পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখতে ব্যবস্থা নিন: আইজিপিকে সিইসি

ভোটের আগে গত কয়েকদিনের সহিংসতার প্রেক্ষাপটে পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রধানকে বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2018, 04:27 PM
Updated : 17 Dec 2018, 05:45 PM

সোমবার বিকালে আইজিপি মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর সঙ্গে বৈঠকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচার শুরুর পর গত ১০ ডিসেম্বর থেকে এই পর্যন্ত দুজন নিহত হয়েছেন, এছাড়া বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ প্রায় প্রতিদিনই হচ্ছে।

এর মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি সোমবার ইসিতে নানা অভিযোগ জানিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ প্রধানকে ডেকে আনেন সিইসি।

আইজিপির সঙ্গে ঢাকার পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া ও রিটার্নিং কর্মকর্তাও ছিলেন। তাদের কাছে সার্বিক পরিস্থিতি জানতে চান সিইসি।

ইসি সচিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সিইসি বলেছেন, বিভিন্ন এলাকায় আনরেস্ট দেখা যাচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন সঠিক থাকে, শান্তিপূর্ণ থাকে, সেজন্য নির্দেশনা দিয়েছেন সিইসি। প্রার্থীরা যেন প্রচার চালাতে পারেন, এমন ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”

টাঙ্গাইলে ভাংচুরের শিকার স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর গাড়ি

মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ঐক্যফ্রন্ট নেতা কামাল হোসেনের গাড়িবহরে হামলার বিষয়ে প্রতিবেদন দিতেও পুলিশ প্রধানের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

হেলালুদ্দীন বলেন, “আমরা আইজিপিকে ইতোমধ্যে চিঠি দিয়েছি; তিন দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্যে বলেছি।”

ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর আইজিপিকে নির্বাচন ভবনে দেখা গেলেও ইসি সচিব বলেছেন, জাবেদ পাটোয়ারীর সঙ্গে সিইসির এই বৈঠক পূর্ব নির্ধারিত।

পুলিশের বিরুদ্ধে ইসিতে অবিরত অভিযোগ করে যাচ্ছে বিএনপি।

সিইসির কাছে সোমবার লেখা চিঠিতে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, “পুলিশি আচরণ, বিনা কারণে গ্রেপ্তার, হয়রানি ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের চিত্র পুনরায় উল্লেখ করা হল। জরুরি ভিত্তিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে ও আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি।”

আট পৃষ্ঠার চিঠিতে ঢাকা মহানগর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, জামালপুর, ঝিনাইদহ, ভোলা, চট্টগ্রাম, শেরপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোণা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ময়মনসিংহ, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, যশোর, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, ঝিনাইদহ, নরসিংদী, নাটোর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, জয়পুরহাট, মেহেরপুর, রংপুর, পাবনা, কিশোরগঞ্জ, সাতক্ষীরা, ফেনী, সিরাজগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলায় পুলিশি হয়রানির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়েও চিঠি

বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খানের ১৫ ডিসেম্বরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ প্রধানকে চিঠি দিয়েছে ইসি।

ঢাকা-৯, নোয়াখালী-১, চট্টগ্রাম-৯, পটুয়াখালী-৩সহ বেশ কয়েকটি নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীরা হামলার শিকার হয়েছেন বলে কমিশনকে জানিয়েছিল বিএনপি।

নোয়াখালীতে আহত বিএনপির প্রার্থী মাহবুবউদ্দিন খোকন

সোমবার ইসির একজন উপ সচিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, যেসব অভিযোগ কমিশন পাচ্ছে, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারদের কাছে পাঠানো হচ্ছে। তা পুলিশ সদর দপ্তরে জানানো হচ্ছে।

“সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারদের জন নিরাপত্তা বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হচ্ছে। প্রার্থীদের বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন তারা।”

বিএনপি নেতা-কর্মীদের যাতে অহেতুক হয়রানি, গ্রেপ্তার না করা হয়, সেজন্য আবারও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন সিইসি।

যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা নেই, তাদেরকে যেন অহেতুক হয়রানি না করা হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেনও জানান তিনি।

“আইজিপি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেব। আগেও বলেছি নিষ্প্রয়োজনে কাউকে গ্রেপ্তার না করে। যারা নেতা রয়েছেন, তাদের যদি কোনো ফৌজদারি অপরাধ না থাকে যেন অহেতুক হয়রানি না করে।”