কোথায় কিসের ফিল্ড নেই বুঝি না: সিইসি

নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিয়ে নানামুখী আলোচনায় অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, নিবার্চনের পরিবেশ সুষ্ঠু আছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Dec 2018, 01:08 PM
Updated : 18 Dec 2018, 04:07 PM

মঙ্গলবার নগরীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

একাদশ নির্বাচনে মাঠে থাকা বিএনপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ বিভিন্ন দল ও জোট প্রচারে বাধা দেওয়া, হামলার অভিযোগের পাশাপাশি সবার জন্য ‘সমতল ক্ষেত্র’ নেই বলে আসছে।

সোমবার নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারও একই কথা বলেন।

চট্টগ্রামের অনুষ্ঠানে সিইসি নূরুল হুদা বলেন, “বার বার একটা কথা হয় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। এটার ডেফিনিশন কি? এবারে সাড়ে তিন হাজারের বেশি প্রার্থী আবেদন করেছেন।

“বিরোধী বা সরকার দলে যারা আছেন, তারা মিছিল-মিটিং করেন, সভা করেন, মাইক ব্যবহার করেন, পোস্টার ছাপান, বিতরণ করেন। কেউ কি কখনো বাধা দিয়েছেন? তাই যদি না হয়, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই তা বলার অবকাশ নেই। কোথায় কিসের ফিল্ড নেই আমি বুঝি না।”

তিনি বলেন, “এবারে রেকর্ড সংখ্যক তিন হাজার ৬০০ প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আবেদন করেছিলেন। যাচাই-বাছাইয়ের পর এখন ১৮৪৬ জন প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন। তার মানে প্রতিটি কেন্দ্রে গড়ে ছয়জন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মানে হল নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু রয়েছে।”

এর আগে সকালে রাঙামাটিতে এক অনুষ্ঠানে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিয়ে মাহবুব তালুকদারের বক্তব্যকে ‘ব্যক্তিগত ও অসত্য’ বলেন সিইসি।  

নূরুল হুদা সব প্রার্থীর সমর্থক বা সংশ্লিষ্টদের শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায়, একে অপরের প্রতি সম্মান ধৈর্য রেখে প্রচার চালানোর আহ্বান জানান।

মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে সিইসি বলেন, “আপনাদের প্রস্তুতির কারণে, তফসিল ঘোষণার আগ থেকে নির্বাচনের পরিবেশ বা আবহ সৃষ্টি করে কাজ করে যাচ্ছেন।

“নির্বাচনের মূল দায়িত্ব আপনাদের কাছে অর্পণ করেছি। নির্বাচন কমিশনের হাতে নীতিগত কিছু সিদ্ধান্ত দেওয়া ছাড়া মাঠ পর্যায়ে কিভাবে কি হবে তা সম্পূর্ণ আপনাদের ওপর নির্ভর করবে।”

নির্বাচন খেলার মতো প্রতিযোগিতা উল্লেখ করে নূরুল হুদা বলেন, “দুইপক্ষ সেখানে খেলতে নামে। একপক্ষ জয়ী হয়, অপরপক্ষ হারবে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী একে অপরের আত্মীয় স্বজন, একে অপরের বন্ধু বান্ধব, পরিচিত ব্যক্তি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেন কোনো ধরনের শত্রুতার সৃষ্টি না হয় সে অনুরোধ করব।

তিনি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে সবার প্রতি সমান আচরণ করে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানান। 

রোহিঙ্গা ক্যাম্প সিল করার নির্দেশনা

ভোটের দিন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো সিল করে দেওয়ার কথা বলেছেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

সভায় তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা টাকার বিনিময়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে।

এজন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্প সিল করে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেন তিনি।

বিভাগের বিভিন্ন আসনে নির্বাচনী পরিবেশ যাতে শান্ত থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ইউনিয়ন, উপজেলা পর্যায়ের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন শেষ করতে হবে।

উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে এবং নির্বাচন কমিশনকে ব্রিবত করতে পরে তেমন সংবাদ পরিবেশন না করার অনুরোধ জানান নির্বাচন কমিশন সচিব।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নানের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন, নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, চট্টগ্রাম অঞ্চলের সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামসুজ্জামান, বিজিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আদিল চৌধুরী, চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের প্রধান রিয়ার এডমিরাল এম আবু আশরাফ, সেনাবাহিনীল ২০১ পদাতিক ব্রিগেডের অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রশিদ, রামু রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আইনুল পাঠান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি গোলাম ফারুক, সিএমপি কমিশনার মাহবুবর রহমান।

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ মাঠ পর্যায়ের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।