টানটান উত্তেজনার ভোটের সামনে বাংলাদেশ

পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর কিছু সংঘাতে উত্তেজনা ছড়ানোর মধ্যে প্রচার শেষে ভোটের সরঞ্জাম পৌঁছে গেছে কেন্দ্রে কেন্দ্রে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও প্রস্তুত সব স্থানে, সব মিলিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Dec 2018, 07:27 PM
Updated : 29 Dec 2018, 08:22 PM

নানা অনিশ্চয়তা পেরিয়ে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলেও ভোটের আগের দিন সন্দেহ আর আশঙ্কাই ফুটে উঠল দুই প্রধান দলের কথায়।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আশঙ্কা, ভোটের দিন দেশজুড়ে নাশকতা চালাতে পারে বিএনপি জোট। সেই রকম `তথ্য রয়েছে’ বলেও দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।

অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কণ্ঠে সন্দেহ, সরকার আর ইসির ‘যোগসাজশে কারচুপির দিকে যাচ্ছে’ নির্বাচন। তার ভাষায়, নির্বাচন প্রক্রিয়াটি `অর্থহীন’ হয়ে এসেছে।

আবার দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি কামাল হোসেনকে সঙ্গী করে ভোটে এলেও থাকবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ফুটেছে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কথায়।

টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনে আশাবাদী শেখ হাসিনা

ভোটগ্রহণের মাঝপথে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও সেজন্য তিনি অন্য দলগুলোর প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে তার এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা কামাল হোসেন একটা কিন্তু রেখে দিয়ে বলেছেন, তারা ‘নিজ থেকে’ নির্বাচন থেকে সরে যাবেন না

রাজনৈতিক অঙ্গনে এই উত্তাপ আর দেশজুড়ে চলা শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে রোববার দেশজুড়ে ভোট দিতে যাচ্ছেন সাড়ে ১০ কোটি ভোটার, যার প্রস্তুতিতে ব্যয় হচ্ছে ৭০০ কোটি টাকা।

এই ভোটাররা রায় দেবেন, ‘উন্নয়নের ধারাবাহিকতা‘র উপর জোর দেওয়া আওয়ামী লীগই কি টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় বসবে, না কি ‘গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের’ ডাক দেওয়া বিএনপি জোট এক যুগ পর ফিরে আসবে ক্ষমতায়।

জাতীয় সংসদে আসন সংখ্যা ৩০০ হলেও রোববার ২৯৯টি আসনে নির্বাচন হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী টি আই এম ফজলে রাব্বীর মৃত্যুর কারণে গাইবান্ধা-৩ আসনে ভোট হবে আগামী ২৭ জানুয়ারি।

ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যে ভোটগ্রহণের আগের রাতে মোবাইল ইন্টারনেটও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পুরোপুরি; গুজব ছড়ানো ঠেকাতে এই পদক্ষেপ বলে দাবি করা হলেও এ নিয়ে নাগরিকদের অসন্তোষও দেখা দিয়েছে।

ভোটতথ্য

>> ভোটার: ১০ কোটি ৩৮ লাখ ২৬ হাজার ৮২৩; ৫ কোটি ২৩ লাখ ৭১ হাজার ৬২০ পুরুষ; ৫ কোটি ১৪ লাখ ৫৫ হাজার ২০৩ নারী।

>> ভোটের সময়: ভোট চলবে রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।

>> কেন্দ্র ও ভোটকক্ষ: ৪০ হাজার ৫১টি ভোট কেন্দ্র; ভোট কক্ষ ২ লাখ ৫ হাজার ৬৯১টি।

>> কীভাবে ভোট: ঢাকা-৬, ঢাকা-১৩, চট্টগ্রাম-৯, রংপুর-৩, খুলনা-২ এবং সাতক্ষীরা-২ আসনে ভোটগ্রহণ হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম); বাকি ২৯৩টি আসনে ভোট হবে ব্যালট পেপারে।

# ইভিএমের ৬টি আসনে ৮৪৫টি কেন্দ্রের ৫ হাজার ৪৫টি ভোটকক্ষে মোট ২১ লাখ ২৪ হাজার ৫৫৪ ভোটার। মোট প্রার্থী ৪৮ জন।

>> ফল ঘোষণা: কেন্দ্রে কেন্দ্রে গণনা শেষে প্রিজাইডিং অফিসাররা লিখিত ফলাফল রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠাবেন। রিটার্নিং অফিসাররা তা ইসিতে পাঠাবেন। ঢাকায় নির্বাচন ভবন থেকে ঘোষণা হবে আনুষ্ঠানিক ফল।

>> প্রতিদ্বন্দ্বী: লড়াইয়ে রয়েছেন ১৮৬১ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৭৩৩ জন ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী; বাকি ১২৮ জন স্বতন্ত্র।

# এককভাবে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী ইসলামী আন্দোলনের ২৯৮জন; আওয়ামী লীগের প্রার্থী ২৬১ (নৌকা ২৭৪), বিএনপির প্রার্থী ২৭২ (ধানের শীষ ২৯৭)।

# আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিক ১৬টি দল নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছে। তাদের জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টির প্রতীক লাঙ্গল।

# বিএনপিসহ তাদের জোট শরিক আটটি দল ধানের শীষে ভোট করছে এবার। নিবন্ধিত দলের বাইরে জামায়াত ও নাগরিক ঐক্যের প্রার্থীরা ধানের শীষ প্রতীকে লড়ছেন। আইনি জটিলতায় বিএনপির প্রার্থী নেই দেড় ডজন আসনে।

>> ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা: ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা এবং ৫৮২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা উপজেলা পর্যায়ে সার্বিক তত্ত্বাবাধনে দায়িত্ব পালন করবেন। ৪০ হাজার ১৮৩ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা থাকবেন কেন্দ্রের দায়িত্বে। তাদের অধীনে ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং ৪ লাখ ১৪ হাজার ৬২৪ জন পোলিং কর্মকর্তা।

>> পর্যবেক্ষক: ৮১টি দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার, ৯০০ জন প্রতিনিধি, ৩৮ জন (ফেমবোসা, এএইএ, ওআইসি ও কমনওয়েল্থ থেকে আমন্ত্রিত) বিদেশি পর্যবেক্ষক, বিভিন্ন বিদেশি মিশনের ৬৪ জন কর্মকর্তা এবং দূতাবাস ও বিদেশি সংস্থায় কর্মরত ৬১ জন বাংলাদেশি।

>> নিরাপত্তা: ভোটের মাঠের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন বাহিনীর ৬ লাখ ৮ হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।

# এর মধ্যে ১ লাখ ২১ হাজার পুলিশ; ৪ লাখ ৪৬ হাজার আনসার এবং ৪১ হাজার গ্রাম পুলিশ রয়েছেন। ৬০০ প্লাটুন (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) র‌্যাব এবং ৯৮৩ প্লাটুন (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) বিজিবি সদস্যও রয়েছেন ভোটের মাঠে।

# এর বাইরে ৩৮৯ উপজেলায় ৪১৪ প্লাটুন  (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন )  সেনা সদস্য, ১৮ উপজেলায় নৌবাহিনীর ৪৮ প্লাটুন (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) এবং ১২ উপজেলায় ৪২ প্লাটুন (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) কোস্টগার্ড ভোটের দায়িত্ব পালন করছেন।

# সারা দেশে ১ হাজার ৩২৮ জন নির্বাহী হাকিম এবং ৬৪০ জন বিচারিক হাকিম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে থাকবেন। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ১২২টি নির্বাচনী তদন্ত কমিটির ২৪৪ জন সদস্য থাকবেন ভোটের মাঠে।

>> গাড়ি বন্ধ: ভোটের দিন ২৪ ঘণ্টা নির্বাচনী এলাকায় ট্যাক্সি ক্যাব, বেবিট্যাক্সি/অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পো, লঞ্চ, ইজিবাইক, ইঞ্জিনবোট ও স্পিডবোট চলাচলের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মোটর সাইকেলের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকবে শনি থেকে সোম তিন দিন।

বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের বর্জনের মধ্যে ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন অর্ধেকের বেশি প্রার্থী। অভিযোগবিদ্ধ ওই নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছিল। আওয়ামী লীগ একাই ২৩৪ আসন নিয়ে সরকার গঠন করে।

ওই নির্বাচন ঠেকানোর ডাক দিয়েও ব্যর্থ বিএনপি পরের বছর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটানোর আন্দোলনে নামে; টানা তিন মাসের ওই হরতাল-অবরোধে নাশকতায়  শতাধিক মানুষের প্রাণহানির মধ্যে তাদের সেই আন্দোলন শেষ হয়।

এরপর বিএনপি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবি জিইয়ে রাখলেও জোরদার আন্দোলনের পথে আর হাঁটেনি। তবে বলে আসছিল, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার না হলে তারা ভোটই করতে দেবে না।

এরপর এই বছরই বড় ধাক্কা আসে বিএনপির জন্য, ফৌজদারি মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাগারে যেতে হয় খালেদা জিয়াকে; আইনি চেষ্টা চেষ্টা চালিয়েও তাকে আর বের করতে পারেনি দলটি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা

এর মধ্যে ভোটের সময় ঘনিয়ে এলে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে চমক দেখায় বিএনপি; পাল্টা চমকে এতদিন ধরে ‘না’ করে আসার পর রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে ডাকেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দুই দফা সংলাপে বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবির কোনো সুরাহা না হলেও খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেই ভোটের মাঠে পা রাখে তারা; এই আশা করে যে জনগণ ব্যালটেই দেবে জবাব।

অন্যদিকে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতকে পাশে রাখা ঐক্যফ্রন্টকে জনগণই প্রত্যাখ্যান করবে আশা রেখে ভোটের লক্ষ্যে এগিয়ে  যায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

জোটের ফাঁক গলে চিত্রবদল

ক্ষমতার জন্য দুই প্রধান জোটের ভোটের লড়াইয়ে এবার প্রার্থী নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়তে হচ্ছে অনেক ভোটারকে। আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করে আসা কাউকে ভোটাররা দেখছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে; অন্যদিকে বিএনপির বিরোধিতা করে আসা কাউকে দেখা যাচ্ছে ধানের শীষ প্রতীকে।

এর মধ্যে সবচেয়ে নাটকীয় ছিল আওয়ামী লীগ আমলের অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়ার হবিগঞ্জে ধানের শীষের প্রার্থী হওয়া। কিবরিয়া হত্যা মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির নেতারা; সেই দলের নেতাদের নিয়েই এবার প্রচার চালাতে হয়েছে রেজাকে। 

লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নান, যিনি ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হারিয়ে ছিলেন ভোটে।

কিছু দিন আগেও জিয়াউর রহমানের প্রশস্তি গাওয়া মান্নানকে নৌকার প্রার্থী হিসেবে দেখার পাশাপাশি রামগতির ভোটারদের ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে দেখতে হচ্ছে ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী আ স ম আবদুর রবকে।

মুজিব কোট পরেই ধানের শীষে ভোট চাইছেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর

এই রকম ঘটনা ঘটেছে মৌলভীবাজারেও; এক সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মো. মনসুর এখন ধানের শীষের প্রার্থী; অন্যদিকে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য এম এম শাহীন এবার নৌকার প্রার্থী।

জোট গড়ার এই রাজনৈতিক খেলায় বিএনপি নেতাদের পাশে রেখে সংবাদ সম্মেলনে কামাল হোসেনের বঙ্গবন্ধু বন্দনার পাশাপাশি জিয়াউর রহমানের প্রশস্তি গাওয়া এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে দেখা গেল আওয়ামী শিবিরে।

বিএনপির সঙ্গে গিয়ে জামায়াতের সঙ্গে একই প্রতীকে ভোট করা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রী কামাল।

আওয়ামী লীগ তাদের ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে মিত্র দল জাতীয় পার্টিকে নিয়ে মহাজোট করে ভোটে করলেও নানা নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছেন এইচ এম এরশাদ। সবশেষে তিনি শেখ হাসিনাকে সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা দিলেও মহাজোটের বাইরে লাঙ্গলের প্রার্থীদের আবার ভোটের লড়াইয়ে রেখে দিয়েছেন।

আশায় দুই দলই

ভোটের আগে নির্বাচনী ইশতেহারে দুই দলই নানা অঙ্গীকার করেছে দেশবাসীর প্রতি; আওয়ামী লীগ বলছে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রা’র কথা; বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বলছে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ করে রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে দেওয়া কথা।

শেখ হাসিনা বলেছেন, টানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেলে তার দল ‘টেকসই বিনিয়োগ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন’ নিশ্চিৎ করবে। এটাই তাদের এবারের অঙ্গীকার।

উন্নয়নের উপর ভর করে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় যাবে বলে আশাবাদী প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ও।

ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছে ব্যালট, এই ব্যালটেই আসবে রায়

তিনি বলেছেন, “মানুষের জীবনের উন্নয়ন আমরা করেছি। অর্থনৈতিক উন্নয়ন করেছি, সামাজিক উন্নয়ন করেছি, আমাদের দেশের অর্থনীতি এখন ফাস্টেস্ট গ্রোয়িং ইকোনমি, আমাদের সরকারের পরিশ্রমের কারণে হয়েছে। আজকে ডিজিটাল বিপ্লব হয়েছে।

“আমার বিশ্বাস, এই পরিশ্রমের ফলে মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। কারণ তারা (মানুষ) চায়, এই উন্নয়নের ধারা চলতে থাকুক।”

আওয়ামী লীগ বলছে, জনগণের রায়ে আবার ক্ষমতায় যেতে পারলে দেশ থেকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, সাম্প্রদায়িকতা ও দুর্নীতি নির্মূল করে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনকে সুসংহত করবে। সমাজের সকল পর্যায়ে নারীর প্রতিনিধিত্ব ও ক্ষমতায়নে তারা বদ্ধপরিকর।

আবার কোরান-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন না করার কথাও আছে তাদের ইশতেহারে, যা ধর্মীয় গোষ্ঠীর কাছে তাদের নতি স্বীকার হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই।

মানবাধিকার নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনার প্রেক্ষাপটে ইশতেহারে মানবাধিকার সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে কোনো প্রচেষ্টা প্রতিহত করার অঙ্গীকার করেছে শেখ হাসিনার দল।

আওয়ামী লীগের শাসনামলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র নেই- এই দাবি করে নিজেদের ইশতেহার সাজিয়েছে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

ঐক্যফ্রন্টে বিএনপির সঙ্গে কামাল হোসেনের পাশাপাশি রয়েছেন কাদের সিদ্দিকীও

ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে বলা হয়েছে, “প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বর্ণিত এই নীতির ভিত্তিতে সরকার পরিচালণায় যাবতীয় পদক্ষেপের ভিত্তি হবে রাষ্ট্রের মালিকগণের মালিকানা সুদৃঢ় করা।”

ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে থাকলেও অনুপস্থিত বিএনপির ইশতেহারে, যা ছিল আলোচনার বিষয়।

তার মধ্যেই বিএনপি জোট আশাবাদী, মানুষ ভোট দিতে পারলে তাদেরই জয় হবে।

কামালের ভাষায়, “জনগণ আমাদের পক্ষে ভোট দেবে। কেন? আপনি আমার সঙ্গে রাস্তায় চলেন। মানুষকে বলেন কী চাও? পরিবর্তন- এই শব্দটা তারা জোর গলায় বলে।”

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, “জনগণ যদি ভোট প্রয়োগ করে, ফলাফল ঐক্যফ্রন্টের পক্ষেই থাকবে।”

‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ এবার দুই দলের প্রচারেই ছিল ইন্টারনেটের উপর নির্ভরতা; সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রচারে রুপালি জগতের এক ঝাঁক তারকার নামাও ছিল আলোচিত।

ইসির অভয়

প্রধান দুই দলের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যেই সবার জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।

ভোটের আগের দিন শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “নির্বাচনে সকলের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বস্তরের সদস্যদের নির্দেশ দিচ্ছি। সহিংস ও নাশকতামূলক অবস্থার সৃষ্টি হলে তা কঠোর হাতে দমনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিচ্ছি।”

প্রার্থী, দল, সমর্থক ও ভোটারদের সহনশীল মনোভাব দেখাতে অনুরোধ করেন সিইসি।

তিনি বলেন, “কোনো বাহিনীর নির্লিপ্ততার কারণে বা নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ ব্যাহত হলে সেই কেন্দ্রের দায়িত্বরতদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বড় চ্যালেঞ্জ ইসির সামনে

ভোট ঘিরে নিরাপত্তা বিধানে নেমেছে সেনাবাহিনীও

ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, “কেউ যেন ভয়ভীতি দেখাতে না পারে, বিশৃঙ্খলা না করতে পারে, সে জন্য সেনাসদস্যরা সার্বক্ষণিক টহলের মধ্যে রয়েছে। পাশাপাশি ভোটাররা যেন নিরাপদ অবস্থার মধ্যে থাকেন, সে দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে।”

গত কয়েকদিনে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জেনারেল আজিজ বলেন, “বিগত ৪৭ বছরে এমন পিসফুল পরিবেশ দেখিনি।”

দলীয় সরকারে অধীনে থেকে সব দলগুলোর অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে যখন তার উপর অনাস্থার কথা  বিএনপি সরাসরিই বলেছে।

তবে ভোটের আগে শেষ বক্তব্যে সিইসি বলেছেন, “প্রার্থীর এজেন্টকে নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ করা হচ্ছে, এটা কাম্য নয়। কোনো এজেন্টের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কোনো অভিযোগ না থাকলে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করবে না।”