ভোটার আইডি কার্ড সাথে থাকার পরও অনেকে স্লিপ পাননি।
মির্জা আব্বাস মহিলা কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা মনসুর আহমেদ বলেন, “আমাদের বলা হয়েছিল, কেন্দ্রে এসে এজেন্টদের কাছ থেকে আমরা স্লিপ পাব। কিন্তু সকাল ১১টার দিকে আমরা কোনো এজেন্টকে পাইনি কেন্দ্রে এসে।”
বেলা ১১টার দিকে এই কেন্দ্রের ভোটাররা ছেঁকে ধরেন প্রিজাইডিং অফিসার ওয়ালি উল ইসলামকে।
ভোটার আইডি কার্ড দেখিয়ে ভোট দেওয়ার বিধান থাকলেও কেন্দ্রে কেন মানা হচ্ছে না- তা জানতে চাওয়া হয় তার কাছে।
সে সময় তাদের ওই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি ওয়ালি উল ইসলাম। ‘ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে কেন?’ স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানান একদল লোক।
পরে ওয়ালি উল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “ইলেকশন কমিশনের লিস্টের সাথে মিলিয়ে দেখে আমরা দেখেছি, সে তালিকায় তাদের নাম নেই। তালিকার বাইরে গিয়ে আমরা কিছু করতে পারব না।”
জাতীয় পরিচয়পত্র দেখানোর পরও কেন ভোট দেওয়া যাবে না এ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে পড়েন তিনি।
এ সময় কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের দৃশ্য ধারণ করতে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের বাধা দেওয়া হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে ঢাকা-৮ আসন। মন্ত্রিপাড়া, সচিবালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মতিঝিল ব্যাংকপাড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকা নিয়ে গঠিত এই আসনে এবার ১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
মেনন ও আব্বাস ছাড়া ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আবুল কাশেম (হাতপাখা), জাতীয় পার্টির মো. ইউনুস আলী আকন্দ (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. ছাবের আহাম্মদ (কাজী ছাব্বীর) (আম) এবং বাসদের শম্পা বসু (মই)।
ঢাকা-৯ আসনে সাবের হোসেন ও আফরোজা আব্বাসের সঙ্গে ভোটের লড়াইয়ে ছিলেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির মাহফুজা আক্তার (আম), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোহাম্মদ মানিক মিয়া (হাতপাখা), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফের মোহাম্মদ শফি উল্লাহ চৌধুরী (টেলিভিশন), বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মো. আ. মোতালেব (হারিকেন) এবং জাকের পার্টির মো. হুমায়ন কবীর (গোলাপ ফুল)।
WARNING:
Any unauthorised use or reproduction of bdnews24.com content for commercial purposes is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.
সর্বাধিক পঠিত
- কোথায় কখন লোড শেডিং, সময় বেঁধে দেওয়ার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর
- সঙ্কট আসতে পারে, প্রস্তুত থাকতে হবে: কাদের
- রুট-বেয়ারস্টোর সেঞ্চুরিতে রেকর্ড গড়ে ভারতকে হারাল ইংল্যান্ড
- পিএসজির নতুন কোচ গালতিয়ে
- ফেইসবুকে ধর্ম নিয়ে মন্তব্য: স্কুল শিক্ষকের ৮ বছরের কারাদণ্ড
- মোবাইল থেকে ব্যাংকে টাকা পাঠানোর সীমা নির্ধারণ
- এক ম্যাচ নিষিদ্ধ ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার রিশার্লিসন
- লাইসেন্স ছাড়া মোটরসাইকেল নিবন্ধন আর নয়
- আত্মহত্যায় প্ররোচনা: হেনোলাক্সের নুরুল আমিন ও স্ত্রী গ্রেপ্তার
- কোহলির রেকর্ড ভেঙে বাবর বললেন, ‘পরিশ্রমের ফসল’