দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ আগামীর লক্ষ্য: শেখ হাসিনা

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে বাংলাদেশ পাঁচবার ‘শীর্ষ দুর্নীতির দেশ’ হওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতির সেই বিস্তারে লাগাম টেনেছেন তিনি, আগামীতে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়াই তার লক্ষ্য।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Dec 2018, 10:18 AM
Updated : 13 Dec 2018, 10:30 AM

দুর্নীতির পাশাপাশি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বাংলাদেশ থেকে নির্মূল করার প্রত্যয় জানিয়েছেন তিনি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার ফরিদপুরে এক সভায় এই অঙ্গীকার করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, যিনি টানা তৃতীয় দফায় সরকার গঠনের লক্ষ্যে ভোটের লড়াইয়ে আছেন।

সকালে ফরিদপুরের কোমরপুরে আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউশনে শেখ হাসিনা ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে পরিচয় করিয়ে দেন।  

বক্তব্যে বিএনপির শাসনামলের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, “২০০১ থেকে ২০০৬… বাংলাদেশ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সে সময় ক্ষমতায় থাকা বিএনপি-জামাত দুর্নীতিকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছিল। বাংলা ভাই...সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি মানুষের মাঝে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। ইমারজেন্সিও জারি হয়েছিল তাদের দুর্নীতি-অপকর্মের কারণে।”

ফরিদপুরে শেখ হাসিনার জনসভায় উপস্থিতির একাংশ, ছবি-ইয়াসিন কবির জয়

বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী নেতৃত্বাধীন জোট সরকার আমলে কয়েক বছর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির ‘ধারণা সূচকে’ শীর্ষ দেশ হয় বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে
হয়েছে বাংলাদেশের।

এই প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দুর্নীতি কমিয়ে এনেছে।

“আজকে বাংলাদেশে দুর্নীতি কমে গেছে এবং সেই স্বীকৃতি আমরা পেয়েছি। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়া আগামী দিনের লক্ষ্য।”

শেখ হাসিনা এ সময় নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে বলেন, “আমার সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আপনাদের। আমরা আর অন্ধকার যুগে ফিরে যেতে চাই না। আমরা আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছি, এটা যেন অবহ্যাত থাকে।”

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় জনগণের সমর্থন প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, “উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় থাকা দরকার। উন্নয়নের মহাসড়কে গতি যেন চলমান থাকে, সেটাই আমাদের আকাঙ্ক্ষা। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।”

আওয়ামী লীগের শাসনামলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ খাতে নানা অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

ফরিদপুরবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, “অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করি। ২০০৮ এ নির্বাচন হয়, বাংলাদেশের মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দেয়। নৌকা মার্কায় ভোট দিলে যে জনগণের উন্নতি হয়, অন্তত ফরিদপুরবাসী আপনারা সেটা উপলব্ধি করেছেন।”

২০৪১ সালের মধ্যে ‘উন্নত বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের কথা জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে, অব্যাহত থাকবে।”

ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে পরিচয় করিয়ে দেন শেখ হাসিনা, ছবি-ইয়াসিন কবির জয়

আওয়ামী লীগ তরুণ প্রজন্মের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করবে বলেও সমাবেশে প্রতিশ্রুতি দেন শেখ হাসিনা।

এর বিপরীতে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর শাসনামলের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি-জামাত জোটের মন্ত্রীরা, এমপিরা ক্ষমতায় ছিল। তারা মানুষজনের উন্নয়ন করে নাই। তারা লুটপাটে ব্যস্ত ছিল, দুর্নীতিতে ব্যস্ত ছিল। মানুষ খুন করতে ব্যস্ত ছিল। তারা জানে খুন করতে, তারা জানে মানুষ হত্যা করতে, তারা জানে লুটপাট।”

দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এতিমের সম্পদ কেড়ে নিলে কোরআন শরীফেও লেখা আছে তাকে শাস্তি পেতে হবে। আর সেই বিএনপি নেত্রী এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে আজকে কারাগারে। এতিমখানার টাকা যদি কেউ মেরে দেয়, তার জন্য মামলা করে শাস্তি পায়, তার থেকে লজ্জা, ঘৃণা আর কী আছে?

“দুই হাতে লুটপাট করে সম্পদ কেড়ে নিয়েছে। দেশের মানুষকে তারা কিছু দিয়ে যায় নাই।”

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিট্যাবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে খালেদা জিয়া এখন কারাগারে বন্দী। দুই বছরের বেশি সাজা হওয়ায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারছেন না তিনি।

২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচন প্রতিহত এবং ওই নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে বিএনপির আন্দোলনে নাশকতায় মানুষের প্রাণহানির প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “চিন্তা করতে পারেন, একটা মানুষ কীভাবে আগুন দিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারতে পারে? তারা কত মায়ের কোল খালি করেছে! সরকারি সম্পত্তি, আধা সরকারি সম্পত্তি, হাজার হাজার বাসে আগুন দিয়েছে। মানুষ পুড়ানো আর মানুষ হত্যা করা- এছাড়া তারা আর কিছু করতে পারে না।”

টুঙ্গীপাড়া থেকে ঢাকায় ফেরার পথে শেখ হাসিনা যেসব জায়গায় নির্বাচনী সভা করছেন, সেখানেই সমবেত হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ, ছবি-ইয়াসিন কবির জয়

বুধবার ঢাকা থেকে নিজের নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন শেখ হাসিনা।

বিকালে কোটালীপাড়া উপজেলা সদরে শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজমাঠে নিজের প্রথম নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, অগ্নিসংযোগকারী ও তাদের দোসরদের ভোটের মাধ্যমে উপযুক্ত জবাব দেওয়ার আহ্বান জানান ভোটারদের কাছে।

বৃহস্পতির সকালে টুঙ্গীপাড়া থেকে রওনা হয়ে বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী সভা করে করে সড়কপথে ঢাকার দিকে এগোচ্ছেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতারাও তার সঙ্গে রয়েছেন।

শেখ হাসিনার যাত্রাপথে বাজার ও সড়কে অসংখ্য মানুষ নৌকা মার্কার ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, পোস্টার হাতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। তারা নৌকা মার্কা ও আওয়ামী লীগের পক্ষে স্লোগান দিচ্ছেন। জনসমাগমস্থলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাড়ির গতি কমিয়ে নেতা-কর্মী, সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। কোথাও কোথাও হাতে মাইক নিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, বাহাউদ্দিন নাছিম ও নৌকার প্রার্থী কাজী জাফরউল্লাহ ভাঙ্গা মোড়ের পথসভায় উপস্থিত ছিলেন।

ফরিদপুর মোড়ের পর রাজবাড়ী মোড়, আরোয়া ইউনিয়ন, পাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ পৌরসভা, রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণ (ধামরাই) ও সাভারের জালেশ্বর মৌজার ৫ নম্বর ওয়ার্ডেও নির্বাচনী পথসভায় বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার।