সালমানের কেন্দ্রে অমোচনীয় কালিতে ‘মানা’

ঢাকা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সালমান এফ রহমানের কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার সময় হাতে ভোটের চিহ্ন অমোচনীয় কালি লাগাতে নিষেধ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তাবারুল হক দোহার থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Dec 2018, 05:37 AM
Updated : 30 Dec 2018, 05:37 AM

রোববার দোহারের মুকসুদপুর ইউনিয়নের সাইনপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিলেও আওয়ামী লীগ কর্মীদের ‘নির্দেশে’ হাত কালি লাগানো হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন কয়েকজন ভোটার।

এছাড়া এ আসনের বিভিন্ন কেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশে বাধ সাধছেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

সাইনপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সকাল সোয়া ৮টার দিকে সেখানে ভোট দিতে আসেন নৌকার প্রার্থী সালমান। গোপন কক্ষে না গিয়ে নেতাকর্মীদের সামনে প্রকাশ্যেই ভোট দেন তিনি।

প্রার্থী সালমান এফ রহমান ভোট দেওয়ার ছবি তোলার চেষ্টা করলেও নেতাকর্মীরা তাতে বাধা দেন ওই সময়।

সালমান ভোট দেওযার পর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে প্রিজাইডিং অফিসারের উদ্দেশ্যে সালমানের সমর্থকদের বলতে শোনা যায়, ভোট নেওয়ার সময় যেন কোনো ভোটারের আঙুলে কালি লাগানো না হয়। একজনকে ভোট কেন্দ্রের ভেতর থেকে কালির বাক্স বের করে ফেলারও নির্দেশ দেন এক নেতা।

পরে কয়েকজন ভোটার সেই কেন্দ্র থেকে ভোট দিয়ে বের হলেও তাদের হাতে অমোচনীয় কালি লাগানো দেখা যায়নি।

ভোট দেওয়ার পর আঙুলে কালির দাগ না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল মজিদ নামে এক ভোটার বলেন, “ভোট দিয়েছি কিন্তু আঙুলে কালি লাগায় নাই।”

তার মতো একই কথা বলেন, মোহাম্মদ মোল্লা নামে আরেক ভোটার। বিডিনিউজটোয়েনিটফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কালি তারা দেয়নি। নাই ওইখানে, দেয় নাই।”

তবে এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলেও কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

জাল ভোট ঠেকাতে ভোটারের বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলে অমোচনীয় কালির চিহ্ন লাগিয়ে দেওয়ার নিয়ম আছে নির্বাচন কমিশনের বিধিতে।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, কোনো ভোটার অমোচনীয় কালির কলমের চিহ্ন লাগাতে অস্বীকৃতি জানালে অথবা তার যে কোনো আঙ্গুলে অমোচনীয় কলমের কালির চিহ্ন থাকলে তাকে ব্যালট পেপার দেওয়া হবে না।

এর আগে সকাল সোয়া ৮টার দিকে সাইনপুকুর স্কুল কেন্দ্রে ভোট দিয়ে জয়ের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন নৌকার প্রার্থী সালমান এফ রহমান।

তিনি বলেছেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট শেষ হবে। জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে এ আসন ‘উপহার দিতে পারবেন’ তিনি।

“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত কয়েক বছর ধরে যে উন্নয়ন করেছেন, নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের সময় আমি দেখেছি সম্মানিত ভোটাররা উন্নয়টা চায়। এই উন্নয়ন ভোটাররা ধরে রাখতে চান। তার জন্য আমার মনে হয় সবাই নৌকায় ভোট দিবেন।”

আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে সালমান এফ রহমান বলেন, “পরিস্থতি ভাল আছে। আমি তাদের দায়িত্ব পালনে খুবই সন্তুষ্ট। ভোটদানের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে বলে আমি মনে করি না।”

ঢাকা-১ আসনে বেক্সিমকো গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার সালমানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মোটরগাড়ি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সালমা ইসলাম।

যমুনা গ্রুপের মালিক নুরুল ইসলাম বাবুলের স্ত্রী সালমাকে ইতোমধ্যে সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়েছে ওই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না থাকা বিএনপি।

দোহার-নবাবগঞ্জের এই আসনের বিভিন্ন কেন্দ্রে সাংবাদিকদের বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটছে জানিয়েছেন সেখানে দায়িত্বরত সাংবাদিকরা।

সকাল সোয়া ৯টার দিকে মকসুদপুর শামসুদ্দিন শিকদার উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রের ফটকেই সাংবাদিকদের আটকে দেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা।

এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে জানান তারা।

প্রিজাইডিং কর্মকর্তা জিল্লুর রহমানেরর অনুমতি নিয়ে আসার জন্য বললে একজন আনসার সদস্য পাঁচ মিনিট পরে এসে বলেন, “স্যার এখন ব্যস্ত আছেন।”

সাড়ে ৯টার দিকে পার্শ্ববর্তী নারিশা পশ্চিম চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রের বাইরে সাংবাদিকদের দেখে এগিয়ে আসেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মুজাহিদুল ইসলাম।

সাংবাদিকদের পথরোধ করে তিনি বলেন, “আমাদের কিছু নির্দেশনা আছে। আপনারা ভোট কেন্দ্রের বাইরের ছবি নিতে পারবেন। কিন্তু ভোটকেন্দ্রের ভেতরে আসার সুযোগ নেই।”  

মালিকান্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪৯ নম্বর ভোটে কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদও সাংবাদিকদের ভোট কেন্দ্রের বাইরে আটকে দেন। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ভোটারদের সঙ্গে কথা বলতে বা ছবি তুলতে দেননি তিনি।