বৃহস্পতিবারের এই সংঘর্ষে অর্ধশত মোটর সাইকেল ভাংচুর এবং আরও ১০টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েয়ছেন।
আহতদের সোনাতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত সৈয়দ আহমেদ কলেজ স্টেশন, চরপাড়া, হুয়াকুয়া ও পদ্মপাড়ায় এলাকায় চলা ওই সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ২০ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। ওইসব এলাকায় বিজিবি ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে থাকা বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পূর্ব) (সদ্য পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত) আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত হস্তক্ষেপ না করলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারত।
ওই ঘটনায় ১৬ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলাম বিপুল সংখ্যক গাড়ি ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রচারে নেমেছিলেন, যা আচরণ বিধির লংঘন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বগুড়া-১ আসনের (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) বিএনপি মনোনীত প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলাম নির্বাচনী প্রচারের জন্য বৃহস্পতিবার দুপুরে বগুড়া শহরে তার বাড়ি থেকে গাড়ি এবং মোটরসাইকেল বহর নিয়ে সোনাতলা উপজেলার দিকে রওনা হন।
সেখান থেকে বিএনপি প্রার্থী ও তার সমর্থকরা চরপাড়ায় গেলে সেখানেও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই সময় আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাংচুর করা হয়।
আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, এ সময় পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়লে বিএনপি নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি সদস্যরাও তৎপর হয়ে ওঠে। সেখান থেকে বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি জানান, পরে বিএনপি নেতা-কর্মীরা পাশের হুয়াকুয়া এলাকায় গিয়ে সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পুলিশ সেখানেও রাবার বুলেট ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং কয়েকজনকে আটক করে।
“এরপর নির্বাচনী বহর নিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীরা পদ্মপাড়া এলাকায় গেলে পুলিশ বহরের গাড়িগুলো থামিয়ে দেয়। এসময় বহরে থাকা বিএনপি নেতা-কর্মীরা পালিয়ে যায়।”
পুলিশ কর্মকর্তা আরিফুর রহমান মণ্ডল আরও বলেন, বহরে থাকা বেশ কয়েকটি গাড়ি থেকে এ সময় লাঠিসোটা, লোহার রড এবং পাথর উদ্ধার করা হয়েছে।
পরে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলাম সেখান থেকে একা গাড়ি নিয়ে নির্বাচনী প্রচারের জন্য হাটকরমজা এলাকায় যান বলে তিনি জানান।
সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-দপ্তর সম্পাদক অসীম কুমার জৈন অভিযোগ করেন, বিএনপি প্রার্থী লাঠিসোটাসহ নেতাকর্মীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সোনাতলায় ঢোকেন। তারা বেছে বেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়ি ও দোকানে হামলা চালিয়ে তাণ্ডব শুরু করেন।
“বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলায় আওয়ামী লীগ নেতা কমেন্ট মিয়া (৪৫) ও রফিকুল ইসলাম(৪০), ইউনুছ আলীসহ (৪০) তাদেও অন্তত ২৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।”
এ আসনে বিএনপি প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ পুলিশকে জানিয়েই বৃহস্পতিবার নির্বাচনী প্রচারে বের হয়েছিলেন।
তিনি অভিযোগ করেন, “আমি যেখানেই নির্বাচনী প্রচার চালাতে গেছি সেখাইে নৌকা মার্কার নেতাকর্মীরা পরিকল্পিতভাবে আমাদের গাড়িবহরে হামলা চালায়। পুলিশের সামনেই তার বহরের কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং বেশ কয়েকজনকে পিটিয়ে আহত করে আওয়ামী লীগের কর্মীরা।”
বিপুল সংখ্যক গাড়ির বহর নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে নামার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি অল্প সংখ্যক গাড়ি নিয়েই প্রচার শুরু করেছিলাম। কিন্তু পথে পথে নেতা-কর্মীরা বহরে যুক্ত হওয়ার কারণেই সেটি হয়ত বড় হয়ে গেছে।”
বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়তে বাধ্য হয়েছে।